Bird of Passage

Bird of Passage We live like a bird of Passage. Here nothing is constant, everything is changeable and relativity.

The rain didn’t deter the journey—it baptized it.Each drop marks the distance between where you were and where you’re be...
07/31/2025

The rain didn’t deter the journey—it baptized it.
Each drop marks the distance between where you were and where you’re becoming.”

Viewing Manhattan From Queens Boro on 7 train
07/30/2025

Viewing Manhattan From Queens Boro on 7 train

“The street is a symphony of strangers, each step a beat, each voice a note.”
07/29/2025

“The street is a symphony of strangers, each step a beat, each voice a note.”

“The street held its breath, echoing with memories only silence could recall.”
07/27/2025

“The street held its breath, echoing with memories only silence could recall.”

”খেয়ালি স্বপ্নের বুনন”অদ্ভুত অনুভুতি খেলে গেল হৃদয়ে, আজ ঊষাকালে। ভোরের শীতল আবহাওয়ায়উষ্ম ছোঁয়ায় জড়ালো আমায়ভালোবাসার চাঁদ...
07/04/2024

”খেয়ালি স্বপ্নের বুনন”

অদ্ভুত অনুভুতি খেলে গেল
হৃদয়ে, আজ ঊষাকালে।
ভোরের শীতল আবহাওয়ায়
উষ্ম ছোঁয়ায় জড়ালো আমায়
ভালোবাসার চাঁদরে ।

না বলা কথা, মনের ব্যাকুলতা যত
নিঃশব্দে, হৃদ স্পন্দনে ধ্বনিত তত
সশব্দের চেয়ে স্পষ্ট সে ধ্বনি,
নিরবতার লহরিতে মুখরিত।
হৃদয়ে, হৃদয়ের মিলন, বুঝি, হয় এমন!
নিঃশব্দে, হৃদয় রাজ্যে হয়, আলাপন।
শিহরিত হৃদয়ে বাড়ে তৃষ্ণার ক্ষণ।

কি বলি তারে? টেলিপ্যাথি?
নাকি হৃদয়ের ক্ষরণ?
না শুধু্ই সে কল্পনা, জল্পনা যত এলোপাথারি
মনের খেয়ালি স্বপ্নের বুনন।

পলাশ দত্ত
ঢাকা, এপ্রিল ০১, ২০২৩

Check out this Website designed by Palash Dutta.

সুতো কাটা ঘুড়ি(পলাশ দত্তহংকং, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮) খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, নব্বই এর দশকেও পত্রমিতালির বেশ প্রচলন ছিলো। ...
03/12/2024

সুতো কাটা ঘুড়ি
(পলাশ দত্ত
হংকং, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮)

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, নব্বই এর দশকেও পত্রমিতালির বেশ প্রচলন ছিলো। দুই অপরিচিত পত্রমিতা পত্রের মাধ্যমে মনের না বলা কথা ভাষায় রুপ দিতো । একাবিংশ শতাব্দির শুরুতেই পত্র লেখন যাদুঘরে জায়গা করে নিয়েছে। এখন আর কেউ মনের কথা কলমের কালি দিয়ে পরম যতনে কাগজের বুকে লেখে না। মোবাইলের স্ক্রিনে খুদে বার্তা লিখে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে Messenger, WhatsApp, Viber, Imo, Duo, skype ইত্যাদির মাধ্যমে। বন্ধু খোঁজে Facebook, Tweeter এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখানে অনেক পরিচিতের ভিড়ে অপরিচিত বন্ধুর সংখ্যা নেহায়েৎ কম থাকে না । ধ্রুব আর সহেলী এমনই অপরিচিত দুই জন। ফেসবুকের এক ভুল ক্লিকের ফলে তাদের যোগাযোগ। তারা একে অপরকে দেখেনি, কথা শোনেনি, বাস্তবে তাদের পরিচয় সত্য কিনা সেটা নিয়েও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ম্যাসেঞ্জারে বার্তা আদান প্রদানে একে অপর কে জানা, মনের অভিব্যক্তি ভাগাভাগির মাধ্যমে তারা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। তবে পত্রমিতা না তারা ফেসবুক বন্ধু । তারা একে অপরের ভাষা না মেলা কথার নিশ্চিন্তে ভাষায় রুপ দেওয়ার মাধ্যম মাত্র।
সহেলী অভ্যাসবসত নিজের উপলব্ধি খুব সহজ সরল ও অল্প কথায় প্রকাশ করে, স্ট্যাটাস দেয়। কমেন্টস গুলো দেখে, খুব কম কমেন্টসের প্রতিউত্তর দেয়। ধ্রুব কখনো তার কোন পোস্ট বা শেয়ারে লাইক দেই না, কমেন্টস ও করে না। তাদের যোগাযোগ হয় Messenger-এ। আজ বেশ কিছুদিন হলো ধ্রুবকে অনলাইনে দেখা যায় না। একসময় ছিলো সহেলী যখনই ফেসবুকে লগিং করতো তখনই ধ্রুবকে অনলাইনে পেতো। সহেলীর যে কয়েক জন ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে তার মধ্যে ধ্রুবের সাথেই তার বেশি কথা হয়েছে। সে তার প্রায় সব কথাই ধ্রুবর সাথে শেয়ার করে। কেন যেন তাকে তার বেশ বিশ্বাস হয়, ধ্রুবের সাথে চ্যাট করতে তার ভালো লাগে। অথচ ধ্রুব তার পূর্ব পরিচিত নয় । একবার Suggested Friend সারিতে থাকা ধ্রুবের ID তে ভুলবসত সহেলীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে যায় । ধ্রুব সেটা একসেপ্ট করে । এরপর মাঝে মাঝে সৌজন্য বিনিময় হয়। একটু আধটু কথা হয়। ধ্রুব বেশ হেঁয়ালি রেখে কথা বলে। ব্যাক্তিগত ব্যপারে কখনো সে কিছুই জিজ্ঞাসা করে না। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে ধ্রুবর অনাগ্রহ বিষয়টাই সহেলীর বেশ ভালো লাগে তাই যে সব কথা পরিচিত জনের কাছে শেয়ার করতে পারতো না সে সব কথা সে ধ্রুবর কাছে শেয়ার করতো। এই কয়েক দিনে তার জীবনে বেশকিছু ঘটনা ঘটে গেছে। সেসব কথা সে ধ্রুবকে বলতে চায় । শেয়ার করতে চায় তার জীবনের অতি যতনে রাখা উপলব্ধির কথা । অথচ ধ্রুবের কোন সাড়াশব্দ নেই।
ইদানিং সহেলীর মন ভালো নেই। সদা হাসি লেগে থাকতো যে মুখে সেখানে এখন বিষন্নতার ছায়া । সহেলী তার বিষন্নতা উপভোগ করে গান শুনে । আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সে জানালার পাশে বসে আনমনে গান শুনছে, রবীন্দ্রসংগীত;
আমি আশায় আশায় থাকি।
আমার তৃষিত-আকুল আঁখি॥
ঘুমে-জাগরণে-মেশা প্রাণে স্বপনের নেশা—
দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥

