13/07/2025
গল্প: #নিঃশব্দ_নীরিক্ষা
লেখনীতে:
🔒 কপিরাইট © সংরক্ষিত
পর্ব : ১০
---
আরহাম আজ সকাল থেকে অস্থির হয়ে বসে আছে, সেই দিন মেহেরকে যেভাবে মাহিরের সঙ্গে দেখলো, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আজও, বুকের ভেতর কেমন করে, রাগে আর হিংসায় ভেতরটা পুড়ে যায়, অথচ সে কিছু বলতেও পারে না, মুখ ফুটে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারে না, তবুও তার চোখ বারবার মেহেরের সেই মুখ মনে করে, যেখানে সে মাহিরের সঙ্গে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলছিল, যেনো কত দিনের চেনা তারা, আর সেই দৃশ্যটাই আরহামের চোখে বারবার ভেসে ওঠে।
সে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ চাপতে চায় কিন্তু পারছে না, হিংসার তীব্র আগুন তার ভেতরে জ্বলছে,
সে ভাবে..... কে এই লোক ? মেহেরের কি হয়? কেনো এত স্বাভাবিক ব্যবহার করেছিলো মেহের ?
হঠাৎ তার নিজের মনেই সন্দেহ জন্মায়, মেহের কি ঐ লোকটার সঙ্গে ডেট করছে? নাকি তাদের মধ্যে আগে থেকেই কিছু ছিলো? নাকি এখনো আছে?
এইসব সে আগে কেনো ভেবে দেখেনি। এই ভেবে সে নিজের কপাল নিজেই চাপড়াতে থাকে।
আরহাম ঠিক করে, সে এই রহস্য ভাঙবেই, সে জানবেই ঐ লোকটা কে, তার পরিচয় কি, কেনো মেহেরের আশেপাশে এতো ঘুরঘুর করে ।
আর মেহেরের কাছে তার সম্পর্ক কি, কী পরিচয় তার মেহেরের কাছে।
সবকিছু তাকে জানতে হবেই, আর আজকের মধ্যেই তা জানতে হবে, নাহলে এতো সময় অপেক্ষা করা তার ধৈর্য্য কুলাবে না ,
এইসব হিবিজিবি চিন্তায় তার মাথা আরও গরম হয়ে যায়, রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়,
সে নিচু কন্ঠ স্বরে বলে উঠলো...
~আরহাম: ‘তুমি শুধু আমার মেহের , আমি ব্যতীত তোমার পাশে আমি নিজের ছায়া কে ও সহ্য করবো না !’ সেখানে ঐ লোকটা তোমায় ছুঁয়েছে, এর শাস্তি ঐ লোকটা কে পেতেই হবে, তুমি ও পাবে তবে সেটা স্পেশাল ভাবে। তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার একমাত্র আমার, আর কেউ ছুঁতে পারবে না তোমায় কেউ না।
তার রাগ এমন পর্যায়ে যায়,,,
যে সে অফিসের ডেস্কে রাখা কলম ছুড়ে ফেলে দেয়, টেবিলের ফাইলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়, চেয়ারটা ঠেলে উঠে দাঁড়ায়, ভেতরটা উত্তেজনায় কাঁপছে।
তখন ফারহান দরজায় নক করে ঢুকে,
রুমের অবস্থা দেখে তার মুখে অস্বস্তিতীর চাপ, কিছু বলবে কি বলবে না বোঝে উঠে না, কিন্তু শেষমেশ নরম কণ্ঠে বলে—
‘স্যার, সব ঠিক আছে তো? আপনি কি কোনো বিষয়ে রেগে আছেন।’
আরহাম গম্ভীর গলায় বলে—‘
~ফারহান, তোমাকে কাল রাতের বলা ঐ লোকটার সব খুঁটিনাটি বের করে দাও, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, সব ইনফরমেশন, ঠিকানা, পরিবার, ব্যাকগ্রাউন্ড, সব সব লাগবে আমার আর আজকে মধ্যেই চাই।’
~ফারহান একটু চমকে যায়, কারণ স্যার সচরাচর কাউকে নিয়ে এতটা আগ্রহী হয় না বিশেষ করে মেয়েদের বিষয় ,
কিন্তু মুখে কিছু না বলে সে সোজা মাথা নেড়ে বলে..
