06/06/2025
"পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী" একাদশী:
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
"কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।।"
আগামীকাল ০৭ জুন ২০২৫ শনিবার "পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী" একাদশী ব্রত। পারনের সময় পরের দিন ০৮ জুন রবিবার সকাল ৫:১৬ মিনিট থেকে ৭:৫০ মিনিটের মধ্যে। সকলে "পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী" একাদশী ব্রত পালন করুন এবং দুর্লভ মনুষ্য জীবনকে সার্থক করে তুলুন।
"পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী" একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য:
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে শ্রীভীমসেন-ব্যাসসংবাদে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে জনার্দন! আমি অপরা একাদশীর সমস্ত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলাম এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণরূপে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন- হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন! আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকান্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি। আপনি যথাযথভাবে ভক্তিবিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন।
শ্রীব্যাসদেব বললেন- হে মহারাজ! তুমি যেসব ধর্মকথা শুনেছ এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয়। সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি।
উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে। দ্বাদশী দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের অর্চন করবে। এরপর ব্রাহ্মণদেরকে প্রসাদ ভোজন করাবে। অশৌচাদিতেও এই ব্রত কখনও ত্যাগ করবে না।
যে সকল ব্যক্তি স্বর্গে যেতে চায়, তাদের সারা জীবন এই ব্রত পালন করা উচিত। পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভোজন না করে, তবে তারা যমযাতনা থেকে রক্ষা পায়।
শ্রীব্যাসদেবের এসব কথা শুনে গদাধর ভীমসেন অশ্বত্থ পাতার মতো কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলেন- হে মহাবুদ্ধি পিতামহ! মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিনে ভোজন করে না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। কিন্তু দঃসহ ক্ষুধাযন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস করতে পারি না।
ভীমসেনের এরকম কথায় ব্যাসদেব বলতে লাগলেন- যদি স্বর্গাদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না ।
তদুত্তরে ভীমসেন বললেন- আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দুরের কথা, দিনে একবার ভোজন করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমার উদরে ‘বৃক’ নামে অগ্নি রয়েছে। ভোজন না করলে কিছুতেই সে শান্ত হয় না। তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ।
হে মহর্ষি! বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে নিশ্চয় করে বলুন।
তখন ব্যাসদেব বললেন- জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। তবে আচমনে দোষ হবে না। ঐদিন অন্নাদি গ্রহণ করলে ভ্রত ভঙ্গ হয়।
একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ হয়। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায়, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। দ্বাদশী দিনে বাহ্মমুহূর্তে স্নানাদিকার্য সমাপ্ত করে শ্রীহরির পূজা করবে। সদাচারী ব্রাহ্মণদের বস্ত্রাদি দানসহ ভোজন করিয়ে আত্মীয়স্বজন সঙ্গে নিজে ভোজন করবে। এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পূণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর।
সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়। শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বলেছেন- ‘বৈদিক ও লৌকিক সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে যারা একমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়।
বিশেষত কলিযুগে ধন-সম্পদ দানের মাধ্যমে সদগতি বা স্মার্ত সংস্কারের মাধ্যমেও যথার্থ কল্যাণ লাভ হয় না। কলিযুগে দ্রব্যশুদ্ধি নেই। কলিতে শাস্ত্রোক্ত সংস্কার বিশুদ্ধ হয় না। তাই বৈদিক ধর্ম কখনও সুসম্পন্ন হতে পারে না।
হে ভীমসেন! তোমাকে বহূ কথা বলার আর প্রয়োজন কি? তুমি উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। যদি তাতে অসমর্থ হও তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অবশ্যই নির্জলা উপবাস করবে। এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদুতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয় যান।
একাদশী পালনের নিয়মাবলী:
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
শ্রীভীসেন ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী ‘পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশী’ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। এই নির্জলা একাদশীতৈ পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করেন তিনি বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণ আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন। ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্রি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বোত্তম।
একাদশীর আবির্ভাব:
*******************
পদ্মপুরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।
মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়েই নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই উরু-গুরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক।
এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখমোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জিবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন?
যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন-আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল।
শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ট এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত। কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা! আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।
হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দুর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন- হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।
একাদশী ব্রত সর্বোত্তম কেন?
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
(১). শাস্ত্রে যে চৌষট্টি প্রকার ব্রতের কথা বলা আছে তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বোত্তম। শ্রবন, স্মরণ, কীর্তন ইত্যাদি নবধা ভক্তির পরই একাদশীর অবস্থান।।
(২). শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর লীলা বিলাসের প্রথম থেকেই একাদশী ব্রত পালনের উপর জোর দিয়েছিলেন।।
(৩). মোট ছাব্বিশটি একাদশী আছে। প্রতি মাসে দুটি একাদশী হলে বছরে চব্বিশটি। কিন্তু যে বছর পুরুষোত্তম, অধিমাস বা মলো মাস, সেই মাসে পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়।।
(৪). আট বছর থেকে আশি বছর বয়সের যে কেউই এই একাদশী পালন করতে পারে।।
(৫). জন্ম মৃত্যুর অশৌচে কখনোই এই
একাদশী পরিত্যাগ করতে নেই।
(৬). শুধু এই একাদশী পালন করেও মানুষ শনির প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে পারে।।
(৭). একাদশীর ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় অস্বমেধ, রাজশূয় ও বাজপেয় যজ্ঞের দ্বারাও সেই ফল লাভ হয় না।
(৮). ভুলক্রমে একাদশী ভঙ্গ হয়ে গেলে ক্ষমা ভিক্ষা করে তা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।
(৯). একাদশীর দিনগুলো হলো চরিত্র সংশোধনের দিন। পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার, ক্রোধ, দুশ্চিন্তা এবং সকল প্রকার কলহ বিবাদ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।।
(১০). এইদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে মঙ্গল আরতি করতে হয়। মা এবং বোনেরা এই সময় রজচক্রের মধ্যে থাকলেও একাদশী পালন করতে পারবেন।।
(১১). একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ।।
(১২). অহংকার বশত একাদশী ব্রত ভঙ্গ করলে তাকে নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়।
(১৩). শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীর দিন নূন্যতম পঁচিশ মালা জপ করতে বলেছেন।।
(১৪). অনাহারে থেকে হরিনাম করে, হরিকথা বলে ও রাত্রি জাগরণ করে মালা জপ করতে হয়।।
(১৫). একাদশীতে শ্রাদ্ধ আসলে তা এইদিন না করে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিৎ।।
(১৬). এই উপাচার শুধু বৈষ্ণবের জন্য নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলেরই এই ব্রত পালন করা অবশ্য কর্তব্য।
(১৭). পরিশেষে, বলব, একাদশীর উপবাস মানে কি। লুনার সাইকেলের এগারতম দিনে হয় এই উপবাস। উপ মানে হলো নিকটে আর বাস মানে হলো অবস্থান করা। অর্থাৎ, শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের এগারতম দিনে পরমেশ্বর ভগবানের সাথে অবস্থান।। সুতরাং, এই দিন শুধু না খেয়ে থাকলেই হবে না, ভগবানের নাম জপ করতে হবে ও সকল পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
একাদশী কী?
