
10/08/2025
বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে কোনো ভিসায় যদি তুলনামূলক বেশি কষ্ট পাওয়া যায় সেটা হলো স্টুডেন্ট ভিসা।
এটা শুধু আমি একা স্টুডেন্ট হিসেব বললাম না যারা বিদেশে এখনও পড়াশোনা করতেছে সবাই বলবে। নরমাল কাজের ভিসায় যদি বিদেশ আসেন তবে বেতন যাই হোক একটা নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পরে রিল্যাক্স করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু স্টুডেন্ট হিসেবে বিদেশ রিল্যাক্স করার সুযোগ নাই(যদি না বাপ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়)।
একজন স্টুডেন্ট সারাদিন ৬-৮ ঘন্টা ক্লাস করতে হয় সপ্তায় ৩-৪ দিন, ক্লাসে পড়ার চাপ থাকে ক্লাস এটেন্ড করে ক্লাসের বিভিন্ন ইভেন্টে এটেন্ড করতে হয়, ক্লাসে যেই হোমওয়ার্ক গুলা দিবে এগুলা বাসায় এসে করতে গেলেও ২-৩ ঘন্টা চলে যাবে রিসার্চ+লেখালেখিতে( কেউর টা নকল করতে পারবেন না/আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলি. ব্যবহার করতে পারবেন না যদি প্রফেসর চালাক হয়)।
বাসায় এসে আপনাকে রান্না করতে হবে এযেনো এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতন, জীবনের পুরোটা সময় আপনি মায়ের হাতের রান্না খেয়ে আসছেন কিন্তু এখন আপনাকে পুরো সপ্তাহ/মাসের/বছরের রান্না নিজেই করতে হবে, নিজের রুম নিজেই গুছিয়ে রাখতে হবে। বাইরে থেকে খেতে গেলে অইযে বাপ হাজার কোটি টাকার মালিক হতে হবে কারন বাইরের খাবার অনেক দাম+হাতের নাগালে পাওয়া যায় না।
পড়াশোনা গেলো রান্না গেলো এখন মেইন হলো কাজ। মিডেলক্লাস ফ্যামিলির সব ছেলেরাই বিদেশ আসে নিজে কাজ করে চলার জন্য, বাড়িতে টাকা পাঠাতে না পারলেও যাতে বাড়ি থেকে টাকা না আনা লাগে অই চিন্তা করতে হয়।
এই জন্য আপনাকে প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। পার্ট-টাইম (৩-৪ ঘন্টা) কাজ করলে কিছুই হবে না, ফুল টাইম করতে হবে, কারন আপনার যেই টিউশন ফি থাকবে তা সর্বনিম্ন ৩০০০-৪০০০ ডলার প্রতি সেমিস্টারে। পার্টটাইম করে নিজের চলাফেরা/টিউশন ফি দেওয়া এককথায় ইম্পসিবল।
পড়াশোনা গেলো রান্না গেলো খাওয়া গেলো কাজ গেলো মেইন জিনিস বাকি আছে সেটা হলো ঘুম সারাদিন এত পরিশ্রম করে আপনাকে মিনিমাম ৬-৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে, মানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি রিল্যাক্স হয়ে একঘন্টা বসার সুযোগ নেই(মাসে দু-একদিন বাদে)।
এটা আপনি যদি স্টুডেন্ট না হন তাহলে ২৪ ঘন্টায় ১০ ঘন্টা কাজ করবেন বাসায় এসে ২ ঘন্টা রান্না(প্রতিদিন না, সবাই একসাথে থাকলে একেকদিন একেকজন রান্না করে) ফ্যামিলিকে সময় দিয়ে ঘুম,রিল্যাক্সের সময় পাওয়া যায়।
কিন্তু স্টুডেন্টদের (আমার) ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠা সকাল ৮ টায় রেডি হয়ে ক্লাসে যাওয়া, ক্লাস শেষ বিকাল ৪ টা, বাসায় এসে এসাইনমেন্ট (সপ্তায় ২/৩ টা থাকবেই), এসাইনমেন্ট শেষ করে কাজে যাওয়া, কাজ থেকে এসে ঘুম, ঘুম থেকে উঠে আবার ক্লাস-এভাবেই চলতে থাকবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর।
কাজ করলে হয়তো একটা সময় আপনার হাতে অনেক টাকা থাকবে কিন্তু এত কষ্ট করে যদি পড়াশোনা টা কন্টিনিউ করেন তবে আপনার কাছে থাকবে মহামূল্যবান সার্টিফিকেট এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান, যেগুলা দিয়ে আপনি বিশ্বজয় করতে পারবেন। তখন হয়তো মনে হবে না কষ্ট বিফলে যায় নি(সেই আশায় আছি)।
এটা সম্পুর্ন আমার নিজের জীবন থেকে নেওয়া যা ৯০% স্টুডেন্ট দের সাথেই মিলে যাবে। সকল ফরেইন স্টুডেন্টদের জন্য মন থেকে দোয়া ও ভালোবাসা রইলো যাতে এত কষ্ট করার পরে সবাই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
Rafir