মোবাইলে পর পর কয়েকটা ম্যাসেজ টোন বেজে গেলো। সহেলী সেদিকে খেয়াল করলো না । সে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। এ ভাবে কাটলো বেশ কিছুক্ষণ । মোবাইলে পুনরায় ম্যাসেজ এসেছে সহেলী এবারও মোবাইলটা হাতে তুললো না। আরো একবার রিংটোন বেজে উঠলো । ঊর্মির কল দেখে সে এবার ফোনকলটা রিসিভ করলো । ফোনকল না রিসিভ করলে ঊর্মি একের পর এক ফোনকল করতেই থাকবে । ফোনকল রিসিভ করতেই ঊর্মি বলতে লাগলো কি রে কোথায় মরেছিলি? এতো ম্যাসেজ দিচ্ছি তবু কোন সাড়া নেই। সহেলী বললো মোবাইলটা সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝতে পারিনি। আচ্ছা ঠিক আছে, এবার বল আজ কখন বের হবি? আজকে? কেনো রে? আজ কি সেটাও ভুলে গেছিস? এখনো কি বিরহ বিলাস চলছে? আরে না, কার জন্য বিরহ সাগর মন্থন করে বিরহ বিলাসী হবো? কি জানি, তোর মতিগতি আজকাল বোঝা মুশকিল । এখন বল আসবি ক্যাম্পাসে? না রে, এই ভিড়ে আজ আর বের হবো না। ঊর্মির বললো, তোর যা ইচ্ছে। ঊর্মি জানে সহেলী কারোর জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সে কে সেটা সে জানে না। তাই সে কোন জোর করলো না। কিছু কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো। সহেলী unread message ওপেন করতেই দেখলো ধ্রুবর ম্যাসেজ। কিছুক্ষন আগে দিয়েছে। সহেলী দেখলো এখনো ধ্রুব অনলাইনেই আছে। সহেলীর মুখে যেন হাসি খেলে গেল; সে ম্যাসেজ ওপেন করে পড়তে লাগলো, কোন পরিবর্তন নেই সেই রকম ধোঁয়াসায় ভরা বাক্য ;
ধ্রুব : বসন্তের রঙে মুছে যাক সকল বিবর্ণ, ফিঁকে রঙ । সপ্তরঙের ডিঙা থেকে আপনার পছন্দের রঙে রঙিন হোক এবারের বসন্ত, আপনার জীবন,মন, প্রাণ। বসন্তে বাসন্তি শুভেচ্ছা ।
সহেলী : ধন্যবাদ
ধ্রুব : অভিনন্দন।
সহেলী : বাব্বা!!! এতোদিন পরে? কোথা থেকে? কোকিলের মতো বসন্তে গুঞ্জন, কী ব্যাপার?
ধ্রুব : বসন্তে রক্ত পলাশের মত মনের বনে আগুনের দাবানল আর লাগলো কই বলেন? তাই বলে তো বসন্তকে এভাবে এড়িয়ে চলা চলেনা। সেজন্য বসন্তের রোদ থেকে মনে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ করার আশায়, শীত নিদ্রা ভেঙ্গে সবে বের হয়েছি।
সহেলী : বেশ বুলি ফুটেছে তো আপনার? রহস্যটা কী?
ধ্রুব : রহস্য তো আছেই, সেটা ক্রমশঃ প্রকাশ্য।
সহেলী : আপনি বড় ধোঁয়াসায় রাখেন । এই ভাবি বুঝতে পারছি পরক্ষণে সব ঘেঁটে ’ঘ’ করে দেন। নতুন করে ভাবতে হয়।
ধ্রুব : তাই নাকি?
সহেলী : হুম।
ধ্রুব : যাক তাও তো ধোঁয়াসা বলেছেন, কলাধারী, বলেন নি।
সহেলী : হি- হি- হি-, কলাধারী কেউ বলেছে নাকি? বিশেষ কেউ?
ধ্রুব : বিশেষ তো সবাই ।
সহেলী : তাই বুঝি ! সবাই কি আপনাকে সমান আবেগে বাঁধে?
ধ্রুব : আবেগ কী বুঝিনা তবে মাঝে মাঝে কারো হৃদয়ের অস্থির দমকা হাওয়ার ঝাপ্টা অনুভব করি।
সহেলী : শুনি, কে সে?
ধ্রুব : আপনি
সহেলী : মানে কী?
ধ্রুব : হা হা হা হা। কি ভয় পেয়ে গেলেন?
সহেলী : না ভয় পাবো কেনো? ভালোবাসায় ভয় লাগে না, ভালোবাসার স্বপ্নভঙ্গে ভয় লাগে।
ধ্রুব : তাই বুঝি,
সহেলী :আসলে আমি সুখী নয়।
ধ্রুব : সিরিয়াসলি? আচ্ছা, কেনো বলুন তো?
সহেলী : ব্যাপারটা পার্সোনাল।
ধ্রুব : তাহলে থাক।
সহেলী : ভালোবাসি একজনকে।
ধ্রুব : তাই? বেশ তো। ভালোবাসায় একটু আধটু অভিমান হয়-ই। আর এ অভিমানই নাকি ভালোবাসার সুখের চাবি?
সহেলী : সব অভিমান সুখের চাবি হয় না কিছু কিছু অভিমান দুঃখের বন্যা ও বয়ে আনে।
ধ্রুব : তাই বুঝি?
সহেলী : আমার এমনই মনে হয়, কিছু ভালোলাগা স্মৃতি দুঃখের কাঁটা মনে হয়, শুধুই বিদ্ধ করে। কিছু জমানো স্মৃতি, ভাষা না পাওয়া কথা শেয়ার করে হালকা হতে চায় মন। কিন্তু সবার সাথে শেয়ার করা যায় না তাই ভাষা মেলে না ।
ধ্রুব : আমি কি তার যোগ্য ?
সহেলী : হুম, তাই বলতে চায়, যদি আপনার সময় হয়?
ধ্রুব : আমি শুনবো আপনার কথা ।
সহেলী :
বছর তিনেক আগে ডিপার্টামেনটাল রি-ইউনিয়নে ছিপছিপে গড়নের, সদাহাস্যউজ্জ্বল, আত্মসুখে ভরপুর এক যুবককে দেখে আমার সমস্ত পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। জীবনের সমস্ত সমীকরণ এলোমেলো করে এক বিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছিলো। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরেছিলাম সেই নির্মল, অনাবিল সুখবোধের কাছে। তাকে দেখে এই প্রথম মনে হলো, সুখ নিজে ধরা দেয় না, সুখী হতে জানতে হয়। ছোট ছোট মুহুর্তগুলো সময়ের সুতায় গেঁথে জীবনের দাওয়ায় সুখের সুবাতাস অনুভব করতে সবাই পারে না। ছেলেটি যেন সে সুখের সওদাগর তাই তো সে সহজেই বয়ে যাওয়া বাতাসে আনন্দ বিলিয়ে চলেছে। সে ছিলো তার বন্ধুদের সাথে । বন্ধুদের আড্ডায় সবার মধ্যমনি হয়ে। আমি দূর থেকে তাকে দেখে চলেছি । ঊর্মির ডাকে আমার ঘোর কাটলো। ঊর্মি আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী, ঊর্মি আমাকে ডাকছে আর বলছে এতোক্ষন কফি খাবো কফি খাবো বলে পাগল করে দিচ্ছিল, যেন বড় কফিখোর হয়েছিস। এখন আবার কী হলো? ডাকতে ডাকতে আমার গলার বারোটা বেজে তেরোটার দিকে হেলতে চললো তবু তোর কোন সাড়া নেই! আচ্ছা তোর হয়েছেটা কী, হুম? তোর হালচাল সুবিধার ঠেকছেনা। আমি বললাম, নেশা। ঊর্মি বললো কিসের নেশা রে? আমি বললাম কফির । কফি তো আমার হাতে । আমি তো তাই বলছি । কফির কাপটা দিলে তারপর না খেতে পারবো। আমি বড় কষ্টে নিজেকে ফিরে পেয়েছিলাম তাই ধরা পড়ার আগে সেখান থেকে সরে গিয়ে ঊর্মির সাথে বসে কফি খেতে লাগলাম। কিন্তু সরাতে পারলাম না সেই ভালোলাগা মুহুর্তকে, সেই মানুষকে, যে মনের কোনে বিনা অনুমতিতে আস্তানা গাড়লো।
ধ্রুব : বেশ রোমান্টিক তো আপনাদের প্রথম সাক্ষাৎ!
সহেলী : সাক্ষাৎ কোথায় ওকে শুধু আমিই দেখছিলাম । সে তো মেতে ছিলো বন্ধুদের সাথে। আমাকে তো সে দেখেই নি।
ধ্রুব : হুম, তারপর আর দেখা হয়নি তার সাথে?
সহেলী : তারপর তাকে ক্যাম্পাসে দেখেছি বেশ কয়েকবার। আগেও সে ক্যাম্পাসে এসেছে তবে আমি তাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু ঐ দিনের পর তাকে দেখে দূর থেকে বিমোহিতের মতো চেয়ে থেকেছি, মনে স্বপ্ন বুনেছি, তবে কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি। একদিন হঠাৎ সে আমার সামনে এসে বললো, আপনাকে দেখে মনে পড়লো, আপনার কিছু জিনিস আছে আমার কাছে। সেগুলো দেবো বলে আপনাকে দেখেই এগিয়ে এলাম । এভাবে হঠাৎ সাক্ষাতে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে সামলে বললাম কী সেটা? আপনার কাছে আমার জিনিস আছে মানে? আমার কোন কিছু তো আপনার কাছে থাকার কথা না । যতদূর মনে পড়ে এর আগে কখনো আপনার সাথে আমার কথা হয়নি। ও বললো, তা ঠিক, কথা হয়নি তবে আমি আপনাকে দেখেছি, রি-ইউনিয়নের দিন, আপনার বান্ধবীর সাথে ছিলেন বোধ হয়। তখন আপনাদের কিছু ছবি তুলেছিলাম। মুহুর্তকে ক্যামেরায় বন্ধি করা আমার নেশা। ছবিগুলো আপনাকে দিবো বলে আপনাকে দেখে এগিয়ে আশা, অন্য কিছু নয়। আগামীকাল বিকালে একটু সময় হবে আপনার? বললাম, কেনো বলুন তো? ও বললো, আপনার ছবিগুলো দিবো, আজ আমার সাথে নেই তো তাই। ও, ঠিক আছে, আমি বিকাল ৫টায় লাইব্রেরির সামনে থাকবো । আচ্ছা ঠিক আছে, বলে ছেলেটি চলে গেলো। তার পথের দিকে চেয়ে রইলাম, তার নামও জানা হলো না। এভাবে তার সাথে কথা হবে স্বপ্নেও ভাবেনি কোনোদিন।

