13/02/2025
শবে বরাত সম্পর্কে কিছু সহিহ ও হাসান (গৃহীতযোগ্য) হাদিস পাওয়া যায়, তবে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদতের বাধ্যবাধকতা নেই। নিচে সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে শবে বরাতের আমল উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইস্তেগফার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের ১৫তম রাতে তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।”
(ইবনু মাজাহ: 1390, সহিহ করেছেন আলবানী)
→ করণীয়: এই রাতে বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা।
২. নফল নামাজ পড়া
শবে বরাতে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের কথা সহিহ হাদিসে নেই। তবে রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) পড়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে।
→ করণীয়: নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ২, ৪, ৬, ৮ বা ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।
৩. কুরআন তিলাওয়াত করা
রাসুল (সা.) সাধারণত রাতের ইবাদতে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
→ করণীয়: কুরআন থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করা এবং অর্থ-বোঝার চেষ্টা করা।
৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
শবে বরাতের দোয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো সহিহ দোয়া নেই, তবে যেকোনো দোয়া করা যায়।
→ করণীয়: নিজের জন্য, পরিবার ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা। বিশেষ করে গুনাহ মাফ, হিদায়াত, রিজিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার দোয়া করা।
৫. ১৫ শাবান রোজা রাখা (মুস্তাহাব, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন:
“শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক রোজা রাখতেন।”
(বুখারি: 1969, মুসলিম: 1156)
→ করণীয়: যদি সম্ভব হয়, তাহলে ১৫ শাবান রোজা রাখা। তবে এটি ফরজ নয়, বরং নফল।
৬. কবর জিয়ারত করা
আয়েশা (রা.) বলেন:
“এক রাতে আমি রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম এবং জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে পেলাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’”
(তিরমিজি: 739, হাসান হাদিস)
→ করণীয়: কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করা, তবে কবরের কাছে গিয়ে কোনো বিদআতি আমল (যেমন মোমবাতি জ্বালানো, ফুল দেওয়া) করা যাবে না।
---
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত:
❌ শবে বরাতকে নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ রাত মনে করে অতিরিক্ত ইবাদত নির্ধারণ করা (যেমন ১০০ রাকাত নামাজ বা নির্দিষ্ট কোনো দোয়া)
❌ মিলাদ, ফাতেহা বা বিশেষ আয়োজন করা
❌ আতশবাজি, হালুয়া বিতরণ ইত্যাদি করা
❌ শুধু এই রাতের ইবাদতের ওপর নির্ভর করে অন্যান্য রাত অবহেলা করা
সারসংক্ষেপ:
✔ শবে বরাতে তাওবা, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তেগফার করা ভালো
✔ ১৫ শাবান রোজা রাখা মুস্তাহাব (ইচ্ছাকৃত), তবে ফরজ নয়
✔ কবর জিয়ারত করা যায়, তবে বিশেষ কোনো রীতি অনুসরণ করা উচিত নয়
✔ কোনো বিদআতি আমল বা কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা উচিত
এটাই হলো শবে বরাতের সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমল।