06/05/2025
🇺🇸 স্বপ্নের দেশ, কঠিন বাস্তবতা:
আমেরিকা-একটা নাম, একটা স্বপ্ন, একটা আশা, একটা নতুন জীবনের প্রত্যাশা। আমাদের মধ্যে অনেকেই পরিবার ছেড়ে, ভালো ভবিষ্যৎ এবং সম্মানের জীবন গড়তে পাড়ি জমাই এই ভিনদেশে।
এই দেশে আসা মানে শুধুই বড় চাকরি বা আকাশছোঁয়া সাফল্য নয়, বরং প্রতিদিনের নিরব লড়াই, চোখের কোণে জমে থাকা কান্না, আর একরাশ নীরব ত্যাগের মধ্যে দিয়েই বছরের পর বছর পার করতে হয়।
অনেকে ভাবে, আমেরিকায় গেলেই জীবন ফুলেফেঁপে উঠবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে সকালের সূর্য উঠা মানেই ছুটে চলা। কারো দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়, কারো রাত শেষ হয় সকাল ৭টায়।
কারো হাতে হ্যামার, কেউ দিনভর দোকানে কাজ করে, কেউ রেস্টুরেন্টে থালা ধোয়, কেউ হাসপাতালের করিডোরে হুইলচেয়ার ঠেলে, কেউ বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডায় কন্সট্রাকশনের কাজ করে, কারো হাতে মেকআপ ব্রাশ, কেউবা উবার চালান, কেউ ওয়ারহাউস-এ বাক্স তোলেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার কেউ রাত ১১টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত শিফটে কাজ করে, যখন গোটা শহর ঘুমিয়ে থাকে। আর এসবের মাঝখানে কোথাও হারিয়ে যায় "আমি" নামক মানুষটা। তবুও সবার গল্প এক কাজ, কাজ আর কাজ।
ছুটি? তা যেন ক্যালেন্ডারে লেখা একটা শব্দ, বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই। নিজের সন্তান যখন ঘুম থেকে ওঠে, বাবা তখন কাজে বেরিয়ে যায়। যখন বাবা ঘরে ফেরে, সন্তান তখন ঘুমিয়ে পড়ে।
এ জীবনে ঈদ আসে কাজের ইউনিফর্ম পরে, নববর্ষ আসে নাইট শিফট শেষ করে বাসে ঘুমিয়ে ফিরতে ফিরতে। জীবনের আনন্দগুলো যেন ব্যাঙ্কে অটোমেটেড ডিপোজিট হওয়া টাকার মতো, দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না।
তুমি কেমন আছো? এই প্রশ্নটা ব্যস্ততার কারণে কেউ তেমন একটা করে না। আর করলেও, উত্তরটা সবসময় একই: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি, কাজ করছি।
এখানে কষ্টটা অনেকটাই নিঃশব্দ। কে কাঁদছে রাতে? কে একা খায়? কে নিজের দেশের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কিংবা পরিবারের সদস্যদের শেষ বিদায় জানাতে ও যেতে পারেনি, এসব কেউ জানে না, খবর ও রাখে না। সবাই ব্যস্ত, সবাই ছুটছে।
তবে এত সংগ্রামের মাঝেও আমরা স্বপ্ন দেখি, সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন, একদিন হয়তো দেশে ফিরবো, একদিন ফিরে গিয়ে নিজের গ্রামে দাঁড়িয়ে বলার স্বপ্ন-আমি পেরেছি।
এই গল্প শুধু একজনের না, হাজারো অভিবাসীর। যারা হাসে, অথচ চোখের কোণে লুকিয়ে রাখে শত প্রশ্ন।প্রবাস মানেই কেবল ডলার না, প্রবাস মানেই প্রতিদিনের ত্যাগ আর অবিরাম যুদ্ধ।আমরা শুধু স্বপ্ন খুঁজি না, আমরা বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করি। আর সেই যুদ্ধে প্রতিটি প্রবাসীই এক একজন নিরব বীর, সেটা আমেরিকা হোক কিংবা পাশের কোন দেশই হোক।
বিঃদ্রঃ: এই লিখাটি প্রত্যেক প্রবাসীদেরকে উৎসর্গ করলাম।