***********
শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভক্ত্যাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগীতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য ও শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যেকোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য।
সঙ্কটজনক অবস্থা বা জন্মমৃত্যুর অশৌচে কখনও একাদশী পরিত্যাগ করতে নেই। একাদশীতে শ্রাদ্ধ উপস্থিত হলে সেইদিন না করে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিত। শুধু বৈষ্ণবেরাই নয়, শিবের উপাসক, সূর্য-চন্দ্র-ইন্দ্রাদি যেকোন দেবোপাসক, সকলেরই কর্তব্য একাদশী ব্রত পালন করা। দুর্লভ মানবজীবন লাভ করেও এই ব্রত অনুষ্ঠান না করলে বহু দুঃখে-কষ্টে চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয়।
অহংকারবশত একাদশী ব্রত ত্যাগ করলে যমযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। যে ব্যাক্তি এই ব্রতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, জীবিত হয়েও সে মৃতের সমান। কেউ যদি বলে “একাদশী পালনের দরকারটা কি?” সে নিশ্চয় কুন্তিপাক নরকের যাত্রী। যারা একাদশী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শনির কোপে তারা বিনষ্ট হয়। একাদশীকে উপেক্ষা করে তীর্থ স্থান আদি অন্য ব্রত পালনকারীর অবস্থা গাছের গোড়া কেটে পাতায় জল দানের মতোই।
একাদশী বাদ দিয়ে যারা দেহধর্মে অধিক আগ্রহ দেখায়, ধর্মের নামে পাপরাশিতে তাদের উদর পূর্ণ হয়। কলহ-বিবাদের কারণেও একাদশী দিনে উপবাস করলে অজ্ঞাত সুকৃতি সঞ্চিত হয়। পুণ্যপ্রদায়িনী সর্বশ্রেষ্ঠ এই ব্রত শ্রীহরির অতি প্রিয়। একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয়, অশ্বমেধ, রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞদ্বারাও তা হয় না। দেবরাজ ইন্দ্রও যথাবিধি একাদশী পালনকারীকে সম্মান করেন। একাদশী ব্রতে ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। অনাহার থেকে হরিনাম, হরিকথা, রাত্রিজাগরণে একাদশী পালন করা কর্তব্য।
কেউ যদি একাদশী ব্রতে শুধু উপবাস করে তাতে বহু ফল পাওয়া যায়। শুদ্ধ ভক্তেরা এই দিনে একাদশ ইন্দ্রিয়কে শ্রীকৃষ্ণে সমর্পণ করেন। একাদশীতে শস্যমধ্যে সমস্ত পাপ অবস্থান করে। তাই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, সরিষা আদি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য একাদশী দিনে বর্জন করা উচিত। নির্জলা উপবাসে অসমর্থ ব্যক্তি জল, দুধ, ফল-মূল, এমনকি আলু, পেপে, কলা, ঘিয়ে বা বাদাম তেল অথবা সূর্যমুখী তেলে রান্না অনুকল্প প্রসাদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন। রবিশস্য (ধান, গম, ভুট্রা, ডাল ও সরিষা) ও সোয়াবিন তেল অবশ্যই বর্জনীয়। দশমী বিদ্ধা একাদশীর দিন বাদ দিয়ে দ্বাদশী বিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করতে হয়।
একাদশীতে সূর্যোদয়ের পূর্বে বা সুর্যোদয়কালে (১ঘন্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে) যদি দশমী স্পর্শ হয়, তাকে দশমী বিদ্ধা বলে জেনে পরদিন একাদশীব্রত পালন করতে হয়। মহাদ্বাদশীর আগমন হলে একাদশীর উপবাস ব্রতটি মহাদ্বাদশীতেই করতে হয়। একাদশী ব্রত করে পরের দিন উপযুক্ত সময়ে শস্যজাতীয় প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করতে হয়। শাস্ত্রবিধি না মেনে নিজের মনগড়া একাদশী ব্রত করলে কোন ফল লাভ হয় না। দৈববশত যদি কখনও একাদশী ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে ক্ষমা ভিক্ষা করে পুনরায় ব্রত পালন করতে হয়।
একাদশী পালনের নিয়মাবলী
**************************
ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।
এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ, শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।
বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে-
১. উৎপন্না একাদশী - ২. মোক্ষদা একাদশী
৩. সফলা একাদশী , - ৪. পুত্রদা একাদশী
৫. ষটতিলা একাদশী - ৬. জয় একাদশী
৭. বিজয়া একাদশী - ৮. আমলকী একাদশী
৯. পাপমোচনী একাদশী - ১০. কামদা একাদশী
১১. বরুথিনী একাদশী - ১২. মোহিনী একাদশী
১৩. অপরা একাদশী - ১৪. নির্জলা একাদশী
১৫. যোগিনী একাদশী - ১৬. শয়ন একাদশী
১৭. কামিকা একাদশী - ১৮. পবিত্রা একাদশী
১৯. অন্নদা একাদশী - ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী
২১. ইন্দিরা একাদশী - ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী
২৩. রমা একাদশী - ২৪. উত্থান একাদশী
কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।
একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
*******************
ভদ্রশীলের কাহিনীঃ পুরাকালে গালব নামে এক মহান মুনি নর্মদা নদীর তীরে বাস করতেন। তাঁর ভদ্রশীল নামে এক বিষ্ণুভক্ত পুত্র ছিল। সে ছোটবেলা থেকে বিষ্ণুমূর্তি বানিয়ে পূজা করত। বালক হয়েও লোককে বিষ্ণুপূজার উপদেশ ও একাদশী পালন করতে নির্দেশ দিত, নিজেও পালন করত। পিতা একদিন জিজ্ঞাসা করেন। আচ্ছা ভদ্রশীল! তুমি অতি ভাগ্যবান। তুমি বলো তো, রোজ শ্রীহরির পূজা করা, একাদশ তিথি পালন করা- এরূপ ভক্তি কিভাবে তোমার উদয় হল?”