তার সাথে দেখা হবে, কিছু কথা শুনবো তার, বলবো আমার কিছু কথা। মন দুলতে লাগলো প্রণয়ের দোলায়, অপেক্ষায় প্রহর যেন কাটে না আমার। পরদিন নির্ধারিত সময়ে লাইব্রেরির সামনে গিয়ে দেখি তার আগেই ছেলেটি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাকে দেখে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছিল। আমি মনে মনে ভাবলাম আমার সাথে কথা বলার জন্যই ছেলেটির এ অস্থিরতা। তার সাথে কথা বলার জন্য আমিও কম বিচলিত নই। আমাকে দেখতে পেয়ে ছবিগুলো দিয়ে বললো আমি চলি পরে আবার কথা হবে, দেখা হবে যবে। মনে ভাবলাম, আশ্চর্য লোক তো! কিছু না বলে এভাবে পালানার মানে হয়? বেশ অভিমান হয়েছিলো আমার।
ধ্রুব : সেই অভিমান এখনো চলছে বুঝি?

সহেলী :না, তবে তাঁর উপর বারবার অভিমান করেছি, আমাকে এড়িয়ে চলতো বলে। বকাঝকা করে নিরবে অশ্রু ফেলেছি।
ধ্রুব : আচ্ছা একতরফা ভালোলাগা বুঝি।
সহেলী : প্রথমটা আমারও এমনই মনে হতো। কিন্তু না সেও আমাকে ভালোবাসতো অনেক আগে থেকে আমাকে ও পছন্দ করতো তবে প্রকাশ করতো না। আমাকে দূর থেকে দেখতে পেলেই সে খুশি ছিলো। পরে আমি ব্যপারটা জেনেছি, একদিন ইচ্ছে করে ওর ডায়েরি রেখে চলে গিয়েছিলো।
ধ্রুব : আপনি অন্যের ডায়ারি পড়লেন?
সহেলী : অন্যের ডায়ারি কোথায়, ওখানে তো আমার কথাই লেখা ছিলো। ওর ভালোলাগার অনুভুতি ছিলো। আর ওকে তো আমার থেকে আলাদা ভাবিনি কখনো। জানেন, ডায়েরিটা এখনো আমার কাছেই আছে ও ফেরৎ চাইনি কখনো।
ধ্রুব : ভালোই তো । তারপর?
সহেলী : এরপর সময়ের পথে পায়ে পায়ে হেঁটেছি কিছু পথ । রাত জেগে স্বপ্ন বুনেছি, হৃদয়ে কোনে বেঁধেছি আশার ছোট নীড়। এর সমস্তটাই আমার বুনা ও শুধুই পাশে থেকেছে। নাটায়ের সুতো ছেড়ে উড়তে দিয়েছে আমার স্বপ্ন ঘুড়ি। বাস্তবতার ঘূর্ণিঝড়ে সুতো কেটে আমার স্বপ্ন ঘুড়ি আজ দিশাহারা । চেষ্টা করে চলেছি শেষ রক্ষার । রক্ষা হবে কি জানি না।
- আচ্ছা, ওর ফোন এসেছে, পরে কথা হবে।
-
ধ্রুব আর কোন সাড়া দিলো না, সুতো কাটা, দিশেহারা স্বপ্ন ঘুড়ির মর্ম যন্ত্রনা যে বোঝে। তার বারবার মনে হতে লাগলো -প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে।

