
28/07/2025
পর্ব-১: শরীয়ত মোতাবেক কিভাবে রোযা রাখবো এবং মাস শুরু করবো? আর শরীয়ত মানলে কোরআনের হুকুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে- না দিলে মুসলমান থাকা অসম্ভব। তাই এর নাম দিয়েছি-"চান্দ্রমাস শুরুর এটমবোম"।
ভূমিকাঃ 'মাস পাওয়া' এবং 'রোযা রাখা' সম্পূর্ন ভাবে দুটো আলাদা কাজ এবং আলাদা হুকুম। 'মাস পাওয়ার' সাথে 'হেলালের' সম্পর্ক। আর 'রোযা রাখার' সাথে 'সূর্যের' সম্পর্ক। হেলাল দিয়ে মাস শুরু করতে হয়। আর মাস পাওয়া গেলে সূর্য দেখে প্রতিদিন রোযা রাখতে হয়।
প্রশ্ন-১: কি ভাবে রোযা রাখব?
উত্তর: পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার আয়াত-১৮৭ (অংশ) এ আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন সূর্য দেখে রোযা রাখতে বলে দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে:-.. وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبيض مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى الَّيْلِ .....
অর্থ: আর তোমরা খাও এবং পান কর যতক্ষণ না ভোরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। তারপর রোযা পূর্ন কর রাত পর্যন্ত।
মন্তব্যঃ সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে- তোমরা সোবহে সাদিকের মধ্যে সাহরী খাও। তারপর রোযা পূর্ন কর রাত পর্যন্ত। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং আইয়ামে তাশরীকের তিন দিন সহ মোট ৫ দিন রোযা রাখা হারাম। রামাদান মাস সহ বাকী (৩৬৫-৫=) ৩৬০ দিনের যেকোন দিনে রোযা রাখতে হবে কোরআনে বলা উপরোক্ত হুকুম অনুযায়ী। এই কারনে কিভাবে রোযা রাখতে হবে সেই কথা হাদীসে বলা হয়নি। কোরআনে বলা আছে বিধায় রাসুল (সাঃ) সেই কথা হাদীসে পুনরায় উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করেননি।
প্রশ্ন-২: কি ভাবে মাস শুরু করবো?
উত্তর: রামাদান মাস সহ যেকোন মাস শুরুর দুটো নিয়ম আছেঃ-
ক) কোরআনের নিয়ম।
খ) হাদীসের নিয়ম।
ক) কোরআনে বলা নিয়ম হচ্ছেঃ
(১) হেলালের হিসাব করে রামাদান মাস সহ সকল চান্দ্রমাস শুরু করতে হবে।
সূত্রঃ ৫৫:৫ + ৯:৩৬ + ২:১৮৯ + ৬:৯৬ + ১০:৫ + ১৭:১২ + ১৮:২৫ ইত্যাদি সহ মোট ৯০ টার মতো আয়াত।
খ) হাদীসে বলা নিয়ম হচ্ছেঃ
(১) হেলাল দেখে মাস শুরু করতে হবে।
(২) অথবা স্বাক্ষ্য পেলে মাস শুরু করতে হবে।
(৩) উপরের কোনোটা না হলে মাস ৩০ দিন পুরা করতে হবে।
মন্তব্যঃ রোযা শুরুর ব্যাপারে উপরে কোরআন ও হাদীস থেকে দুই রকমের নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে। এখন আমরা কোনটা মানবো? এমতাবস্থায় শরীয়তের বিধান হচ্ছে যদি কোন বিষয়ে কোরআনে এবং হাদীসে দুই রকমের নির্দেশনা পাওয়া যায়, তবে কোরআনের হুকুম মানতে হবে, হাদীসের হুকুম মানা যাবে না। কিন্তু হাদীসকে বাতিলও বলা যাবে না।
উপসংহার: মাস শুরুর ব্যাপারে উপরে বর্নিত দুইটা নিয়ম এবং শরীয়তের বিধান উল্লেখ করা হলো। শরীয়তের বিধান মানতে হলে কোরআনের হুকুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাই হেলালের হিসাব করে তৈরী করা "হিজরী ক্যালেন্ডারে" অথবা যেকোন "চান্দ্রপঞ্জীকায়" তারিখ দেখে মাস শুরু করতেই হবে। শরীয়তের এই হুকুম অমান্য করার ক্ষমতা কোন মুসলিমেরই নেই। তাই এর নাম দিয়েছি-"চান্দ্রমাস শুরুর এটমবোম"।
এই একটা হুকুম না মানার কারনে বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে চান্দ্রমাস শুরু নিয়ে বিরাট বিশৃংখলা বিরাজ করছে। আমি বাংলাদেশ সরকার সহ দেশবিদেশের সকল দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলব আপনারা অনতি বিলম্বে হিজরী ক্যালেন্ডার অথবা যেকোন চান্দ্রপঞ্জীকা দেখে মাস শুরু করুন এবং সকল বিশৃংখলা দূর করুন।
উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়ার পর সকল নাফরমানের ফন্দিফিকির চিরতরে বিদায় নেবে, ইনশাআল্লাহ। রোযা/ঈদ নিয়ে এই জরুরী বার্তা পাওয়ার পরও যদি কেউ মাস শুরু নিয়ে দ্বিমত পোষন করেন, তবে বুঝতে হবে- হয় তিনি কোরআনের হুকুম সম্পর্কে কিছুই জানেন না অথবা কোরআন মানেন না শুধু হাদীস মানেন অথবা তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ।
✍️ নিবেদকঃ ইন্জিঃ মোহাম্মদ এনামুল হক
# প্রাক্তন মহাপরিচালক, টেলিকম স্টাফ কলেজ, গাজীপুর।
# সদস্য (অবঃ), টি এন্ড টি বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ।
# কোরআন, হাদীস ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছাত্র।
# বহু গ্রন্থ প্রনেতা এবং রোযা/ঈদ নিয়ে ২৪ বৎসরের গবেষক।
# মহাসচিব, হিজরী ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ।
# এই পরিষদের সভাপতিঃ প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী এবং
প্রাক্তন উপাচার্য ড. এম. শমশের আলী।
# আমার হোয়াটসআপ নম্বরঃ +17633137581
ইমেইলঃ [email protected]
পর্ব-২: Practical ও Technical এই দুইটা শব্দের পার্থক্যটা বুঝতে পরলেই চান্দ্রমাস শুরু নিয়ে বিশ্বব্যাপী কোথাও কোন বিশৃংখলা থাকবে না, ইনশাআল্লাহ। তাই এটার নাম দিয়েছি- "চান্দ্রমাস শুরুর মিসাইল"।
১। সংক্ষিপ্ত কথায়- Practical হচ্ছে ব্যবহারিক উপায়, আর Technical হচ্ছে কারিগরী উপায়।এই দুটোই হচ্ছে উপায় বা অবলম্বন মাত্র। শরীয়তের হুকুম পালনে এই দুটো উপায় শুধু সহায়তা দান করে থাকে- শরীয়তের হুকুম বদলাতে পারে না। অতীতে বহু কাজ আমরা ব্যবহারিক বা Practical উপায়ে সম্পন্ন করেছি। কিন্তু কারিগরী বিদ্যা বা Technical knowledge এর উন্নয়নের কারনে বর্তমানে একই কাজ আমরা অতি সহজে কারিগরী বা Technical উপায়ে করে যাচ্ছি।
২। যেমন আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ স্বলাত আদায় করে থাকি। স্বলাত ফরজ হয় ওয়াক্ত হলে। ওয়াক্ত না পেলে স্বলাত আদায় করা যায় না। এখানে "ওয়াক্ত পাওয়া" এবং "স্বলাত আদায় করা" -সম্পূর্ন ভাবে দুটো আলাদা কাজ ও বিষয়। ওয়াক্ত পাওয়া প্রথম কাজ আর স্বলাত আদায় করা দ্বিতীয় কাজ। যদিও দুটো কাজই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু একটার সাথে আরেকটাকে গুলিয়ে ফেলার কোন সুযোগ নেই।
৩। একই ভাবে 'মাস শুরু করা' এবং 'রোযা রাখা' সম্পূর্ন ভাবে দুটো আলাদা কাজ এবং আলাদা হুকুম। 'মাস শুরু করার' সাথে 'হেলালের' সম্পর্ক আর 'রোযা রাখার' সাথে 'সূর্যের' সম্পর্ক। হেলাল দিয়ে মাস শুরু করতে হয়। আর মাসের শুরু পাওয়া গেলে সূর্য দেখে প্রতিদিন রোযা রাখতে হয়। অতএব একটার সাথে আরেকটাকে গুলিয়ে ফেলার কোন সুযোগ নেই। কোরআনের হুকুমে (২:১৮৭) প্রতিদিন সূর্য দেখে রোযা রাখা নিয়ে পৃথিবীর কোথাও কোন মতপার্থক্য নেই। মতপার্থক্য শুধু চান্দ্রমাস শুরু নিয়ে।
৪। কারন অধিকাংশ আলেম হাদীসের হুকুম মেনে অতীতের Practical নিয়ম অনুযায়ী খালী চোখে হেলাল দেখে চান্দ্রমাস শুরু করার পক্ষে। অথচ অতীতের বহু কাজ তাঁরা বর্তমানে আধুনিক বা Technical উপায়ে করে থাকেন। এই বিষয়ে অতীত এবং বর্তমান নিয়মের বহু উদাহরন নীচে টেবিল বা ছক আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পুরাতন উপায়ের পরিবর্তে আধুনিক উপায় অবলম্বনের কারনে আসল কাজ কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না; বরং আরো সুন্দর ও নির্ভুল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
৫। চান্দ্রমাস শুরুর আধুনিক বা Technical নিয়ম অর্থাৎ হিজরী ক্যালেন্ডার বা চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসরনের বিষয়টা নিয়ে আলেমগন যথেষ্ট দ্বিধান্বীত। অতীতে ঘড়ি এবং সৌরক্যালেন্ডার নিযেও তাঁদের সন্দেহ ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই সন্দেহ আর নেই। অতএব হিজরী ক্যালেন্ডার বা চান্দ্রপঞ্জীকার বিষয়টা বুঝে আসলে সেটাও তাঁরা অনুসরন করবেন, এতে কোনই সন্দেহ নেই। আমি মনে করি নীচে বর্নীত ছকটা দেখলেই তাঁদের সন্দেহ সম্পূর্ন ভাবে দূর হয়ে যাবে।
