09/25/2024
সকাল ৮:৫০
আইএমএলে নিচ তলার টেবিলে বসে, বাকি থাকা হোমওয়ার্ক করছিলাম। হঠাৎ একজন বয়স্ক ধরনের মানুষ আসলেন। খুবই ইনফরমাল টি-শার্ট পরিহিত। মাথায় ক্যাপ ছিল। দ্রুত গতিতে হাঁটতে হাঁটতে নিচ তলায় এদিক সেদিক দেখে নিলেন। মনে হবে জগিং করতে বের হয়েছেন। ভাষা ইনস্টিটিউট হওয়ায় সব বয়সের মানুষকেই এখানে দেখা যায়। এই সিনারিও তেমন অস্বাভাবিক না।
একটু পরে, তিনি হঠাৎ করে আমাদের টেবিলের সামনে এসে বললেন, (কিছু একটা সম্বোধন করেছিলেন, ঠিক মনে নেই) 'তোমরা কেমন আছো?' (আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স সম্পর্কে জানতে চাইবেন) এর মধ্যেই উনি বলে ফেললেন, 'আমি নিয়াজ আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর। (সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম) তোমরা বসো, বসো। আমি আসলে জানতে এসেছি তোমরা কোন ব্যাচের। তোমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে তো? ইনস্টিটিউটের ইন্টারনাল অনেক সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোমাদের তো ক্লাস শুরু করতে হবে। তোমরা সবাইকে ক্লাসে আসতে বলবা। ক্লাস শুরু না করলে তো হবে না। তোমাদের গতকাল ক্লাস হয়েছে? এর আগের দিন হয়েছে?'
শেষে বললেন, 'তোমরা সবাই ভালো থেকো।'
উনি আরো কিছু কথা বললেন, কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় আমি সব খেয়াল রাখতে পারিনি।
আমাদের টেবিল থেকে পাশের টেবিলে গিয়েও স্যার একই কথাই বললেন।
উনি পরিচয় না দেওয়া পর্যন্ত আমরা একজন স্টুডেন্ট ও বুঝতে পারিনি উনি কে। ভাইস চ্যান্সেলর হচ্ছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবকের পদ, গুরু দায়িত্বের পদ। সর্বোচ্চ সম্মানের পদও বটে। প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও স্যার এত সাধারণভাবে এসে আমাদের খোঁজ নিলেন, এই দৃশ্যটাকে আমি রিলেট করেছি একজন ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্ববান শাসকের সাথে, যিনি ছদ্মবেশে তার জনগণের খোঁজ নেন। এটা যদিও স্বাভাবিক একটা দৃশ্য হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিগত দিনগুলোতে এই পদের যে অপব্যবহার আমরা দেখেছি, সে হিসেব করলে, এটা অস্বাভাবিকই মনে হয়। আমি অনেক ইমপ্রেসড, আলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত থাকুক দু'আ করি। শাসন, শ্রদ্ধা, স্নেহ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে উঠুক সবচেয়ে মূল্যবান।
২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪
তাহমিদা আকবর
জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ
সেশন : ২০২০-২১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়