উত্তরে ভদ্রশীল বলতে লাগল- বাবা! আমি পূর্বজন্মের কথা ভুলিনি। আগের জন্মে যমপুরীতে গিয়েছিলাম। সেখানে যমরাজ আমাকে এ বিষয়ে উপদেশ করেছিলেন। পিতা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বললেন- ভদ্রশীল, তুমি পূর্বে কে ছিলে? যমরাজ তোমাকে কি বলেছিল, সব কিছুই আমাকে বলো। ভদ্রশীল বলল- বাবা! আমি পূর্বে চন্দ্রবংশের একা রাজা ছিলাম। তখন আমার নাম ছিল ধর্মকীর্তি।
ভগবান দত্তাত্রেয় আমার গুরু ছিলেন। নয় হাজার বছর আমি পৃথিবী শাসন করেছিলাম। বহু ধর্ম-কর্ম করেছিলাম। পরে যখন আমার অনেক ধনসম্পদ হল তখন আমি পাগলের মতো অধর্ম করতে লাগলাম। কতগুলি পাষন্ড ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করতাম। আর কেবল কথা আলাপের ফলেই আমার বহু দিনের অর্জিত পুণ্য নষ্ট হয়ে গেল। আমিও পাষন্ডী হলে গেলাম। সব প্রজারাও অধর্ম করতে লাগল। প্রজাদের প্রত্যেকের অধর্মের ছয় ভাগের এক ভাগ রাজাকেই গ্রহণ করতে হয়। তারপর একদিন আমি সৈন্যদের সঙ্গে বনে মৃগয়া করতে গেলাম।
বহু পশু বধ করলাম। তারপর আমি ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর ও ক্লান্ত হয়ে রেবা নদীর তীরে গেলাম। প্রখর রোদে তপ্ত হয়ে নদীতে স্নান করলাম। কিন্তু তারপর আমার কোন সেনাকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত ও অতিশয় ক্ষুধার্ত হলাম। অন্ধকার হয়ে এল। আমি পথ ঠিক করতে পারলাম না। তারপর এক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন তীর্থবাসীকে দেখলাম। জানলাম তারা একাদশী ব্রত করেছে। তারা সারাদিন কিছু খায়নি, জলপান পর্যন্তও করেনি। আমি তাদের সঙ্গে পড়ে রাত্রি জাগরণ করলাম। কিন্তু ক্লান্তি ক্ষুধা পিপাসায় কাতর হয়ে রাত্রি জাগরণের পর আমার মৃত্যু হল।
তখন দেখলাম বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট দুজন ভয়ংকর যমদুত এসে আমাকে দড়ি দিয়ে বাঁধল। আর ক্লেশময় পথ দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে চলল। তারপর যমপুরীতে পৌছালাম। যমরাজও দেখতে তখন ভয়ংকর। যমরাজ চিত্রগুপ্তকে ডেকে আমাকে দেখিয়ে বললেন-পন্ডিত! এই ব্যক্তির যেরূপ শিক্ষাবিধান তুমি তা বলো। চিত্রগুপ্ত কিছুক্ষণ বিচার করে ধর্মরাজ যমকে বললেন-হে ধর্মপাল! এই ব্যক্তি পাপকর্মেই রত ছিল সত্য, কিন্তু তবুও একাদশীর উপবাসের জন্য সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে।
