Weekly SadaKalo

Weekly SadaKalo A USA Based Weekly Newspaper

যখন আসবেন তারেক রহমানআনোয়ার আলদীন  রাষ্ট্ররাজনীতির ৪৩ বছরের মহীয়সী কিংবদন্তি বেগম খালেদা জিয়া ১২ দিন শুয়ে আছেন এভারকেয়ার...
12/03/2025

যখন আসবেন তারেক রহমান

আনোয়ার আলদীন

রাষ্ট্ররাজনীতির ৪৩ বছরের মহীয়সী কিংবদন্তি বেগম খালেদা জিয়া ১২ দিন শুয়ে আছেন এভারকেয়ারের শুভ্র বিছানায়। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ-পরিচর্যায় তাকে সারিয়ে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় ব্রত দেশি-বিদেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। আর পুরো বাংলাদেশের সব ধর্মমতের অষ্টপ্রহর কাটছে তার শুশ্রূষা কামনা-প্রার্থনা ও প্রণতিতে। একান্ত স্বজনের বিয়োগ শঙ্কায় হৃদয়তন্ত্রী ছিঁড়ে যাচ্ছে মানুষের। যেন আকাশ কাঁদছে, বাতাসে রোনাজারি, জলের ঊর্মি কোলাহলেও ভেসে যাচ্ছে তার জন্য রোদন। দেশের সর্বময় প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতিজন কান পেতে আছেন তার মঙ্গল খবরের শ্রবণাকাঙ্ক্ষায় । সুস্থতার অসীম আকুতিতে প্রতিক্ষায় প্রহর কাটছে মানুষের। জায়নামাজে কাঁদছেন পল্লী-জনপদের মানুষ। আল্লাহর দরবারে তাদের ’দেশনেত্রী’র প্রাণভিক্ষা চাচ্ছেন। গ্রাম-গঞ্জ-নগর-বন্দন-মফস্বল থেকে দলে দলে মানুষ আসছেন ঢাকায়। তাদের চোখে-মুখে শোকাতুর ছায়া। মানুষ সুষুপ্তি,নিদ্রায় ঊর্ণাজাল ঝেড়ে বসুন্ধরায় হাসপাতালের গেটে গিয়ে ভিড় করছেন। এমন বাংলাদেশ কেউ দেখেনি আগে। অভাবনীয় নিখাঁদ নিকষিত দেশপ্রেম-আপসহীন ধনুর্ভঙ্গ ভাবমূর্তি, পর্বত দৃঢ়তা, ধৈর্য, অসম সাহস আর অসামান্য আভিজাত্য বেগম জিয়াকে যে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে এনেছে, তা এক্ষণে দেদীপ্যমান হচ্ছে। এই এক জীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রাণ। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার পরও এমন জাতীয় অভিভাবকত্বের স্থান অর্জন করার মতো এক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটছে তাকে ঘিরে। চিকিৎসকদের মতে, বেগম খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুর ঝুঁকিতে।

এমনই পরিস্থিতিতে তার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের বিলাতে তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৮ বছর। তিনি কেন অসুস্থ মায়ের শিয়রে ফিরছেন না, তা নিয়ে বিরূপাক্ষ রাজনীতিক, কতিপয় মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে হুলুস্থুল চলছে। ’কেন দেশে ফিরছেন না’—এই জিজ্ঞাসা নিয়ে যেন বা একশ্রেণির মানুষের নিদ্রা টুটে গেছে। পত্রিকা-টকশো, সামাজিক মাধ্যমে যে যার মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন; নিন্দা-মন্দ বয়ান উগরে দিচ্ছেন।

তবে এসব লোক এদিকে অবলোকন করছেন না যে, খালেদা জিয়ার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান তারেক রহমান, পুত্রবধূ প্রখ্যাত চিকিৎসক জুবাইদা রহমান দিবানিশির প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করছেন গুরুতর সংকটাপন্ন মায়ের জন্য। তারা ঢাকার সঙ্গেই রাখছেন প্রতি অনুক্ষণের অখণ্ড যোগ-সংযোগ। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে দিচ্ছেন। আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। চীন থেকে চিকিৎসকরা এসেছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসক দল এসেছেন। সাত দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কনফারেন্সিং করে সমন্বিত উন্নত চিকিৎসা করছেন।

