03/08/2024
রামাদানে কি কি ভুল করা যাবে না?
১. দিনের বেশিরভাগ সময় রান্নাঘরে কাটানো!
রমাদানের উদ্দেশ্য হলো আমাদের অন্তরকে ইমান দিয়ে পূর্ন করা!
আমাদের পেটকে খাদ্য দিয়ে পূর্ন করা নয়!
হরেকরকমের ইফতারি আর সেহরি আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাবে না!
ইবাদত আর আমল বাচাবে! তাই ইবাদতে মন দিন!
আর ঘরের পুরুষদের এটা দায়িত্ব যে মহিলাদের অতিরিক্ত রান্না করতে না বলা, যেনো তাদের বাধ্য হয়ে রান্নাঘরে বেশি সময় দিতে না হয়।
২. রোজা রাখা কিন্তু নামাজ না পড়া!
রমাদানে রোজা রাখা ফরজ!
কিন্তু নামাজ ১২ মাসই ফরজ!
সেটা অনেকেই ভুলে যান!
ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দিলে কাফেরদের দলে চলে যেতে থাকবেন আস্তে আস্তে।
"বান্দা ও কুফরের মাঝে ব্যবধান হল সালাত (নামায) পরিত্যাগ করা।"
[তিরমিযি ২৬২১]
প্রতি ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায় করে নিবেন!
তাহলে পরে আর আলসেমি লাগবে না।
৩. সেহরিতে ও ইফতারিতে অতিরিক্ত খাওয়া!
আমরা সেহরিতে সারা দিনের খাবার খেয়ে ফেলি যেনো দিনে ক্ষুধা না লাগে!
আবার ইফতারিতে সম্পূর্ন পেট ভরে খাই যেনো ১ সপ্তাহ ধরে কিছু খাইনি এমন!
অথচ হাদিসে এসেছে, মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন পাত্র ভর্তি করে না।
(যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে পাত্র থেকে ততটুকু খাদ্য উঠানো কোন ব্যক্তির জন্য দূষণীয় নয়)।
যতটুকু আহার করলে মেরুদন্ড সোজা রাখা সম্ভব, ততটুকু খাদ্যই কোন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।
এরপরও যদি কোন ব্যক্তির উপর তার নফস (প্রবৃত্তি) জয়যুক্ত হয়, তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। [সুনান ইবনে মাজাহ ৩৩৪৯]
৪. সেহরি না খাওয়া!
অনেকেরই ইফতার করে পেট ভরে থাকে এজন্য সেহরি খায় না!
অথচ সেহরি খাওয়া সুন্নাহ!
ক্ষুধা না থাকলে সামান্য হলেও খেয়ে নেওয়া উচিত।
‘‘তোমরা সেহরী খাও।
কারণ, সেহরীতে বরকত আছে।’’
[বুখারী ১৮২৩]
৫. রোজা রেখে অতিরিক্ত ঘুমানো!
রোজা রেখে অতিরিক্ত ঘুমানো হারাম নয়। কেউ যদি অতিরিক্ত ঘুমায় তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
তবে একজন মানুষের জন্য ৬ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট।
সিরাতের দিকে নজর দিলে দেখা যায় রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬ ঘন্টারও অনেক কম সময় ঘুমাতেন প্রতিদিন।
রমাদানের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই ঘুমিয়ে এই মূল্যবান মাসের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করা উচিত নয়!
৬ ঘন্টার বেশি না ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
৬. মোবাইল ফোনে সময় নষ্ট করা!
আমাদের রমাদানের বিরাট একটা সময় চলে যায় এই ফোন চালিয়ে!
স্ক্রলিং করবো না করবো না ডিসাইড করার পরেও সেই স্ক্রলিং করেই অনেক সময় নষ্ট করে ফেলি!
রমাদানে ফোন ব্যবহার একদমই বাদ দিতে হবে!
প্রয়োজনের খাতিরে বা নসীহা নিতে দিনে ২০/২৫ মিনিট ব্যবহার করাই যায় তবে এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করা একদমই অনুচিত!
৭. রাগ নিয়ন্ত্রণ না করা!
রোজা রেখেছি এই দোহাই দিয়ে আমরা অনেকেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করি না! অথচ একজন রোজাদারের তাকওয়া আরো বেশি হওয়া উচিত!
ক্ষুধায় অন্ধ হয়ে পরিবারের লোকজনদের বা অন্যদের সাথে রাগ দেখানো যাবে না! নিজের আচার আচরন, ব্যবহারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৮. পরিমান মতো পানি না খাওয়া!
আমরা দিনে যেনো ক্ষুধা না লাগে তাই রাতে বেশি করে খাবার খাই পরে দেখা যায় পানি খাওয়ার জন্য পেটে আর জায়গা নেই।
পানি কম খাওয়ার কারনে আমাদের শরীর ক্লান্ত লাগে!
পরিমান মতো পানি খেতে হবে অবশ্যই!
৯. ইফতার করতে দেরি করা!
হাদিসে এসেছে, ‘‘লোকেরা ততক্ষণ মঙ্গলে থাকবে, যতক্ষণ তারা (সূর্য ডোবার পর নামাযের আগে) ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে।’’
[বুখারী ১৯৫৭]
অথচ আমরা অনেকেই ইফতারের সময় হয়ে গেলেও খাবার প্রস্তুতে ব্যস্ত থাকি, গড়িমসি করি আর ভাব দেখাই যে আমি আরো কিছুক্ষন না খেয়ে থাকতে পারবো!