বাংলা লোক সাহিত্যে 'বারোমাসি' ও তার বিকাশ।(পলাশ দত্তহংকং, ২১ জুন ২০২১) মানব মনের সহজ ও সম্পূর্ণ প্রকাশ গানে। কথার মানুষ ...
03/01/2024

বাংলা লোক সাহিত্যে 'বারোমাসি' ও তার বিকাশ।
(পলাশ দত্ত
হংকং, ২১ জুন ২০২১)

মানব মনের সহজ ও সম্পূর্ণ প্রকাশ গানে। কথার মানুষ খণ্ডিত ও সীমিত। গানের মানুষ অখণ্ড ও সমগ্র। সৃষ্টির আদি কাল থেকেই পৃথিবীতে বিদ্যমান সুর, তাল ও ছন্দে সব দেশের মানুষই তাদের সুখ-দুঃখের সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশ ঘটিয়েছে গানে। সেই কৃষি সভ্যতার, নিসর্গলালনার যুগে প্রকৃতি রাজ্যের নিত্য নতুন বৈচিত্র্য ও ঐশ্বর্য, মনে-প্রাণে যোগাতো নব নব ভাব, সুর ও ছন্দ। প্রকৃতিঘেঁষা মানুষের জীবনে নিত্য উৎসব, বারো মাসে তেরো পার্বণের রটা-ঘটা ছিল বিপুল। আর নৃত্য ও গানই ছিল তার প্রকাশের অব্যর্থ মাধ্যম। প্রাণের মূর্তি ও ফুর্তি যেখানে যত অকপট ও অপর্যাপ্ত, সেখানে তার প্রকাশও তত গীতিময়। তাই লোকায়ত জীবনে কথার চেয়ে গানই মুখ্য। লোক-সাহিত্যে সর্বত্রই গীতি – গম্ভীরা, গাজন, ভাসান গান, ভাদুর গান, জারি, কবিগান, বাউল গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, ঘাটু গান, প্রভৃতি। এসকল লোক-সাহিত্যের প্রবাহমান ধারাকে আকর্ষণীয় করেছে ; ভাবে, ভাষায়, ছন্দে ও সুরের পরম সত্য ও সার্থক, প্রকৃতি ও মানুষে মেশামিশি হয়ে মানবমনের সঙ্গীত "বারোমাসি"।
বারোমাসি বলতে বোঝায় ছয় ঋতু বা বার মাসের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে মানব-মানবীর বিচিত্র ও বিশিষ্ট মানস স্ফুতি; বিরহাতুর নারীর মানসিক অবস্থা, কখনও প্রাকৃতিক, কখনও সাংসারিক পটভূমিতেে করুণ মধুররূপে বর্ণিত গান বারোমাসী। এ গানগুলো মনসা মঙ্গল, চৈতন্য ভগবৎ, চণ্ডীমঙ্গল, ময়মনসিংহ গীতিকা ইত্যাদি বাংলা লোক সাহিত্য ছাড়াও গুজরাটি, রাজস্থানি, ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, হিন্দী সাহিত্যেও উজ্জ্বল হয়ে আছে [South Asian Folklore] ।
বারোমাসি গীতি বলতে সবসময়ই বারো মাস বা ছয়টি ঋতুর পরিচয়ই যে থাকে, তা নয়। নায়ক-নায়িকার বিরহ-মিলনজনিত চিন্তানুভুতিই এর মর্মকথা। এর বিরহ বা মিলন কোথাও বারো মাস কোথাও আট মাস, কখনো বা ছয় মাস বা চার মাস কালব্যাপী হয়। যেমন, ষষ্ঠীবর দত্তের মনসা মঙ্গল কাব্যে নায়িকা বেহুলার অষ্টমাসিঃ
'বৈশাখ মাসেত মাগো, লখাইয়ে বিয়া করে।
কাল রাত্রি খাইল নাগে লোহার বাসরে।।'
[বেহুলার বারোমাসি, মনসামঙ্গল কাব্য]
বৈশাখ মাসের বিবাহের রাত্রি থেকে অগ্রহায়ণ মাস - এই আটমাসব্যাপী বেহুলার জীবনের একটানা অসহ্য দুঃখ-যন্ত্রণা ও অশ্রুপাতের চিত্রই তার অষ্টমাসি বলে পরিচিত। বর্ণনা এখানে আট মাসের হলেও বারোমাসি গীতি বলেই পরিচিত। ঠিক একইভাবে, ময়মনসিংহ গীতিকায় মালুয়ার অষ্টমাসি, বড়ুচণ্ডীদাসের "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" কাব্যে রাধিকার বিরহ চতুর্মাসি, ময়মনসিংহ গীতিকায় লীলাবতীর ষান্মাষিকী গীতি সবই বারোমাসি গীতিরই সগোত্র, এই নামেই এদের সাধারণ পরিচয়। সহজ কথায়, বার মাস বা ছয় ঋতুর কয়েকটি মাস বা ঋতুর চিত্র চরিত্র অবলম্বনে মানব-মানবীয় আনন্দ-অশ্রু, আবেগ-উচ্ছ্বাসময় গীতিই বারোমাসি।
বারোমাসি সম্ভবত লোক ঐতিহ্য থেকেই লোক সাহিত্যে স্থান পায়। এসব গান গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের বৎসরব্যাপী জীবনালেখ্য যা মানুষের মুখে মুখে প্রবাহমান ছিল এবং এগুলো বেশ দীর্ঘ হওয়ায় তা মনে রাখার জন্য তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তির প্রয়োজন ছিল। সুতরাং, তা সংগ্রহে না রাখলে কালের গভীরে হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সংগ্রহের অভাবে বারোমাসি ভান্ডারের এক বিশাল অংশ অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Dusan Zbavitel বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যের বারোমাসি সংগ্রহ করেন। বাংলা, গুজরাটি ও রাজস্থানি সাহিত্যে বারোমাসির ২টি প্রাচীন রূপ পাওয়া যায়। প্রাচীন বারোমাসির নমুনার একটি বাংলা সাহিত্যের ১৪/১৫ শতকে প্রাপ্ত বড়ুচণ্ডীদাস রচিত "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" এর রাধার চৌমাসি, অপরটি রাজস্থানি ভাষায় জৈন লেখন জিনাপদ্মভা সুরি (১৪ শতক) এর রচিত চৌমাসি (Charlotte Vaudeville, Delhi, 1986)। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের শূন্যপুরাণে (রামাই পন্ডিত, খৃঃ ১০-১১শ শতাব্দী) রচিত শিবের গানে পঞ্চমাসি কৃষিভিত্তিক বর্ণনা পাওয়া যায় (ভারতীয় সাহিত্যে বারমাসী/বারমাস্যা - শিব প্রসাদ ভাট্টচার্য, পৃঃ ১১৪)।
এ বারোমাসি গীতিগুলো এদেশের নিজস্ব সম্পদ বলে মনে হয়। ইউরোপীয় তথা অন্য পাশ্চাত্য সঙ্গীতে মাস হিসেবে নারীর এইরূপ বিরহ-বর্ণনা পাওয়া যায় না। অনেক স্থানেই দেখা যায় বারোমাসি গীতিকার “terminus antequem’ বা আগে আসে। কাজেই বারোমাসিগুলো গীতিকার চেয়ে প্রচীন [ড. আশরাফ সিদ্দিকী, লোক-সাহিত্য, (২য় খণ্ড) ১৯৯৫]। বারোমাসিগুলো যে অত্যন্ত প্রাচীন সে সম্বন্ধে মতভেদ নেই। ড. দীনেশ চন্দ্র সেন বলেনঃ “The earliest poetic tradition of the country was that a Bengali poem not be complete without a baromasi an account of twelve months… We have found baromasis even from the days of aphorisms of dak and khana, composed probably in the ninth century.” [Sen. Eastern Bengal Ballads: Mymensingh (Calcutta, 1923), ii-iii]।
এই বারোমাসিগুলো আমাদের গীতিকাকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে। গানগুলো অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ বলে সাধারণত লোকগীতির মতো এর ব্যবহার হয় না। বারোমাসির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে অধ্যাপক Dusan Zbavitel লিখেছেনঃ "the baomasi originated in folk-poetry, that owing to its intrinsic attractiveness and its great popularity in Bengal, it found a place again and again in the classical literature, being, of course, always reshaped and remoulded by various poets according to their poetic aims, imagination and creative ability; at the same time, however, it followed its own course of development in folk-poetry itself, being influenced in its turn those forms and types creative in the sphere of art literature especially in Vaishnava poetry. [Dr. Dusan Zbavitel, Calcutta, 1962]
লোকগীতির অন্যতম মুখ্য বৈশিষ্ট্য এর রুপক বা সঙ্কেতের ব্যবহার। বিষয় ভেদে বারোমাসিগুলোকে কৃষি সম্প্রদায়ের ব্যবহারিক বা ritual, আখ্যানের কোনো অংশে বিরহিনী নায়িকার উক্তি নিতান্তই বিরহিনীর উক্তি বা প্রেমমূলক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়। গীতিকার নারীরাও প্রকৃতি প্রেমিক-প্রকৃতিরই যেন অংশ। কৃষিনির্ভর আর্যেতর সমাজ বলতে যেহেতু প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা 'বঙ্গ' জাতি বোঝাতো সে কারণে বারোমাসির আধিক্য এখানে স্বাভাবিক ছিল বলেই মনে করা হয়। ধারাবাহিক প্রবন্ধ The Development of the baromasi in the Bengali Literature Folklore, III Calcutta, 1962, pp-61-175, 201-216, 254 268]-তে Dr. Dusan Zbavitel স্পষ্টভাবেই দেখিয়েছেন বারোমাসিগুলো ভারতের পূর্বাঞ্চলে (বঙ্গ) বেশি পাওয়া যায় । বিচিত্র এ বারোমাসিকে বৃহৎ অর্থে মৌখিক ও লিখিত (সাহিত্যে ব্যবহৃত) - দুই শ্রেনীতে ভাগ করা যায়। Dr. Dusan Zbavitel লিখিত বা সাহিত্যে প্রাপ্ত বারোমাসিগুলোকে সর্বপ্রথম নিম্মোক্ত পাঁচভাগে ভাগ করেছেনঃ ১. ধর্মীয়ভিত্তিক বারোমাসি, ২. কৃষিভিত্তিক বারোমাসি, ৩. বর্ণনামুলক বারোমাসি, ৪. বিরহ বারোমাসি, ৫. সতিত্ব পরীক্ষার আখ্যানমূলক বারোমাসি। পরবর্তীতে ভাব বা প্রকৃতি অনুসারে বিচিত্র বারোমাসিকে ডক্টর শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য তাঁর "ভারতীয় সাহিত্যে বারমাস্যা" নামকগ্রন্থে নিম্মোক্ত শ্রেণীসমূহে অন্তর্ভূক্ত করেছেন :
ক) আদি বা মৌলিক বারোমাসি: কৃষিত্তিক- বারোমাসিগুলো সাধারণত আদি বা মৌলিক বারোমাসি:
চৈতে থর থর-বৈশাখে ঝড়পাথর
জ্যৈষ্ঠে তারা ফুটে-তবে জানবি বর্ষা বটে।।
পৌষে গরমি, বৈশাখে জাডা।
প্রথম আষাঢ়ে ভরবে গাডা।।
বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়।
সে বৎসর বর্ষা হবে খনায় কয়।।
চৈতে হেরানি, বৈশাখে জাডা।
প্রথমে জ্যৈষ্ঠে ভরবে জাডা
ডাক বলে এই তিন বাণী, আষাঢ় শ্রাবণ নাইকো পানি।।
[ডাক ও খনার বচন]

