25/07/2025
যখন আল্লাহর রাসূল ﷺ ও তাঁর সহচরগণ টানা তিনটি বছর চরম অনাহার ও অবরোধে কাটাচ্ছিলেন—কুরাইশের মুশরিকরা যেভাবে তাঁদের বনী হাশিম উপত্যকায় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল—তখন এক মুশরিক, জুহাইর ইবনু আবি উমাইয়াই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি এই বর্বর অবরোধ ভাঙার উদ্যোগ নেন।
তিনি কাবা শরীফের সাতবার তাওয়াফ করে কুরাইশের নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে বলে উঠেছিলেন:
‘আমরা কি ভরপেট খেতে থাকব, রেশমি কাপড় পরব, অথচ হাশিমের সন্তানরা—রাসূল ﷺ ও তাঁর অনুসারীরা—ক্ষুধায় কাতর থাকবে? আল্লাহর কসম! যতক্ষণ এই জুলুমপূর্ণ ও অবিচারী অবরোধ তুলে না নেওয়া হয়, আমি চুপচাপ বসে থাকব না।’
এই দৃশ্য প্রমাণ করেছিল—ইসলামের শত্রুদের মধ্যেও কেউ কেউ অন্যায় ও অবিচার চিনতো এবং তার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াতে সাহস করতো।
আজ, সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে গাজায়। মুসলিম উম্মাহর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ—যারা আমাদেরই মতো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, শাহাদাহে বিশ্বাস করে—তারা আজ নিষ্ঠুর অবরোধ, অবিরাম বোমাবর্ষণ ও পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষের শিকার। গোটা বিশ্ব নিরব; কেউ তাদের অবরোধ ভাঙে না, কেউ তাদের জন্য খাদ্যের একটুকরো অন্নও এগিয়ে দেয় না। আজকের যালিমদের হৃদয়ে না আছে ইসলামী বিবেক, না আছে জাহেলিয়াতের সেই সামান্য মানবতাবোধ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি পেট ভরে আহার করে, অথচ তার পাশের প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে—সে মুমিন নয়।”
(হাদীসটি সহীহ, বর্ণিত হয়েছে হাকিম প্রমুখের মাধ্যমে)
তাহলে বলো—একটি গোটা জাতিকে পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রেখে, তাদের আহাজারি উপেক্ষা করে, কেউ যদি নিজে তৃপ্তিতে জীবন যাপন করে—সে কেমন মুসলমান?
আর সেইসব তথাকথিত মুসলিম—যারা ট্রাম্পের মতো ইসলামের শত্রুদের ভোট দিয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার ফাঁপা গণতন্ত্রের প্রেমে বিভোর—তারা এ জুলুমের শরিক নয় কি? আমেরিকা—যাকে তারা আপন করে ভালোবাসে—তাদের প্রকৃত রূপ হলো: শিশুদের ক্ষুধার মাধ্যমে হত্যা করা, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। যাদের পতাকা তারা উত্তোলন করে, যাদের প্রেমে তারা মাতোয়ারা, সেই পতাকা ও সেই প্রেম একদিন তাদের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জার কারণ হয়ে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র—শুধু মুসলমানদের উপর বোমা বর্ষণ করেই নয়, বরং ধীরে ধীরে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা বঞ্চিত করে শিশু, নারী ও পুরুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে। এটা কোনো খাদ্যসংকট নয়—এটা পরিকল্পিত গণহত্যা, যা ঘটানো হচ্ছে নিষ্ঠুর অবরোধ ও বঞ্চনার মাধ্যমে।
আর মুরজিয়া নামধারী বিভ্রান্ত ফির্কার অনুসারীরা—কিবলার ইহুদিরা—যাদের নেতারা গাজার সীমান্তের নিকটে বাস করে, অথচ তাগুতদের হাতে জিযিয়া দিচ্ছে, যারা এই গণহত্যার মূল চক্রকে ক্ষমতা দিয়ে যাচ্ছে—তাদের লজ্জাও কিছু কম নয়। তারা তাগুতদের রক্ষা করে, অথচ মুসলমানদের হত্যা দেখে চুপ থাকে। এটি ফের প্রমাণ করে—মুরজিয়া আক্বীদা কতটা বিকৃত ও আত্মবিক্রিত, যারা মুসলিমদের রক্তের চেয়ে তাগুতের রাজসিংহাসনকে বেশি মূল্যায়ন করে।
যারা নিজের জীবন ও সম্পদ বিলিয়ে তাগুতদের রক্ষায় ব্যস্ত, যারা গাজার শিশুদের খাদ্য দেওয়াতো দূরে থাক, দোয়াও করে না—তাদের মধ্যে নেই কোনো সম্মান, নেই কোনো ঈমানি গর্ব। তারা লাঞ্ছিত, পদদলিত, দ্বীনের দৃষ্টিতে অপমানিত।
তাদের মুখে গাজার জন্য কাঁদার বুলি, অথচ অন্তরে ও আচরণে পশ্চিমা গণতন্ত্র, আমেরিকা ও আরব তাগুতদের প্রতি ভালোবাসা—এ এক ঘৃণ্য ভণ্ডামি। তাদের কথা ফাঁপা, তাদের আহ্বান প্রতারণামূলক।
হে আল্লাহ! গোটা দুনিয়া গাজার মুসলমানদের ফেলে দিয়েছে! তারা অনাহারে কাতর, বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত, একাকী ও নিরস্ত্র!
তুমি তাদের খাওয়াও, তুমি তাদের রক্ষা করো,
তুমি তাদের যালিমদের ধ্বংস করো!
তুমিই তাদের একমাত্র অভিভাবক, সাহায্যকারী ও রক্ষাকর্তা!
— শাইখ আহমদ মূসা জিবরীল حفظه الله
২৮ মুহাররম, ১৪৪৭ হিজরী