তারেক রহমান তার মায়ের জন্য বিশেষায়িত লন্ডন ক্লিনিক প্রস্তুত রেখেছেন। বাস্তবতাকে সর্বান্তকরণে ধারণ করেন তারেক রহমান। তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে এলে তার মায়ের জন্য এই সর্বোচ্চ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে পারতেন না। সেই সুযোগও সীমিত।

নিরেট বাস্তবতা হলো এই যে, এই গ্লোবাল ভিলেজে দূরদেশ আর কাছের দেশ বলে অবিচ্ছিন্ন কিছু নেই। এ মুহূর্তে প্রায় ২০ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে দেশে আসাটা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো— মায়ের সুচিকিৎসা।

কেন তারেক রহমান মাকে দেখতে দেশে ফিরছেন না বলে যারা শোরগোল তুলছেন, তাদের আচরণে অনুমিত হচ্ছে— মায়ের প্রতি একজন সন্তানের হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসার চেয়ে যেন তাদের দরদ বেশি। তারেক রহমান লন্ডনে বসে লন্ডন ক্লিনিকে, যেখানে চার মাস তার মা উন্নততর সুচিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে ঢাকার চিকিৎসা টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে বেগম জিয়ার পূর্ণ মেডিকেল হিস্টোরি রয়েছে। যেখানে তার রোগগুলোর সঙ্গে ওই দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সম্পূর্ণ পরিচিত-পরিপূর্ণ পরিজ্ঞাত। দেখা গেছে, যখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা পর্যালোচনায় বসেন, তখন অনেক জটিল কঠিন সংকট-সমস্যার অনায়াস সমাধান উত্তরণ হয়। এখন বিশ্বে সর্বাধুনিক চিকিৎসার বহুমাত্রিকতা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে যখন বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন পরিবেশের অভিজ্ঞতা লব্ধ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ভার্চুয়ালি বসে আলোচনা করেন, সেখান থেকে অভাবনীয় সব সর্বাধুনিক চিকিৎসা কৌশল বেরিয়ে আসে। তারেক রহমান দম্পতির অবিশ্রাম চেষ্টায় সেটাই হচ্ছে বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে।

অভিজ্ঞান হলো— অতীতে পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে তাকে বিদেশে প্রেরণ করা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট করে সুস্থতা ফিরে পান ওবায়দুল কাদের। জাতীয় পার্টির নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ মৃত্যুর দশায় পতিত হয়েছিলেন। তিনিও থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। আরও অনেকেরই জীবনমৃত্যুর মাঝামাঝি পরিস্থিতিতে উন্নততর চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াও সুস্থ হবেন এমন আশায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পুত্র তারেক রহমান।

ওয়াকিফহাল মহল ও সংশ্লিষ্টদের এই মত যে, ধরা যাক— এ মুহূর্তে বিলাত থেকে দীর্ঘ ২০ ঘণ্টার জার্নি শেষে তারেক রহমান তার মায়ের কাছে পৌঁছালেন। পথে লাখ লাখ মানুষের ভিড় জমায়েত। ঊর্মিমুখর জনস্রোতের তোড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সবকিছু পেরিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে মায়ের শিয়রে গেলেন। কাঁচের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখলেন বিছানায় চোখ মুদ্রিত নিস্তব্ধ শুয়ে আছেন মা। ঢাউস হেড লাইনে সংবাদ শিরোনাম হলেন। মানুষ হাসলেন, কাঁদলেন, আপ্লুত হলেন-আবেগে ভাসলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা বহুমাত্রায় রিপোর্ট প্রতিবেদন করলেন। কেউ কেউ লাইভ করলেন। টেলিভিশনের টিআরপি বাড়ল। টকশোতে কথার ফুলঝুরি ছুটল। মানুষের মুখে মুখে ফিরল খবরের শিরোনাম। মা ও পুত্রের অকৃত্রিম ভালোবাসার হৃদয় তোলপাড় করা তীব্র আবেগঘন দৃশ্যপটের বড় চিত্রমালায় মহামিলন দেখলেন। সামাজিক মাধ্যমে ভেসে গেল এই দৃশ্য-খবরের বন্যায়। তারপরে আনন্দের আতিশয্যে দুই লাইন আবেগ মথিত কবিতা-গীতি রচিত হলো। সম্পাদকীয় হলো, উপসম্পাদকীয় হলো। কলাম লেখকরা স্তুতি বয়ান করলেন। তারপর রিপোর্ট-প্রতিবেদন-লেখাজোখা-মুসাবিদা শেষ হলো। হাসি-আনন্দ-কান্না-কবিতার পরিসমাপ্তি ঘটল। একদিন গেল, দুদিন-তিন দিন পেরোল। দ্যান,হোয়াট নেক্সট? অতঃপর কি?

