03/31/2024
সমসাময়িক দুটি Paul Joseph Goebbelsian মিথ্যাচারিতার প্রতিবাদেঃ-
(১) নবাব সলিমুল্লাহ নাকি ৬০০ একর জমি দান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল এবং বুয়েটকে।
এই কথাটা ব্যাপক ভাবে প্রচার চালাচ্ছে বাঙ্গু বকরীকূল।
আচ্ছা,এই দানের কোন ডকুমেন্ট কেউ দেখাতে পারবেন?
দান করার আগে এই সকল জমির মালিকানা কি নবাব সলিমুল্লাহর ছিল?? তিনি কার জমি দান করলেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২১ সালে, নবাব সলিমুল্লাহ মারা যান ১৯১৫ সালে। তাহলে উনি কি কবর থেকে উঠে এসে জমি দান করেছেন??
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশের জমি দান করেছেন জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে কিশোরিলাল রায়, আর বাকীটা খাস জমি।
কিশোরিলালের পিতার নামেই আজকের জগন্নাথ হল।
শুধু ঢাবিই নয়, আজকের বুয়েট,মেডিকেল কলেজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরা যায়গাই কিশোরিলাল রায়ের দান করা।
সত্য অস্বিকার করা সততা নয়।
এ বিষয়ক আরো কিছু তথ্য নীচে তুলে ধরলামঃ
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলছেন-- এই তথ্য মোটেও ঠিক নয়। রমনার যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটি পুরোটাই ছিল খাস জমি। নবাব পরিবারের জমি এমনিতেই তেমন বেশি ছিল না। তারা জমি দেবে কোত্থেকে? কেউ ইন্টারেস্টেড হলে ঢাকা কালেক্টরেটে গিয়ে যাচাই করে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক রাজ্জাক।
এমনকি 'সলিমুল্লাহ মুসলিম হল' প্রতিষ্ঠাতেও নবাব পরিবারের বিন্দুমাত্র আর্থিক অবদান নেই। রাজ্জাক সাহেবের ভাষায়-- 'আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী লেখাপড়ায় ব্রিলিয়ান্ট ছিল। এরা আহসান মঞ্জিলের টাকায় লেখাপড়া করেছে। এরা সলিমুল্লাহ-র মৃত্যুবার্ষিকী পালন করত। ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার প্রায় দশ বছর পরে তার একটা মৃত্যুবার্ষিকীতে তার নামে একটি ছাত্রাবাস করার প্রস্তাব এরা করেন। মুসলিম ছেলেদের জন্য হল তখন তৈরি হয়ে গেছে। আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী বললেন: এই হলকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল করা হোক।' সেই প্রস্তাব মেনেই হলের নামকরণ।
[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা।]
সংযুক্তি: যারা এই তথ্য বিশ্বাস করবেন না, তাদেরকে আমিও অধ্যাপক রাজ্জাক-এর মতো পরামর্শ দিই-- ঢাকা কালেক্টরেটে গিয়ে ভেরিফাই করে আসতে পারেন।
(২)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন মৌলানা আকরাম খাঁসহ অনেক মুসলমান ব্যক্তি। এই বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান ও পূর্ব বঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের মুসলমান।
এক.
পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই.
পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে।
পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।
মৌলানা আকরাম খাঁ (৭ জুন ১৮৬৮ - ১৮ আগস্ট ১৯৬৮) ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকএবং মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক ছিলেন।
মৌলানা আকরাম খাঁ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দানের ক্ষেত্রে অর্থের ব্যবস্থা করবেন না। মুসলমানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অপেক্ষা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি গুরুত্ত্ব আরোপ করেন।
আবদুর রসুল (১০ এপ্রিল ১৮৭২ - ৩১ জুলাই ১৯১৭) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, আইনজীবী।
ব্যারিস্টার আবদুর রসুল আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানদের পক্ষে 'বিলাসিতা' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার মতে কয়েকজন ভাগ্যবানের জন্য অর্থ ব্যয় না করে বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা ব্যয় করা উচিৎ। মুসলমানদের মতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান, ফলে বাংলার মুসলমানদের বিশেষ কিছু লাভ হবে না। বরং গরীব অথবা যোগ্য মুসলমান ছাত্রদের বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা এবং দু-একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ স্থাপন ইত্যাদি করলে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার সম্ভব হবে।
চবিবশ পরগণার জেলা মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন ১৯১২-র ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে। বলা হয়, এর ফলে সমগ্র প্রদেশের মুসলমানদের শিক্ষাগত স্বার্থে পক্ষপাতদুষ্ট প্রভাব পড়বে এবং তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি করবে। (সূত্র : দি মুসলিম পত্রিকা)।
মৌলানা মুহাম্মদ আলী কলকাতার দি কমরেড পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটির তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি লেখেন, পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের জন্য যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়েছে, সেই দাবি পূর্ববঙ্গের মুসলমান নেতাদের প্রত্যাহার করা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি আঞ্চলিক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে আলিগড়ে প্রস্তাবিত সর্বভারতীয় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিই বেশি যুক্তিসঙ্গত। প্রয়োজনে ঢাকায় পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি করা যেতে পারে। সে-কলেজটিও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। মৌলানা মুহাম্মদ আলী আশ্বস্ত করেন যে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের সকল মুসলমানদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন--
'কোন মুসলমান ধনীর কাছ থেকেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডাইরেক্টলি কোন ফাইনেন্সিয়াল কনট্রিবিউশন পায় নাই।
কথা ছিল গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া ঢাকা ইউনিভার্সিটি করবে। সেই জন্য ১৯১০ থেকে কিছু টাকা ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট আলাদা করে রাখত। ১৯২০-২১-এ এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ লক্ষ। কিন্তু এই ৬০ লক্ষ টাকা বেঙ্গল গভর্নমেন্ট ডিড নট গিভ টু দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি। তারা সে টাকাটা পুরো নিয়ে নিল । সলিমুল্লাহ হল যে তৈরি হলো তা পুরোই সরকারের টাকায়। নওয়াব পরিবারের টাকায় নয়; নওয়াব পরিবারের জায়গাতেও নয়। রমনার যে জায়গায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি-এর পুরাই খাসমহল, সরকারের জমি। সেটলমেন্ট রিপোর্ট-এ তাই আছে। বরঞ্চ লাখেরাজ সম্পত্তি বললে রমনা কালীবাড়িকে বলা যায়। ঢাকা শহরে লাখেরাজ সম্পত্তি কি এ নিয়ে আলোচনা চলেছে ১৮১৫ কি ১৮২০ সাল থেকে। ঢাকার নওয়াবদের জমিজমা এসেছে প্রধানত একটি সূত্র থেকে।
ঢাকার স্থানীয় মুসলমানরা মৃত্যুর সময়ে কোন কোন সম্পত্তি নওয়াব আবদুল গনি ও আহসানউল্লাহকে ওয়াকফ করে দিয়ে যেত। ঢাকার নওয়াবদের জমির উৎস এই । তাও বেশিকিছু জায়গা জমি নয়। এটার ভেরিফিকেশন তো সোজা। যে কেউ ইন্টারেস্টেড, সে ঢাকা কালেক্টরেটে যেয়ে দেখে আসতে পারেন। কাজেই নওয়াব পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি দিবে, এমন জমি কোথায় ছিল ? আহসান মঞ্জিলের কোন জমি ছিল না।'
Kuluda Roy. to মাহবুব সোহেল