
09/09/2025
ডাকসু নির্বাচনে এ কেমন নির্লজ্জতা!
-ড. জাফর ইকবাল
আমি রাজনীতি ঠিক বুঝি না। সত্যি বলছি। দেশের রাজনীতি আমার কাছে ভীষণ জটিল মনে হয়। আমি গণিতের জটিল সূত্র বের করতে পারি, কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ বুঝতে পারি না।
আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। সকাল থেকে খবর রাখছি। কিন্তু যত খবর পাচ্ছি, ততই মর্মাহত হচ্ছি। বুকের ভেতর থেকে একটা কষ্ট পাক খেয়ে গলার কাছে এসে থমকে আছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিদায়ের এক বছর হতে চলল। সময় খুব বেশি নয়। অথচ এই ক’মাসেই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই প্রাণবন্ত তরুণের দল? কোথায় আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া? কোথায় সেই হেলমেট, লাঠি, রড, ইটপাটকেল আর আগ্নেয়াস্ত্র? কোথায় সেই আগুনে উত্তাল ক্যাম্পাস! এ কেমন নির্বাচন যেখানে ভোটকেন্দ্র দখল হচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে না, এমনকি সাংবাদিকরাও দৌড়ে পালাচ্ছে না!
আমি ভেবেছিলাম সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে অন্তত কয়েকটা স্ট্রেচার ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ছুটে যাবে। অথচ কিছুই হয়নি। এখন পর্যন্ত একজন আহতও উপহার দিতে পারেনি ছাত্রদের দলগুলি আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কী লজ্জার কথা, কী সীমাহীন ব্যর্থতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে যদি এমন নিরুত্তাপ ভোট হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী শিখবে? এভাবে কি গণতন্ত্র রক্ষা হয়? আমি আশা করেছিলাম এসবের প্রতিবাদে অন্তত কেউ একজন অনশনের ডাক দেবে। তারপর খুব মন খারাপ করে ভেবেছি, আমি না থাকলে অনশন ভাঙাবে কে? অনশন তো শুধু ক্ষুধার কষ্ট নয়। অনশনের পর ডাবের পানি আর ভাত খাওয়ানোরও একটা মহিমান্বিত আয়োজন থাকে। সেটি না হলে অনশনের প্রকৃত তাৎপর্যই মাটি হয়ে যায়।
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমার আর কোনো আগ্রহ নেই। যে নির্বাচন শেষে আমি ফেসবুকে ঢুকে মন ভরে “থ্যাঙ্ক ইউ পিএম” লিখে পোস্ট দিতে পারব না, সে নির্বাচন আমার কাছে অচেনা, নির্জীব আর অর্থহীন।
আমি রাজনীতি ঠিক বুঝি না। কিন্তু এতটুকু বুঝি, এমন নির্বাচনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আমার দায়িত্ব। তাই শাহরিয়ার কবিরের বাড়ি থেকে দুটি মোমবাতি চেয়ে এনেছি। সন্ধ্যা নামলে প্রজ্বালন করব।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক 24 (The New York 24 | Real News, Twisted Truths)-এর জন্য লিখেছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।