তারপর বলা হলো সেই কথাটিই— দেশে-বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাই হচ্ছে মূল দায়িত্ব-মুখ্য কাজ । তো আবেগে না ভেসে সে দায়িত্ব কি বিদেশে বসে পালন করছেন না তারেক রহমান দম্পত্তি? সেটাই করছেন তারা । আল্লাহ চাহে তো তিনি অচিরেই সেরে উঠবেন । আবারও ফিরবেন জনপরিসরে-জনারণ্যে-তাদের মা হয়ে, অভাগা বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হয়ে ।

মোদ্দাকথা হলো এই যে, দেশে হোক কিংবা বিদেশে হোক— বেগম খালেদা জিয়ার এ মুহূর্তে সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রয়োগের কোনো গত্যন্তর নেই। তাকে বিদেশে পাঠানোর মতো স্বাস্থ্যগত উত্তরণ ঘটানো। বাস্তবতা হলো— সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার কাজটিই তারেক রহমান দম্পতি লন্ডনে বসেই সুনিবিড়-সুনিপুণভাবে পুরোদমে তদারকি করছেন। ফলত তারেক রহমানের যখন দেশে আসার উপযুক্ত সময় হবে তিনি আসবেন। তারেক রহমান আবেগের বশবর্তী হয়ে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে যদি আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে চলে আসেন, তাহলে তা হিতকর হতে পারে এমন চিন্তা অবান্তর ।

তারেক রহমান তার দেশে আসা প্রসঙ্গে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন— কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’

এই কথাটি নিয়ে অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তারা সবাই অনুমানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটার একটি মানবিক ব্যাখ্যা হতে পারে তার দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে। ভক্ত-সমর্থকরা বেগম জিয়াকে ভালোবাসেন আবেগ দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। ভক্ত-সমর্থক হিসাবে সাধারণ জনগণের আবেগ-ভালোবাসা অবারিত। আর তারেক রহমান মাকে ভালোবাসেন নিঁখাদ অকৃত্রিম হৃদয়ে। মা তার কাছে এক পৃথিবী সমান। জগতের সবকিছুর ঊর্ধ্বে। একজন সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য দায়বদ্ধতা সর্বোচ্চ। দায়িত্ব হিসাবেই কেবল নয় তার সবটুকু ভালোবাসা, প্রাণের গহিন থেকে তার কর্তব্য সুনিপুণভাবে পালন করছেন পুত্র তারেক রহমান। সুতরাং আবেগের বসে একক সিদ্ধান্তে দেশে মাকে দেখতে আসার চাইতে এ ক্ষেত্রে দল এবং পরিবারের সিদ্ধান্তকেও প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন।

তাহলে কখন আসবেন বাংলাদেশের প্রাণভোমরা তারেক রহমান?- এমন কৌতূহল-এই প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সুনিশ্চিত করা। তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা । তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান যেহেতু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন, চিকিৎসা তদারকি করছেন । সুতরাং যখনই উপযুক্ত সময় উপনীত হবে, তখনই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নিজের পরিবার এবং দলের সঙ্গে কথা বলে- অগ্র পশ্চাৎ পর্যালোচনা-আলোচনা করে সুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই দেশে আসবেন।
লেখক: আনোয়ার আলদীন
চেয়ারম্যান, বাসস
যুগ্ম সম্পাদক
দৈনিক ইত্তেফাক।
সম্পাদক
সাপ্তাহিক সাদাকালো।