তীর্থবাস ও রাত্রি-জাগরণও করেছে। তাই ওর সব পাপ নষ্ট হয়েছে। চিত্রগুপ্ত এই কথা বললে যমরাজ খুব চমকে উঠলেন, তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভুমিতে দন্ডবৎ প্রণাম জানিয়ে আমাকে পূজা করতে লাগলেন। তারপর তাঁর দূতদের আহ্বান করে বলতে লাগলেন- হে দূতগণ! তোমরা ভাল করে আমার কথা শোনো। তোমাদের মঙ্গলজনক কথা আমি বলছি। যে সব মানুষ মর্ধরত, তোমরা তাদেরকে এখানে আনবে না। যাঁরা শ্রীহরির ভক্ত, পবিত্র, একাদশীব্রত পরায়ণ, জিতেন্দ্রিয় এবং যাঁদের মুখে সর্বদা ‘হে নারায়ণ, হে গোবিন্দ, হে কৃষ্ণ, হে হরি, উচ্চারিত হয়, যাঁরা সকল লোকের হিতকারী ও শান্তিপ্রিয়, তাদেরকে তোমরা দূর থেকেই পরিত্যাগ করবে।
কারণ, সেই সব ব্যক্তিকে আমার শিক্ষা দেবার অধিকার নেই। যাঁরা সর্বদা হরিনামে আসক্ত, সর্বদা হরিকথা শ্রবণে আগ্রহী, যাঁরা পাষন্ডগণের সঙ্গ করে না, ভক্তদের শ্রদ্ধা করে, সাধুসেবা অতিথিসেবা পরায়ণ, তাঁদেরকে পরিত্যাগ করবে।
হে দূতগণ! তোমরা শুধু তাদেরকেই আমার কাছে ধরে আনবে যারা উগ্রস্বভাব, ভক্তদের অনিষ্ট করে, লোকদের সঙ্গে কলহ বাধায়, একাদশী ব্রত পালনে একান্ত পরাঙ্মুখ, পরনিন্দুক, ব্রাহ্মণের ধনে লোভ, পরতন্ত্র, হরিভক্তি বিমূখ, যারা ভগবদ্ বিগ্রহ দেখে শ্রদ্ধাবত হয় না, মন্দির দর্শনে যাদের আগ্রহ নেই, অন্যের অপবাদ করে বেড়ায়, তাদের সবাইকে বেঁধে এখানে নিয়ে আসবে।’
যমরাজের মুখে এসব কথা শুনে আমি পাপকর্মের জন্য অত্যন্ত অনুশোচনা করতে থাকি। তারপর আমি সূর্যের মতো উজ্জ্বল দেহ লাভ করলাম। একটি দিব্য বিমানে চড়িয়ে আমাকে যমরাজ দিব্যলোকে পাঠিয়ে দিলেন। কোটি কল্প সেখানে অবস্থান করার পর এই পৃথিবীতে এসে সদাচারী মহান ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার জাতিস্মরতা হেতু এসব ঘটনা আমার হৃদয়ে জাগ্রত আছে।
আমি পূর্বে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য জানতাম না। অনিচ্ছাকৃতভাবে যখন একাদশী পালনে এত ফল লাভ করেছি। তাহলে ভক্তি সহকারে একাদশী ব্রত উপবাস করলে কি প্রকার ফল লাভ হয় তা জানি না। তাই বৈকুন্ঠধামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছায় আমি পবিত্র একাদশীব্রত ও প্রতিদিন বিষ্ণুপূজা করব এবং অন্যদেরও এসব পালন করতে উৎসাহী করব। পুত্রের কথা শুনে গালব মুনি অতি সন্তুষ্ট হয়ে ভাবলেন, আমার বংশে এই পরম বিষ্ণুভক্তের জন্ম হয়েছে, তাই আমার জন্ম সফল, আমার বংশও পবিত্র হল।
"জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
শ্রী অদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ।"
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।"