(খ) মধ্যযুগীয় বা সাহিত্যিক বারোমাসি: কালক্রমে এই কৃষি- বারোমাসি বা আদিপর্বের বারোমাসির নিদর্শন বৈষ্ণব নাথ সাহিত্য, শাক্ত সাহিত্য শৈব সাহিত্যসমূহে লিখিতরূপে দেখা যায়;
বৈশাখে বিষম ঝড় এ হিয়া আকাশে।
কে রাখে এ তরি পতি-কাণ্ডারী বিদেশে।।
জৈষ্ঠে রসাল-রস সবে পান করে ।
বিরস আমার হিয়া পিয়া নাই ঘরে।।
[রাধার বারোমাসি লোচনদাস]
(গ) আধুনিক বারোমাসিঃ এ কালের বারোমাসি, না চাষীর জীবন গান, না সেদিনের গতানুগতিক প্রেমগীত। নায়ক নয়িকার মিলন বা বিরহাত্মক প্রেম-চিত্র একালের বারোমাসিতেও আছে, তবে তেরো পার্বণের ছটা এখানে নগন্যঃ
ভেসে যায় হাওয়ায় হাওয়ায় তারা
তারা বুঝি বৃষ্টিহারা বৈশাখীর ঢেউ, হাওয়া মেঘ
তারা গানের পাখির সুর অগোচর
("নাম রেখেছি কোমল গান্ধার", বিষ্ণু দে)