12/03/2025

যখন আসবেন তারেক রহমান

আনোয়ার আলদীন

রাষ্ট্ররাজনীতির ৪৩ বছরের মহীয়সী কিংবদন্তি বেগম খালেদা জিয়া ১২ দিন শুয়ে আছেন এভারকেয়ারের শুভ্র বিছানায়। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ-পরিচর্যায় তাকে সারিয়ে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় ব্রত দেশি-বিদেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। আর পুরো বাংলাদেশের সব ধর্মমতের অষ্টপ্রহর কাটছে তার শুশ্রূষা কামনা-প্রার্থনা ও প্রণতিতে। একান্ত স্বজনের বিয়োগ শঙ্কায় হৃদয়তন্ত্রী ছিঁড়ে যাচ্ছে মানুষের। যেন আকাশ কাঁদছে, বাতাসে রোনাজারি, জলের ঊর্মি কোলাহলেও ভেসে যাচ্ছে তার জন্য রোদন। দেশের সর্বময় প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতিজন কান পেতে আছেন তার মঙ্গল খবরের শ্রবণাকাঙ্ক্ষায় । সুস্থতার অসীম আকুতিতে প্রতিক্ষায় প্রহর কাটছে মানুষের। জায়নামাজে কাঁদছেন পল্লী-জনপদের মানুষ। আল্লাহর দরবারে তাদের ’দেশনেত্রী’র প্রাণভিক্ষা চাচ্ছেন। গ্রাম-গঞ্জ-নগর-বন্দন-মফস্বল থেকে দলে দলে মানুষ আসছেন ঢাকায়। তাদের চোখে-মুখে শোকাতুর ছায়া। মানুষ সুষুপ্তি,নিদ্রায় ঊর্ণাজাল ঝেড়ে বসুন্ধরায় হাসপাতালের গেটে গিয়ে ভিড় করছেন। এমন বাংলাদেশ কেউ দেখেনি আগে। অভাবনীয় নিখাঁদ নিকষিত দেশপ্রেম-আপসহীন ধনুর্ভঙ্গ ভাবমূর্তি, পর্বত দৃঢ়তা, ধৈর্য, অসম সাহস আর অসামান্য আভিজাত্য বেগম জিয়াকে যে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে এনেছে, তা এক্ষণে দেদীপ্যমান হচ্ছে। এই এক জীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রাণ। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার পরও এমন জাতীয় অভিভাবকত্বের স্থান অর্জন করার মতো এক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটছে তাকে ঘিরে। চিকিৎসকদের মতে, বেগম খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুর ঝুঁকিতে।

এমনই পরিস্থিতিতে তার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের বিলাতে তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৮ বছর। তিনি কেন অসুস্থ মায়ের শিয়রে ফিরছেন না, তা নিয়ে বিরূপাক্ষ রাজনীতিক, কতিপয় মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে হুলুস্থুল চলছে। ’কেন দেশে ফিরছেন না’—এই জিজ্ঞাসা নিয়ে যেন বা একশ্রেণির মানুষের নিদ্রা টুটে গেছে। পত্রিকা-টকশো, সামাজিক মাধ্যমে যে যার মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন; নিন্দা-মন্দ বয়ান উগরে দিচ্ছেন।

তবে এসব লোক এদিকে অবলোকন করছেন না যে, খালেদা জিয়ার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান তারেক রহমান, পুত্রবধূ প্রখ্যাত চিকিৎসক জুবাইদা রহমান দিবানিশির প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করছেন গুরুতর সংকটাপন্ন মায়ের জন্য। তারা ঢাকার সঙ্গেই রাখছেন প্রতি অনুক্ষণের অখণ্ড যোগ-সংযোগ। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে দিচ্ছেন। আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। চীন থেকে চিকিৎসকরা এসেছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসক দল এসেছেন। সাত দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কনফারেন্সিং করে সমন্বিত উন্নত চিকিৎসা করছেন।

