10/23/2025
রবার্ট বেকারের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী জাফরিন বেকার যখন শোকে কাতর, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন, ঠিক তখনই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল এক নতুন খবরে। বাড়ির প্রায় আট বছরের পুরোনো কাজের মেয়ে মারিয়া লেনর এসে জানালো, সে গর্ভবতী – আর এই সন্তানের বাবা হলেন মৃত রবার্ট বেকার!
মারিয়া আরও বলল, তার শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাই সে আগামীকাল থেকে কাজে আসতে পারবে না। সে দাবি জানালো, রবার্টের সম্পত্তি থেকে প্রতি মাসে তাকে ও তার অনাগত সন্তানের ভরণ-পোষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট খরচ দিতে হবে। পাশাপাশি, তার মাসিক বেতন—সাড়ে তিন হাজার ডলারও—তাকে নিয়মিত দিতে হবে। মারিয়া নিজেকে "সিক লিভ"-এ যাচ্ছে বলে ঘোষণা করলো।
এই খবরে ভালো প্রভাব এইটুকু হলো যে, জাফরিন বেগমের ঘন ঘন জ্ঞান হারানো বন্ধ হলো।
জার্মান বংশোদ্ভূত রবার্ট বেকার সপরিবারে উত্তর আমেরিকার ভারমন্টে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী জাফরিন এশীয় বংশোদ্ভূত, আর মারিয়া লেনর পর্তুগাল থেকে আসা এক তরুণী, যিনি বাচ্চাদের ন্যানি বা কেয়ারগিভারের কাজ করতেন।
জাফরিন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেন। রাগ সামলে নিয়ে, গায়ে হাত না তুলে তিনি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন। "তুমি কী বললে? তুমি রবার্টের সন্তান বহন করছ?"
"জ্বি ম্যাডাম," মারিয়ার উত্তর।
"কিন্তু তোমাকে তো আমি আমার ঘর আর বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলাম!"
"আমি সেই দায়িত্ব ঠিকমতোই পালন করেছি ম্যাডাম। তা না হলে আপনি বাড়ি ফিরে একটা সাজানো-গোছানো ঘর পেতেন না।"
"কীসব আজগুবি কথা বলছো! তুমি আমার বাচ্চাদের দেখাশোনার কথা বলে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছো, আবার বলছো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছো! বেরিয়ে যাও এখান থেকে! তুমি কিছুই পাবে না," চিৎকার করে উঠলেন জাফরিন।
মারিয়া শান্তভাবে বলল, "দেখুন, আমাকে বাড়তি টাকা না দিলেও অন্তত আমার মাসের বেতনটুকু দিন। যদি সেটাও না দেন, তবে আমি আপনাকে আদালতে নিয়ে যাব। মনে রাখবেন, আইনি প্রক্রিয়ায় আপনি নিশ্চিত হারবেন, কারণ আমি আপনার স্বামীর বাচ্চা বহন করছি।"
জাফরিন তাতেও রাজি হলেন না। মামলা আদালতে গড়ালো।
আদালতে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে মারিয়া লেনর জোর দিয়ে বলল, অনাগত সন্তানের ভরণ-পোষণের টাকা না পেলেও তার মাসিক বেতন—সেই সাড়ে তিন হাজার ডলার—তার খুব দরকার।
জাফরিন বেকার তখন বললেন, "আমি বিশ্বাস করি না এটা রবার্টের সন্তান। আমি ডিএনএ রিপোর্ট দেখতে চাই।"
মারিয়া লেনর ডিএনএ রিপোর্ট দেখাতে নারাজ ছিলেন, তিনি দাবি করেন—এটা একান্তই তাঁর এবং রবার্টের ব্যক্তিগত বিষয়, এই রিপোর্টে অন্যের কোনো অধিকার নেই।
জাফরিন বললেন, "আমার দুই সন্তানের জানার অধিকার আছে যে মারিয়ার সন্তান সত্যিই রবার্টের কি না।"
