11/08/2025
ছোট বেলায় বিয়ের থেকে মামা-খালা- প্রতিবেশীদের হলুদ ছোঁয়ার জন্য বেশি আগ্রহে থাকতাম। বিয়ের আগের দিন ঘরের মধ্যে গাদাগাদী করে প্রিয় পরিবার আর বন্ধুদের নিয়ে বর/কনে খাটের মাঝে তোয়ালে বিছিয়ে বসতো; একে একে সবাই পাশে বসে মুরগির রোস্টের মেরিনেসনের মতো হলুদ লেপটে দিতো; কেউ কেউ হাতে গোল গোল করে মেহেদি দিয়ে দিতো। বর/ কনে ছোট মিষ্টি আর আঙুর খেতে খেতে বমি করে দেয়ার জোর হতো। মা-খালারা পাশে বসে গান বাধতো; ঘরের মধ্যে ছোট জায়গায় বাচ্চারা নাচ করতো। এ ঘর- সে ঘর মিলিয়ে কত মানুষ। সবার কি আনন্দ, বিয়ের মতো জীবনে বড় ট্রানজিশন আর দ্বিতীয়টি নেই , দুটো মানুষ; দুটো পরিবার সারা জীবনের জন্য এক হয়ে যাবে; সুখে-দুঃখে, বেদনায়, হাসি-কান্নায় সারাটা জনম ধরে এক রাস্তায় হাটবে- এর থেকে বড় পরিবর্তন দ্বিতীয়টি নেই মানুষের জীবনে । সন্তান আসবে, বড় হবে তাদেরও বিয়ে হবে , তার বাঁধবে তাদের ঘর কিন্তু এই যে বিয়ের বন্ধনে বাধা মানুষগুলো মরণ পর্যন্ত একজন একজনের সাথে থেকে যাবে ।
যাই হোক, আমার কাছে এই হলুদ-মেহেদী যে যেটাই বলে না কেনো তার ঘরওয়া উৎযাপনের যে আনন্দ তার দ্বিতীয় কোনো অল্টারনেট নাই । মা-নানি পিঠা বানায়; গান ধরে; বোনেরা হাত রাঙায় মেহেদীতে, নেচে গেয়ে জীবনের বড় পরিবর্তনে আনন্দে গ্রহণ করে আপন মানুষের সমাগমে। আমার জীবনের ছোট বেলার সব হলুদের অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে ফারহানা খালামনির হলুদ সন্ধ্যা সবচেয়ে প্রিয়। কোনো পূর্ব পরিকল্পনা নাই; আসিফ মামা আর খালামনির বন্ধুরা হুট করেই প্ল্যান করলো আজকে হলুদ সন্ধ্যা; নানু বিশাল এক ডেকচি গরু ভুনা করলো আলু দিয়ে, সাথে পরোটা আর সাদা ভাত । খালামনিকে আলমারি থেকে হলুদ শাড়ি পরিয়ে আর মিরপুর দশ নম্বরের ফুলের দোকানের গাদা ফুলের মালা দিয়ে মাথায় মুকুট আর গলায় মালা দিয়ে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে হলুদ মাখলাম, সব ভাই বোন ভাগিনা ভাগ্নি ঘরে জড়ো হলো সাথে হাসি-গল্প-গান । দাঁড়ানোর তিল পরিমাণ জায়গা নাই; আসিফ মামার ডেস্কটপে সিডিতে গান ছেড়ে দিলো আর সবাই জায়গায় দাড়িয়ে হাত ছোটাছুটি; আর নানুর সেই মজার লাল লাল গরুভুনা আর পরোটা , আহ! 😭❤️
নিনা খালামনি, কচি মামারা সরকারি কোয়ার্টারে থাকতো ওনাদের হলুদে আমি ছোটবেলার ভাঙা ভাঙা হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিয়েছি, নিনা খালামনির হলুদে তো হালকা পাতলা মেক আপ করে দিয়েছি! তারপর শারমিন খালার হলুদে তো সবাই রাতে ঢালা বিছানা দিয়ে ৪ টা পর্যন্ত রাতে গল্প করে ঘুমিয়েছি।
ঘরে ঘরে আনন্দের যে একটা আবেদন এখনকার হলুদ-মেহেদী ১২ পদের অনুষ্ঠানে আছে নাকি জানি না। সবাই অনেক খরচ করে, হরেক পদের খাবার সাজায়, কিন্তু মা-খালাদের হাতের পিঠা, তাদের কণ্ঠে গান আর প্রাইভেট গ্যাদারিং এর সেই আন্তরিকতার কোনো তুলনা হয় না । নভেম্বর ডিসেম্বর মাসটা স্কুল ছুটির আর বিয়ের হিড়িকের মাস ছিলো; কোথায় যে দিনগুলো সব হারিয়ে গেলো?
“গাঁয়ে হলুদ বৃত্তান্ত “