তারেক রহমান তার মায়ের জন্য বিশেষায়িত লন্ডন ক্লিনিক প্রস্তুত রেখেছেন। বাস্তবতাকে সর্বান্তকরণে ধারণ করেন তারেক রহমান। তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে এলে তার মায়ের জন্য এই সর্বোচ্চ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে পারতেন না। সেই সুযোগও সীমিত।

নিরেট বাস্তবতা হলো এই যে, এই গ্লোবাল ভিলেজে দূরদেশ আর কাছের দেশ বলে অবিচ্ছিন্ন কিছু নেই। এ মুহূর্তে প্রায় ২০ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে দেশে আসাটা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো— মায়ের সুচিকিৎসা।

কেন তারেক রহমান মাকে দেখতে দেশে ফিরছেন না বলে যারা শোরগোল তুলছেন, তাদের আচরণে অনুমিত হচ্ছে— মায়ের প্রতি একজন সন্তানের হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসার চেয়ে যেন তাদের দরদ বেশি। তারেক রহমান লন্ডনে বসে লন্ডন ক্লিনিকে, যেখানে চার মাস তার মা উন্নততর সুচিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে ঢাকার চিকিৎসা টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে বেগম জিয়ার পূর্ণ মেডিকেল হিস্টোরি রয়েছে। যেখানে তার রোগগুলোর সঙ্গে ওই দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সম্পূর্ণ পরিচিত-পরিপূর্ণ পরিজ্ঞাত। দেখা গেছে, যখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা পর্যালোচনায় বসেন, তখন অনেক জটিল কঠিন সংকট-সমস্যার অনায়াস সমাধান উত্তরণ হয়। এখন বিশ্বে সর্বাধুনিক চিকিৎসার বহুমাত্রিকতা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে যখন বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন পরিবেশের অভিজ্ঞতা লব্ধ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ভার্চুয়ালি বসে আলোচনা করেন, সেখান থেকে অভাবনীয় সব সর্বাধুনিক চিকিৎসা কৌশল বেরিয়ে আসে। তারেক রহমান দম্পতির অবিশ্রাম চেষ্টায় সেটাই হচ্ছে বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে।

অভিজ্ঞান হলো— অতীতে পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে তাকে বিদেশে প্রেরণ করা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট করে সুস্থতা ফিরে পান ওবায়দুল কাদের। জাতীয় পার্টির নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ মৃত্যুর দশায় পতিত হয়েছিলেন। তিনিও থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। আরও অনেকেরই জীবনমৃত্যুর মাঝামাঝি পরিস্থিতিতে উন্নততর চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াও সুস্থ হবেন এমন আশায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পুত্র তারেক রহমান।

ওয়াকিফহাল মহল ও সংশ্লিষ্টদের এই মত যে, ধরা যাক— এ মুহূর্তে বিলাত থেকে দীর্ঘ ২০ ঘণ্টার জার্নি শেষে তারেক রহমান তার মায়ের কাছে পৌঁছালেন। পথে লাখ লাখ মানুষের ভিড় জমায়েত। ঊর্মিমুখর জনস্রোতের তোড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সবকিছু পেরিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে মায়ের শিয়রে গেলেন। কাঁচের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখলেন বিছানায় চোখ মুদ্রিত নিস্তব্ধ শুয়ে আছেন মা। ঢাউস হেড লাইনে সংবাদ শিরোনাম হলেন। মানুষ হাসলেন, কাঁদলেন, আপ্লুত হলেন-আবেগে ভাসলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা বহুমাত্রায় রিপোর্ট প্রতিবেদন করলেন। কেউ কেউ লাইভ করলেন। টেলিভিশনের টিআরপি বাড়ল। টকশোতে কথার ফুলঝুরি ছুটল। মানুষের মুখে মুখে ফিরল খবরের শিরোনাম। মা ও পুত্রের অকৃত্রিম ভালোবাসার হৃদয় তোলপাড় করা তীব্র আবেগঘন দৃশ্যপটের বড় চিত্রমালায় মহামিলন দেখলেন। সামাজিক মাধ্যমে ভেসে গেল এই দৃশ্য-খবরের বন্যায়। তারপরে আনন্দের আতিশয্যে দুই লাইন আবেগ মথিত কবিতা-গীতি রচিত হলো। সম্পাদকীয় হলো, উপসম্পাদকীয় হলো। কলাম লেখকরা স্তুতি বয়ান করলেন। তারপর রিপোর্ট-প্রতিবেদন-লেখাজোখা-মুসাবিদা শেষ হলো। হাসি-আনন্দ-কান্না-কবিতার পরিসমাপ্তি ঘটল। একদিন গেল, দুদিন-তিন দিন পেরোল। দ্যান,হোয়াট নেক্সট? অতঃপর কি?