(ঘ) আখ্যান বা বর্ণনামূলকঃ এ বারোমাসিগুলো নিছক বর্ণনামুলক;
বৈশাখে এ দেশে বড় সুখের সময়।
নানা ফুল গন্ধে মন্দ গন্ধবহ বয়
বসাইয়া রাখিব হৃদয় সরোবরে।
কোকিলের ডাকে কামে নিদাঘে কি করে।।
[বিদ্যার বারোমাসি, অন্নদামঙ্গল- ভারতচন্দ্র]

(ঙ) ব্যক্তিগত দুঃখ-দারিদ্র্যমুলক বারোমাসিঃ এধরনের বারোমাসি কতকগুলি একান্ত ব্যক্তিগত দুঃখ-দারিদ্র্যমুলক বর্ণনা:
প্রথম জৈষ্ঠেতে গেলা গড়াতে পিঞ্জর।
প্রবলা সতিনী মোর হৈল স্বতস্তর।।
ছাগল রাখিতে পত্র আইল যেই দন্ডে।
আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়ে খুল্লনার মুণ্ডে।।
(খূল্লনার বারোমাসি, চণ্ডীমঙ্গল - মুকুন্দরাম।)

বৈশাখে বসন্ত ঋতু খরতর খরা।
তরুতল নাহি মোর করিতে পসরা।।
[ফুল্লরার বারোমাসি, চন্ডীমঙ্গল কাব্য-কবিকঙ্কণ মুকুন্দ রাম]

(চ) পূজা বা অর্ঘ্যমূলক বারোমাসিঃ মানবলীলার পরিবর্তে দৈবলীলা কীর্তনই এ জাতীয় বারোমাসির বৈশিষ্ট্য।
কার্ত্তিক মাসেতে দেখ কার্ত্তিকের পুজা
পরদিমের ঘট আকি বাতির করে সাজা।।
[কমলা- ময়মনসিং গীতিকা]

(ছ) মিলনমূলক বারোমাসিঃ এ ধারা সম্ভোগ-শৃঙ্গাররের চিত্ররুপ যেমন মঙ্গলকাব্যের সুশীলার চিত্র:
ফাল্গুণে ফুটিবে পুষ্প মোর উপবনে।
তথি দোলমঞ্চ আমি করিব রচণে।।
(সুশীলার বারোমাসি -চন্ডীমঙ্গল - মুকুন্দরাম)

(জ) বিরহমূলক বা ভাবাত্মক বারোমাসিঃ প্রাণপ্রিয় এর বিচ্ছেদে মানব-মানবীর মনের ভাবগাঁধা এ বিরহ বারোমাসি।
আষাঢ় মাসেতে নদীর কূলে কূলে পানি।
বাপেরে আনিতে মাধব সাজায় পানসীখানি।।
একেলা ঘরেতে রইল সুনাই যুবতী
সুনাই কান্দিয়া কয় শুন সল্ল্যা দূতী।।
ভাদ্র মাসেতে দূতী গাছে পাকনা তাল।
ভাবিয়া চিন্তিয়া দূতীরে (সুনাইর) গেল যৈবন কাল।।
[সুনাইর বারমাসী, দেওয়ান ভাবনা-ময়মনসিং গীতিকা]
চৈত্র চাতক পক্ষ পিউ পিউ ডাকে।
শুনিঞা জে প্রাণ করে তা কইবো কাকে।।
[বিষ্ণুপ্রিয়ার বারোমাসি, চৈতন্য মঙ্গল জয়ানন্দ]

এছাড়াও এ দেশে নারীর সতীত্বের পরীক্ষার আখ্যানমুলক বারোমাসি অথবা Chastity Test এর আর এক ধরনের বারোমাসি পাওয়া যায়;
এই তো পোষরে মাস দ্বিতীয়ায় উঠে চান।
কেমনে রাখিমু আমি নাগরের পরান।।
যেমনে পারো রাখো পরান আমার কিবা তায়।
পর নারীর আশা সাধু করো কি আশায়।।
[সিলেট জেলার কমলগঞ্জ থানা হতে চৌধুরী গোলাম আকবর কতৃক সংগৃহীত বারোমাসি]

পূর্বভারতীয় মহাকাব্য বা লোক-কাহিনীতে এধরনের বারোমাসি একটা বিশেষত্ব: কাজেই বিচিত্র নয় যে কোন কোন কৃষিজীবী প্রাচীন সমাজে সতীত্বের সাধনা এবং পরীক্ষা একটি বিশেষ ritual হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর পরবর্তী বারোমাসিতে তার স্পষ্ট চিত্র ফুঠে উঠে [আশরাফ সিদ্দিকী, পূর্বাচল, ১৩৮২, কার্তিক, পৃষ্টা ৬৮-৬৯ দ্রষ্টব্য]। মুলত বারোমাসিগুলো স্বতন্ত্র গীতের চেয়ে সাহিত্যের অন্য ধারায় (যেমন গীতিকা, মঙ্গল সাহিত্য) ব্যবহৃত হয়ে সে সাহিত্যের বিরহী নায়িকার স্বামী বিচ্ছেদ সময়ে যাপিত জীবনের বর্ণনা, ভাবে, ভাষায় ও সুরে স্বচিত্র হয়ে উঠেছে।
বারোমাসির অন্তর্নিহিত মানবচরিত্র বলতে বোঝায় নারী চরিত্র। বাংলা লোকসাহিত্যযে নারীপ্রধান। পুরষের বুদ্ধিমত্তা শৌর্য-বীর্যের অপেক্ষা নারীর হৃদয়বত্তা এবং প্রেম ও সেবাধর্মই আবহমানকাল নারীর বৈশিষ্ট্য বরেণ্যে হয়ে এসেছে। এখানকার ফুল্লরা, খুল্লনা, পদ্মাবতী, নাগমতী, বিষ্ণুপ্রিয়া অথবা সীতা বা বেহুলা শাশ্বত ও সনাতন নারীত্বের সার্থক প্রতিভূ। বারোমাসির এ সকল নারী চরিত্র সার্থক উপন্যাসের চরিত্র। বারোমাসিগুলোতে নারীত্বের যে অনবদ্য আলেখ্য মূর্ত হয়ে উঠেছে তা পরম গৌরব ও গরিমার। বারোমাসির সাহিত্যমূল্যও এখানেই। এ সাহিত্যের ভাষা, ছন্দ বা শিল্প সুষমাগত পরিচয়ে আপাতত একান্ত গ্রাম্য প্রকৃতির হলেও নারীচরিত্রের মাধুর্য ও ঐশ্বর্য নারীজীবনের অপূর্ব পতিব্রত্য আত্মবিস্মৃতিমূলক সেবা ও শুশ্রুষা সাহিত্য মূল্য মর্যাদার অন্যতম নিদান।

সার্থক সাহিত্যের অন্তনির্হিত মানব-মানবী চরিত্র জাতীয় জীবনের অতীত ও বর্তমানকে মুখোমুখী করে দেয়, সরিয়ে দেয় তাদের মধ্যকার হাজার বছরের ব্যবধানের পর্দাকে। সমাজ, প্রাচীন সাহিত্যের এ জাতীয় চিরকালীন চরিত্র গুলোকে ভর করে দুই কালের জীবন রুপকে একসুত্রে গেঁথে নেয়, খুঁজে পায় তার জাতীয় চরিত্র, জাতীয় ঐতিহ্যের যাবতীয় রহস্য ও গোপন মন্ত্রকে। বারোমাসির অন্তর্নিহিত বিচিত্র নারীচরিত্র অতীত ও বর্তমান সমাজ ও জীবনের সংযোগ সুত্ররূপে চিরস্মরণীয়। নারী ও পুরুষের বজ্র-দৃঢ় যে প্রেম ইতিহাস রচনা করতো, ঐতিহ্যের ধারা প্রবাহমান বজায় রাখতো তা থেকে আমরা আজ বড় দূরে সরে এসেছি, নকলে মজেছি। লোক সাহিত্যের এ প্রেম থেকে প্রেরণা নিয়ে বাঙ্গালি কি সাহিত্য ডালি সাজাতে পারে না?