৬। নীচের ছকে অতীতে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ অথবা ধর্মীয় কাজ কিভাবে Practical উপায়ে করা হতো এবং একই কাজ বর্তমানে কিভাবে Technical উপায়ে করা হচ্ছে- তা পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উপায় বা অবলম্বনের কারনে কর্তব্য কাজ বা মূল এবাদতের হুকুম কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না। বরং কর্তব্য কাজ সম্পাদনে সহায়ক হচ্ছে। তাই হিজরী ক্যালেন্ডার অথবা যেকোন চান্দ্রপঞ্জিকা দেখে নির্ভুল ভাবে চান্দ্রমাস শুরু করে আমরা সবাই রোযা/ঈদ পালন করতে পারি।
৭। কারন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন- "সূর্য ও চন্দ্র (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত) হেসাব মতন চলে” (৫৫:৫)। আবার বলেছেন- "হে মানবজাতি (সকল ধর্মের মানুষ) তোমরা ১২টা হেলাল দিয়ে (হিসাবের মাধ্যমে) ১২টা মাস শুরু কর" (২:১৮৯)। তাই হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্ঠানদের চান্দ্রপঞ্জীকা এবং সকল ইসলামিক হিজরী ক্যালেন্ডার হুবহু একই রকম। এমনকি সকল পঞ্জীকা ও ক্যালেন্ডারে একই তারিখে পূর্নিমাও হয়। কারন চাঁদ একটা নীরেট পাখরের গোলক, এটা কোন ধর্ম মানে না। তাই সবাইকে একই হিসাব দেয়।
৮। যাঁরা একদিন আগে বা পরে মাস শুরু করেন তাঁরা দেখতে ও হিসাব করতে ভুল করেন। এই ভুল হিসাবের জন্য তাঁরা নিজেরাই দ্বায়ী-চাঁদ দ্বায়ী না। কারন আল্লাহর দেওয়া হিসাব সন্দেহাতীত ভাবে নির্ভুল। তাই অহেতুক চাঁদকে দোষ না দিয়ে, নিজেদের ভুল নিজেরাই সংশোধন করুন। এই একটা কারনেই মাস শুরু নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিরাট বিশৃংখলা বিরাজ করছে। এটা দূর হয়ে গেলেই সকল মতপার্থক্যও চিরতরে বিদায় নিয়ে নেবে, ইনশাআল্লাহ। এই কারনে এর নাম রেখেছি "চান্দ্রমাস শুরুর মিসাইল"।
৯। এটা হারজিতের কোন বিষয়ই না বরং সঠিক হুকুম জানা, বুঝা এবং মানার বিষয়। নিচের বর্নিত ১৭টা কাজের বেলায় যখন আধুনিক বা Technical নিয়ম পালন করছেন; তখন চান্দ্রমাসের শুরু নিয়ে অযথা কেন আপত্তি করবেন? তাই জোড় হাতে অনুরোধ করছি, দয়াকরে সবাই হিজরী ক্যালেন্ডার অথবা যেকোন চান্দ্রপঞ্জীকা দেখে নির্ভুল ভাবে চান্দ্রমাস শুরু করুন এবং সঠিক ভাবে রোযা/ঈদ পালন করুন। অহেতুক নিজেদের ফরজ ও ওয়াজীব এবাদত আর বিনষ্ট করবেন না।
১০। রোযা/ঈদ নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ন বার্তা পাওয়ার পরও যদি কেউ চান্দ্রমাস শুরু নিয়ে দ্বীমত পোষন করেন, তবে বুঝতে হবে- তিনি কোরআনের হুকুমকে বাদ দিয়ে একমাত্র হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন এবং অন্যসকল ক্ষেত্রে আধুনিক নিয়ম মানতে রাজী কিন্তু চান্দ্রমাস শুরুর ব্যাপারে মানতে রাজী না। এটা কি কোন ঈমানদার মুসলমানের কাজ হতে পারে?
✍️ নিবেদকঃ ইন্জিঃ মোহাম্মদ এনামুল হক
# প্রাক্তন মহাপরিচালক, টেলিকম স্টাফ কলেজ, গাজীপুর।
# সদস্য (অবঃ), টি এন্ড টি বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ।
# কোরআন, হাদীস ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছাত্র।
# বহু গ্রন্থ প্রনেতা এবং রোযা/ঈদ নিয়ে ২৪ বৎসরের গবেষক।
# মহাসচিব, হিজরী ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ।
# এই পরিষদের সভাপতিঃ প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী এবং
প্রাক্তন উপাচার্য ড. এম. শমশের আলী।
# আমার হোয়াটসআপ নম্বরঃ +17633137581
ইমেইলঃ [email protected]