তারপর বলা হলো সেই কথাটিই— দেশে-বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাই হচ্ছে মূল দায়িত্ব-মুখ্য কাজ । তো আবেগে না ভেসে সে দায়িত্ব কি বিদেশে বসে পালন করছেন না তারেক রহমান দম্পত্তি? সেটাই করছেন তারা । আল্লাহ চাহে তো তিনি অচিরেই সেরে উঠবেন । আবারও ফিরবেন জনপরিসরে-জনারণ্যে-তাদের মা হয়ে, অভাগা বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হয়ে ।

মোদ্দাকথা হলো এই যে, দেশে হোক কিংবা বিদেশে হোক— বেগম খালেদা জিয়ার এ মুহূর্তে সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রয়োগের কোনো গত্যন্তর নেই। তাকে বিদেশে পাঠানোর মতো স্বাস্থ্যগত উত্তরণ ঘটানো। বাস্তবতা হলো— সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার কাজটিই তারেক রহমান দম্পতি লন্ডনে বসেই সুনিবিড়-সুনিপুণভাবে পুরোদমে তদারকি করছেন। ফলত তারেক রহমানের যখন দেশে আসার উপযুক্ত সময় হবে তিনি আসবেন। তারেক রহমান আবেগের বশবর্তী হয়ে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে যদি আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে চলে আসেন, তাহলে তা হিতকর হতে পারে এমন চিন্তা অবান্তর ।

তারেক রহমান তার দেশে আসা প্রসঙ্গে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন— কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’

এই কথাটি নিয়ে অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তারা সবাই অনুমানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটার একটি মানবিক ব্যাখ্যা হতে পারে তার দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে। ভক্ত-সমর্থকরা বেগম জিয়াকে ভালোবাসেন আবেগ দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। ভক্ত-সমর্থক হিসাবে সাধারণ জনগণের আবেগ-ভালোবাসা অবারিত। আর তারেক রহমান মাকে ভালোবাসেন নিঁখাদ অকৃত্রিম হৃদয়ে। মা তার কাছে এক পৃথিবী সমান। জগতের সবকিছুর ঊর্ধ্বে। একজন সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য দায়বদ্ধতা সর্বোচ্চ। দায়িত্ব হিসাবেই কেবল নয় তার সবটুকু ভালোবাসা, প্রাণের গহিন থেকে তার কর্তব্য সুনিপুণভাবে পালন করছেন পুত্র তারেক রহমান। সুতরাং আবেগের বসে একক সিদ্ধান্তে দেশে মাকে দেখতে আসার চাইতে এ ক্ষেত্রে দল এবং পরিবারের সিদ্ধান্তকেও প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন।

তাহলে কখন আসবেন বাংলাদেশের প্রাণভোমরা তারেক রহমান?- এমন কৌতূহল-এই প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সুনিশ্চিত করা। তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা । তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান যেহেতু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন, চিকিৎসা তদারকি করছেন । সুতরাং যখনই উপযুক্ত সময় উপনীত হবে, তখনই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নিজের পরিবার এবং দলের সঙ্গে কথা বলে- অগ্র পশ্চাৎ পর্যালোচনা-আলোচনা করে সুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই দেশে আসবেন।
লেখক: আনোয়ার আলদীন
চেয়ারম্যান, বাসস
যুগ্ম সম্পাদক
দৈনিক ইত্তেফাক।

11/05/2025

Address

8914 168th Street
Queens, NY
11432

Telephone

+16467445934

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Weekly SadaKalo posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share