ইফতার করতে দেরি করা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের স্বভাব।
তাই হাদিসে আমাদের বলা হয়েছে, ‘‘দ্বীন ততকাল বিজয়ী থাকবে, যতকাল লোকেরা ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে।
কারণ, ইয়াহু*দী ও খ্রিষ্টানরা দেরী করে ইফতার করে।’’
তাই ইফতারির সময় হয়ে গেলেই আযানের অপেক্ষা না করে ইফতার করে নিতে হবে।
১০. রোজা রাখা কিন্তু গীবত পরিহার না করা!
আপনি আল্লাহর ভয়ে খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকলেন তবে গীবত থেকে বিরত থাকতে পারলেন না!
তাহলে আপনি ব্যর্থ!
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দুটি থেকে যে বেঁচে থাকবে তার রোজা নিরাপদ থাকবে—গীবত ও মিথ্যা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৮৯৮০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃষ্ঠা ৬৭৪; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬০)
১১. রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে তিলাওয়াত না করা!
কোরআনের মাসে কোরআন তিলাওয়াত না করার চেয়ে ব্যর্থতা আর কিছুতে নেই!
আল্লাহ তাআলা বলেন: “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”
[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
রমজান মাসে জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে পরস্পর কুরআন পাঠ করতেন।
[সহিহ বুখারি (৫) ও সহিহ মুসলিম (৪২৬৮)]
এ হাদিস থেকে গ্রহণ করা যায় যে, রমজান মাসে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করা ও কুরআন অধ্যয়ন করা মুস্তাহাব।
গোটা মাসে অন্তত একবার হলেও কুরআন খতম করা উচিত।
তবে দ্রুত তিলাওয়াতের চেয়ে তিলাওয়াতের মানের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখা উচিত!
১২. কে কতো বেশি খতম দিতে পারে এ নিয়ে কম্পিটিশন করা আর সবাইকে বলে বেড়ানো আমি এতোবার খতম দিয়েছি!
ইবাদত গোপনেই উত্তম!
অথচ একদল সামান্য ইবাদত করলেই সবাইকে বলে বেড়ায় যে আমি এটা করেছি।
আল্লাহ বলেন,
‘‘ধ্বংস ঐ সমস্ত সালাত আদায়কারীদের জন্য যারা সালাতের ব্যাপারে উদাসীন। যারা লোকদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সালাত পড়ে’’ (সূরা আল মাউন: ৪)
‘‘তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্যই দাঁড়ায়।’’
(সূরা আন নিসা: ১৪২)
যতোবারই খতম দিয়েছেন সেটা লুকিয়ে রাখতে হবে!
কাউকে বলা যাবে না কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না, সেখানে কম্পিটিশন করা তো দূরের কথা!
এতে উদ্দেশ্য হয়ে যায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়!
১৩. তাহাজ্জুদ আদায় না করা!
রমাদানে বিশাল সুযোগ থাকে প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করার।
অথচ আমরা কয়েকদিন তাহাজ্জুদ পড়েই ক্লান্ত হয়ে যাই, পরে দেখা যায় শেষ ১০ রাত্রিতেও অনেকে তাহাজ্জুদ পড়ছে না!
অথচ এ সময় বিরাট সুযোগ দোয়া কবুল করিয়ে নেওয়ার!
এবং রমজান শেষেও তাহাজ্জুদ ধরে রাখার অভ্যাস করে নেওয়ার!
প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ ও মোনাজাত মিস করা যাবে না।
হাদিসে এসেছে, রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সওম এবং ফারয (ফরয) সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত।
[মুসলিম ১১৬৩]
১৪. রোজা রেখেও মিথ্যা বলা!
মিথ্যা বলা সবসময়ই গুনাহের কাজ! তবে একজন রোজাদারের জন্য মিথ্যা বলা আরো ভয়ানক কাজ!
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
[বুখারী ১৯০৩]
শুধু রমজানে নয় বরং সবসময়ই মিথ্যাবাদী হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
১৫. নিয়ত ঠিক না রাখা!
একটা বিরাট সংখ্যার মুসলিম রোজা রাখে কারন রাখতে হয়!
প্রতিবছর সবাই রোজা রাখে তাই তারাও রাখে!
অথচ রোজা হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য!
রমাদান হওয়া উচিত আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম!
আর গুনাহ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেওয়ার মাস!
অথচ এই রমাদান হয়ে গেছে কেবল দিনের বেলা না খেয়ে থাকার মাস!
১৬. ইফতারের আগে মোনাজাত না করা!
ইফতারের আগের দোয়া কবুলের এই বিশেষ সময় আমরা অলসতায় অপারগতায় কাটিয়ে দেই।
অথচ এই মাসটা আবার পাওয়ার জন্য আরো ১১ মাস অপেক্ষা করতে হবে!
প্রতিটা ইফতারের আগে আল্লাহর সাথে আমাদের জরুরী আলাপ হোক!
১৭. ইফতার খাওয়ার পরের দোয়া না পড়া!
একটানা ৩০ দিন ধরে একটা দোয়া মাত্র পড়ে বিশাল সওয়াব অর্জনের সুযোগ আমরা মিস করে ফেলি!
এখনই এই দোআ মূখস্থ করে ফেলুন আর প্রতি ইফতারিতে খেজুর বা পানি বা যা কিছুই প্রথমবার খাবেন তা খাওয়ার পরে পড়ুন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।
(আবু দাউদ, মিশকাত)
আল্লাহ আমাদের এই রমাদানকে পূর্বের সব রমাদান থেকে উত্তমভাবে কাটানোর তৌফিক দিন!
লেখাঃ- কপিকৃত