গ্রন্থসূত্রঃ
১। Peter Claus, Diamond, Margaret Mills, South Asian Folklore: An Encyclopedia, 2003
২। Charlotte Vaudeville, Barahmasa in indian Literatures,
৩। Dusan Zbavitel, The Development of the baromasi in the Bengali Literature Folklore, III, Calcutta, 19620]
৪। Dr. Dinesh Chandra sen, Eastern Bengal Ballads: Mymensingh (Calcutta, 1923), ii-iii]
৫। ডক্টর শিব প্রসাদ ভাট্টচার্য, ভারতীয় সাহিত্যে বারমাস্যা, কলিকাতা, ১৯৫৯
৬। ডক্টর শ্রীআশুতোষ ভট্টাচার্য্য, বাংলার লোক সাহিত্য, কলিকাতা, ১৯৫৪
৭। ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী, লোক-সাহিত্য, দ্বিতীয় খণ্ড, জুলাই ১৯৯৫
৮। ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী, পূর্বাচল, কার্তিক, ১৩৮২

অমর একুশে ভাষা শহীদদের প্রতি গভির শ্রদ্ধাঞ্জলি
02/20/2024

অমর একুশে ভাষা শহীদদের প্রতি গভির শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ২১ শে ফেব্রুয়ারী, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যারা রাজপথে নেমে ছিলেন, সেইসব ভাষা স.....

"ট্যাগ"একদা এক মরুভূমিতে উটের রেজিষ্ট্রেশন চলছে। রেজিষ্ট্রেশনকারী দল এসে উটের রেজিষ্ট্রেশন করছে এবং উটদের রেজিষ্ট্রেশন ট...
02/15/2024

"ট্যাগ"

একদা এক মরুভূমিতে উটের রেজিষ্ট্রেশন চলছে। রেজিষ্ট্রেশনকারী দল এসে উটের রেজিষ্ট্রেশন করছে এবং উটদের রেজিষ্ট্রেশন টোকেন দিচ্ছে। তা দেখে পাশ থেকে এক খরগোস উল্টা দিকে উদ্ধশ্বাসে দৌড়াদিল। খরগোশ কে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে দৌড়াতে দেখে এক উট তাকে ডেকে বললো
ও ভাই খরগোশ তুমি এভাবে পালাচ্ছো কেন? কি হয়েছে ? কেউ কি তাড়া করেছে না কি?
খরগোশ বললো, ভাই তুমি জানোনা মরুভুমিতে উটের রেজিষ্ট্রেশন চলছে?
উট বললো, হ্যাঁ, জানি তো, সামনে দিকে দিখিয়ে বললো ঐ দেখ রেজিষ্ট্রেশনকারী দল আসছে এখানে।
তা দেখে খরগোশ বললে ওরে বাবা, আমি পালায়।
তখন উট বললো ভাই খরগোশ, হচ্ছে তো উটের রেজিষ্ট্রেশন, তুমি কেনো পালাচ্ছো? তুমি তো উট নও।
ভাই কেন যে পালাচ্ছি তাহলে শোন, " একবার যদি আমার গায়ে উটের রেজিষ্ট্রেশন ট্যাগ পড়ে যায় ? তাহলে আমি যে উট না তা প্রমান করতে করতে আমার সারাজীবন চলে যাবে কিন্তু এর সুরহা হবে না।
তুমি যাও আমি এ তে নেই ।
উট হেসে বললো তুমি একটা পাগল। এর কি কোন মানে হয়?
খরগোস যেতে যেতে বললো "যার কষ্ট সেই বুঝে, অন্যরা মজা লুটে"।

পলাশ দত্ত
ঢাকা , ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

11/24/2023

মেট্রো রেল-১

শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল ষ্টেশনের মতিঝিলগামী প্লাটফর্মের এক নম্বর কার এর ২ নম্বর কোচের সামনে দাঁড়িয়ে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটের রেলের জন্য অপেক্ষা করছি। মিনিট পাঁচেক পরে, পরের ট্রেন প্লাটফর্মে প্রবেশ করা নির্ধারিত সময় দেখাচ্ছে স্টশেনে থাকা ডিসপ্লেতে। এমন সময় এক জন যাত্রী, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পরনে জিন্স গায়ে চেক-চেক শার্ট ইনকরা । প্যান্টের বেল্টের লুপের সাথে তার আইডি কার্ড ঝুলছে। পিঠে নেভিব্লু রঙের ব্যাগ, উদভ্রান্তের মতো আমার পাশে এসে জিজ্ঞাসা করলেন একটা ট্রেন চলে গেলো, না? আমি বললাম, আমি এদিক থেকে কোন ট্রেন চলে যেতে দেখিনি। আমার কথা তার পছন্দ হলো না । তিনি তখন প্লাটফর্মের সময় ও কোচ সংখ্যা প্রদর্শিত ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে বললেন ট্রেন আসতে তো এখনো তিন মিনিট বাকি! তার মানে আগের ট্রেনটা চলে গেছে। তখন পাশের আর এক যাত্রী একই দিকে তাকিয়ে বললেন কত সময় পড়ে আসবে ৬ মিনিট পড়ে? তখন প্রথম যাত্রী বললেন না, না, ঐ দেখেন তিন মিনিট পড়ে তখনও ডিসপ্লেতে কোচ-৬ লেখা দেখাচ্ছে। তাহলে ৬ টা কি? তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্লাটফর্মের হলুদ চিহ্নিত রেখা অতিক্রম করে দরজার কাছে গিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছেন ট্রেন আসছে কিনা। তখন পাশে দাড়িয়ে থাকা আর এক যাত্রী বললেন ভাই, হলুদ দাগের পেছনে সরে আসেন। বারবার মাইকে হলুদ দাগের ঐদিকে যেতে নিষেধ করছে। নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য বলছে। আপনি উঁকি মারলে তো ট্রেন তাড়াতাড়ি আসবে না, ট্রেন তার সময় মতোই আসবে। তিনি এমনটা ভাব করলেন যে আমি জানি আপনাকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। বাঙ্গালি সুযোগ পেলেই জ্ঞান দেয়। তারপরও তিনি হলুদ দাগ পাড় হয়ে দরজার উপর ঝুঁকে ট্রেনের প্রতিক্ষায় চাতকের মতো চেয়ে রইলেন কখন আসবে ট্রেন! পারলে চোখের দৃষ্টিকে শক্তিশালী চৌম্বকে রুপান্তরিত করে, সে শক্তিতে টেনে আনে ট্রেনকে। অবশেষে ট্রেনের দেখা মিললো তার চোখে মুখে তৃপ্তির ঝিলিক দেখা গেলো। এবার সে ট্রেনে ঢুকার মুখে যেখানে যাত্রীদের বের হওয়ার পথের তীর চিহ্ন আঁকা রয়েছে সেখানে এসে দাড়ালেন। কখন গেট খুলবে তার প্রতিক্ষায়। এক যাত্রী শেওড়াপাড়াতে নামার জন্য অপরপ্রান্তে দাড়িয়ে আছে। অবশেষে গেট খুললো। অপরপ্রান্তে দাড়িয়ে থাকা যাত্রী এসে প্রথম যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নেমে গেলো । প্রথম যাত্রী তার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললেন ঐ মিঞা চোখে দেখেন না? সেও তার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো। এদিক থেকে প্রথম যাত্রি উঠে পড়েছে ট্রেনে। তাদের এমনভাব যেন পারলে দুই জনে এক হাত হয়ে যায় ।কিন্তু ট্রেনের গতির সাথে তাদের ক্ষোভ পেরে উঠলো না। এবার ট্রেনে ভেতর সে বলতে লাগলো বাঙ্গালি আর কখনো শুধরাবে হবে না, লোকে মানুক আর না মানুক আপনি মোড়ল। আমি বললাম ঠিক! ঠিক!