বিচারক রিপোর্ট দেখার অনুমতি দিলেন। জাফরিন দেখলেন—সত্যিই মারিয়া রবার্টের সন্তান বহন করছে।
নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে মারিয়া বললেন, "ইওর অনার, আমি পুরো সময়টাতে তাঁর বাচ্চাদের জন্য রান্না করেছি, তাঁর ঘরদোর গুছিয়ে রেখেছি। তাই তিনি বাড়ি ফিরে একটা গোছানো ঘর পেয়েছেন।"
#অনেক_তর্ক-বিতর্কের পর বিচারক রায় দিলেন: জাফরিন বেকার তাঁর ন্যানি মারিয়ার প্রাপ্য টাকা দিতে বাধ্য নন, কারণ মারিয়া লেনর তাঁর পেশাদারিত্ব নষ্ট করেছেন। তিনি তাঁর চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছেন এবং দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি।
বিচারকের মতে, মারিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে রবার্ট বেকারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন, যা 'বিশ্বাস ভঙ্গ' । মারিয়া যখন রবার্টের সঙ্গে এই 'অ-পেশাদার' সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তখন থেকেই তিনি তাঁর চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছেন এবং জাফরিন বেকারের বাচ্চাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
#বিচারক পেশাদারিত্বের সংজ্ঞা তুলে ধরে বললেন—চুক্তি অনুযায়ী যেকোনো দায়িত্ব পালন করা, নৈতিকভাবে তা মেনে চলা, সত্য বলা, মিথ্যা না বলা, দয়াশীল হওয়া, চুক্তির নির্দেশনা মেনে চলা, চুরি না করা এবং 'অ-শোভন' সম্পর্কে না জড়ানো—এগুলোই পেশাদারিত্ব।
তাহলে নবজাতক শিশুটির কী হবে?
অনাগত সন্তানের জন্য বিচারক মারিয়া লেনরকে বললেন, "আমি বুঝতে পারছি বিষয়টি তোমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আমি এটাও বুঝতে পারছি তুমি মা হিসেবে খারাপ হবে না। তোমার জন্য আমার পরামর্শ—পেছনের দিকে তাকিয়ো না, বর্তমানের দিকে তাকাও। সামনের দিকে এগিয়ে যাও। নিজেই নিজের সমাধান খোঁজো। তোমার জন্য এটা একটা কঠিন অভিজ্ঞতা হলো। ভালো থেকো।"
#চরিত্রগুলো_কাল্পনিক। একটি কোর্ট শো'র ছায়া অবলম্বনে।
ফলাফল কি দাঁড়ালো ???
১.অনেকেই বলবে পুরুষের অপকর্মের শেষ ফল খুব খারাপ ভাবে নারীকেই বহন করতে হয়।
২. চুক্তি ভঙ্গ করা কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতিও তো কখনোই ভালো হয়না।
৩. মারিয়া লেনর কেনো চিন্তা করলো না এমন একটি অনৈতিক সম্পর্কের পরিণতি খুব খারাপ যা তাকেই বহন করতে হবে !!
৪. রবার্ট বেকার যদি বেঁচে থাকা অবস্থায় এই ঘটনা প্রকাশিত হতো তাতে এই অনৈতিক সম্পর্কের ভার তাকে সারাজীবন দাম্পত্য জীবনে মারাত্বকভাবে বহন করতে হতো !! _ যার পরিণতি হয়তো ডিভোর্স /বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতো!! ধ্বংস হতো পরিবার !!
#অতএব, অনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রযোজ্য হবে কি না, তা নির্ভর করে সেই সম্পর্কটি কোনো আইন লঙ্ঘন করেছে কি না তার উপর। যদি কোনো আইনি ভিত্তি থাকে, তবে আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে। অনৈতিকতার প্রায়শ্চিত্ত প্রত্যেককেই করতে হয়! আইনগতভাবে অথবা বিবেকের দংশনে পারিবারিক জীবনে / সামাজিক জীবনে !!