11/15/2025
🌺 “রিওর নীল আকাশে যখন প্রেম নেমে এলো”
একটি ব্রাজিলিয়ান প্রেমের গল্প
মুশফিক প্রথমবারের মতো ব্রাজিল এসেছে। বহুদিনের স্বপ্ন—রিও দে জেনেইরোর পাহাড়, সমুদ্র আর কার্নিভালের নাচ নিজ চোখে দেখা।
কিন্তু সে জানত না, এই দেশ তাকে শুধু দৃশ্য নয়, একটি হৃদয়ের ঠিকানা উপহার দেবে।
১. প্রথম দেখা: কপাকাবানার সেই সকাল
সকালে কপাকাবানা সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে হাঁটতে মুশফিক দেখল—একজন মেয়ে ঢেউয়ের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
হাওয়ায় তার লম্বা চুল উড়ছে… রোদ তার গায়ের ওপর সোনালি পর্দার মতো পড়ছে।
আর হাসি—মুসকানের মতো নরম, আবার সূর্যের মতো উজ্জ্বল।
সে ফিসফিস করে বলল,
“Bom dia…”
তারপর মুচকি হেসে ইংরেজিতে—
“Beautiful morning, isn’t it?”
মেয়েটির নাম ছিল লুনা।
বাংলায় মানে—চাঁদ।
আর সত্যিই সে যেন চাঁদের মতো শান্ত, সুন্দর, সুহাসিনী।
২. একসাথে শহর ঘোরা
লুনা জানলো মুশফিক বাংলাদেশ থেকে এসেছে।
আশ্চর্যের বিষয়—সে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা পড়েছিল। বাঙালিদের ভাত-ফুটবল-সংগীত পছন্দ তার জানা ছিল।
ওরা দু’জনে রিও শহর ঘুরতে বের হলো।
করকোভাদো পাহাড়ে উঠে হাত-পা ছড়িয়ে থাকা ক্রিস্টো রেডেন্তর মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে লুনা বলল,
“যারা সত্যিকারভাবে ভালোবাসে, ঈশ্বর তাদের পাশে দাঁড়ান।”
মুশফিকের হাত অজান্তেই লুনার হাত ছুঁয়ে গেল।
লুনাও সরিয়ে নিল না।
দু’জনের চোখে এক অদ্ভুত নরম আলো…
৩. সঙ্গীত, খাবার এবং হৃদয়ের ভাষা
এক সন্ধ্যায় লুনা মুশফিককে নিয়ে গেল এক স্থানীয় সাম্বা অনুষ্ঠানে।
রঙিন আলো, বাজনার তালে দুলে ওঠা মানুষ—সবই যেন অন্য এক জগৎ।
সঙ্গীতের মাঝে লুনা তার কানে বলল,
“তুমি জানো, প্রেম কখনো ভাষা খোঁজে না। চোখের দৃষ্টি, হাসির রঙ… এটাই যথেষ্ট।”
সেদিন তারা খেল Feijoada, আর লুনা নিজ হাতে তাকে দিলো Brigadeiro—চকোলেটের ছোট মিষ্টি।
মুশফিক মজা করে বলল,
“তোমার হাসির মতোই মিষ্টি।”
লুনা লাল হয়ে গেল।
৪. ভালোবাসা কি এভাবেই আসে?
দিন যায়, শহর ছোট হয়ে আসে।
মুশফিক বুঝতে পারে—সে লুনাকে ছাড়া রিও কল্পনা করতেই পারে না।
লুনাও শান্ত স্বরে একদিন বলল,
“তুমি এলে, আমার জীবনে রোদটা একটু বেশি উজ্জ্বল হলো।”
সেই রাতে ইপানেমা বিচে বসে দু'জনে সোনালি সূর্যাস্ত দেখছিল।
মুশফিক ধীরে ধীরে বলল,
“লুনা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
লুনা তার কাঁধে মাথা রেখে উত্তর দিল,
“Eu também te amo…”
(আমিও তোমাকে ভালোবাসি)
৫. বিদায়ের আগে প্রতিশ্রুতি
মুশফিকের দেশে ফেরার দিন ঘনিয়ে আসছিল।
বিমানবন্দরে লুনার চোখ চিকচিক করছে।
“তুমি তো ফিরবে… তাই না?”—লুনা জিজ্ঞেস করল।
মুশফিক লুনার হাত ধরে বলল,
“এই দেশ আমাকে তোমার রূপে ডাক দিয়েছে।
ফিরবই। শুধু পর্যটক হিসেবে নয়—মন নিয়ে।”
লুনা তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল।
রিওর নীল আকাশ শুধু তাদের দু’জনের সাক্ষী থাকল—
একজন পর্যটক আর এক সুহাসিনী,
যাদের হৃদয় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো নিঃশব্দে এক হয়ে গেল।