পলাশ দত্ত
শেওড়াপাড়া, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

11/21/2023

"সে এক ভূতুরে কান্ড"

আট বছর আগের কথা। আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। আমি সাধারণত রাতের গাড়িতে বাড়ি যেতাম। সেবারও রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছি। বাস যখন আমাদের উপজেলা শহরে আমাকে নামিয়ে দিলো তখন প্রায় রাত ৩ টা বাজে । বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যান চালকদের জিজ্ঞাসা করলাম মূলগ্রাম যাবেন? কেউ সাড়া দিলো না। আমি আবার বললাম কেউ যাবেন মূলগ্রাম বটতলা? তাদের মধ্যে একজন বললেন, “রাস্তার কাজ চলতিছে, গাড়ি চালানো যাবেনানে”। বুঝলাম প্রায় ২ কিলোমিটার পথ একাকী পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। একাকী বাড়ির পথ ধরলাম।
শরৎ ঋতুর সবে আগমন ঘটেছে কিন্তু বর্ষার আমেজ এখনো কাটেনি। চাঁদের আলোয় প্রকৃতি দেখে মনে হলো কিছুক্ষন পূর্বের এক পশলা বৃষ্টি ধুঁয়ে দিয়েছে চারিপাশ।ফুরফুরে বাতাসে তনু-মনে এক অজানা শিহরণ জাগছে। অনেকদিন পর বাড়ি ফিরছি, তাই বুঝি, চিরচেনা মাটির স্পর্শে এহেন শিহরণ! চারিদিক নিরব-নিস্তব্ধ, জনশূন্য পথের দু-ধারে সবুজ ফসলের ক্ষেত, আর একা আমি পথিক চলেছি নিজ মনে, ভালোলাগা শিহরণে। হঠাৎ ১০-১২ হাত দূরে পথের ধারে আমার চোখ আটকে গেলো। আমি যেন দেখলাম, পথের ধারে আলতারাঙ্গা শাড়িতে ঘোমটা দিয়ে এক রমনী বসে আছে। আমায় আসতে দেখে দূর থেকে ঘোমটা খুলে আমায় যেন একবার দেখে আবার ঘোমটায় মুখ লুকালো। মুহুর্তেই আমার চারিপাশ শরীর হীম করা নিরবতায় গা ছমছম করে উঠলো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম, বুঝতে চা্ইলাম বিষয়টা কি? এতো রাতে একা একটা মেয়ে মানুষ এই নির্জন রাস্তায় কি করছে? কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম যে আবার ঘোমটা খুলে আমায় দেখে আবার মুখ লুকালো। আমি বললাম কে ওখানে? কিন্তু মুখ থেকে যেন কোন আওয়াজ বের হলো না । আমি রাস্তা থেকে একটা ইটের বড় টুকরা তুলে তার দিকে ছুড়ে মারলাম। ইটের টুকরা যখন তাকে আঘাত করলো তখন শুকনা পাতা ছেঁড়ার আওয়াজ হলো। এবার সহস করে কাছে গিয়ে বুঝলাম হালকা বাতাসে শুকনা কলাপাতার ছেড়া অংশ বাতাসে দুলছিলো আর চাদের আলোতে দূর থেকে কলা গাছকে মনে হচ্ছিলো সুন্দরী ললনা।
আমি কিছুটা ভয়ে ভয়ে আবার পথ চলা শুরু করলাম। এখনো প্রায় ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। কিছুদুরে গেলেই রয়েছে একটা শান বাধাঁনো পুকুর । তার এক প্রান্তে পৌঁছাতেই দেখলাম সাদা কপড় পরিহিত পঞ্চাশ উর্দ্ধ একজন মহিলা পুকুর থেকে উপরের দিকে উঠে আমার আগে চলতে লাগলো । তাকে দেখে আমার একটু সহস হলো। আমি তার থেকে ১৫-২০ হাত পেছনে রয়েছি । তাই আমি তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম । আমার মনে হচ্ছিলো সামনের লোকালয়ের কেউ হবে। কিন্তু আমি কিছুতেই তার কাছাকাছি যেতে পারছিলাম না। আমি যতোই তাড়াতাড়ি হাঁটছিনা কেনো সেই ১৫-২০ হাতের দূরত্ব যেনো কমছেই না। এভাবে প্রায় ১৫ মিটিন হাঁটার পর একটা তিন রাস্তার মোড়ে আসলাম । এই তিন রাস্তার মোড়ের পরেই লোকালয়ের শুরু। এরপর সেই পৌড়াকে আর দেখতে পেলাম না। আকষ্মিক কোথায় সে মিলিয়ে গেলো ? জানি না তিনি কে ছিলেন? কেনোই বা আমার সাথে সাথে এতোটা পথ আসলেন? কেনোই বা দ্রুত পা চালিয়েও তার আর আমার পথের দূরত্ব কমাতে পারিনি? নিজেকে এসকল প্রশ্ন করতে করতে যখন বাড়ি পৌঁছালাম তখন ভোরের আলো দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমি যে সকল প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরলাম তার উত্তর কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

হংকং, এপ্রিল ০৯, ২০১৭

Address

Queens, NY

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bird of Passage posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share