~‘ঠিক আছে স্যার, আমি এক্ষুনি গিয়ে সব ডিটেইলস খুঁজে বের করছি, আর আজকের মধ্যেই সব বের করে আপনাকে পাঠাচ্ছি ।’
ফারহান বের হয়ে যায়, আরহাম আবার চেয়ারটায় বসে পরে, কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতা এখনও কমে নি, সে দুই হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে, চোখ বন্ধ করে,
একটানা ভাবে—‘মেহের, তুমি কি সত্যিই অন্য মেয়েদের মতো ? যখন আমি তোমার জীবনে থাকবো তখন ও কি, আমি থাকা স্বত্বেও অন্য কারো সঙ্গে মিশবে?
তারপর বাঁকা হেসে আবার বললো...
~আরহাম: তুমি যতোই অন্যদের সঙ্গে মিশো, আমি কি তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে পারি? না, কোনোভাবেই না!’ যা উড়ার উড়ে নাও সেই তোমায় বন্দী হতে হবে আমার রাজত্বে।
এই বলে সে উন্মাদের মতো হাসতে লাগলো।
-------------------------
ফারহান ফিরে আসে প্রায় ২ ঘণ্টা পরে, হাতে কিছু ফাইল আর ফোনে কিছু ছবি, আরহামের টেবিলে সব সাজিয়ে রেখে বলতে লাগলোো—
‘স্যার, যতটুকু পেরেছি জেনে ফেলেছি। লোকটার পুরো নাম মাহির সাদমান হক। বয়স আনুমানিক আপনার কাছাকাছি,, বা এর কম বেশি। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে, ধনসম্পদের অভাব নেই, পড়াশোনা ও অনেক করেছে, দেশের বাইরে থেকেও পড়েছে কিছুদিন, অন্য কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড পাই নি আপতত । আর মেডামের সঙ্গে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক খুঁজে পাইনি, অন্তত রেকর্ডে নেই, হয়তো বন্ধুত্ব, অথবা পরিচিত কেউ। তবে মেডাম যে ভার্সিটি তে পড়াশোনা করে,,, একসময় ঐ ভার্সিটির ছাত্র ছিলো ঐ লোকটা। এগুলো ছাড়া আর কোনো কিছুই পেলাম না।
তবে আপনি যদি চান, আমি আরও খুঁটিয়ে দেখবো।
আরহাম ঠান্ডা গলায় বললো...
~আরহাম: হুম ভালো কাজ করেছো। বাকি সময় থাকলে তুমি যাচাই করে দেখো, মেহেরের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী, আগে থেকে চেনে নাকি নতুন করে পরিচয়। আর সাবধানে করো, কোনো প্রকার ঝামেলা চাই না আমি।’
ফারহান আবার মাথা নেড়ে বললো,,
‘ঠিক আছে স্যার।’
ফারহান বেরিয়ে গেলে আরহাম কাগজগুলো আবার পড়ে দেখে, তারপর মাহিরের ছবিটা কে কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে পিরিয়ে দেখতে লাগলো।
ঠোঁটের কোণে তীব্র বিদ্রুপের হাসি খেলে যায় তার,
~আরহাম: ‘ তো তুমি তাহলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে এসেছো? হা হা হা....
ভালো, খুব ভালো! আমি ও দেখবো তুমি কতদূর যেতে পারো।’
তারপর কিছু একটা ভেবেই ওর ঠোঁটে হাসি খেলে গেলো... তারপর আবেগ ভরা কন্ঠে বলে উঠলো..
~আরহাম: মেহের আমার মন ময়ূরী,,, এখন থেকে যা হবে সামনা-সামনিই হবে,, অনেক হয়েছে আর না, এবার তোমার সামনে আমাকে ধরা দিতেই হবে দেখছি।
--------------------------------
এদিকে রিকা নিজের কক্ষে বসে আছে,
তার চোখে আগুনের ঝিলিক, মুখে বিদ্বেষের ছাপ, সে কলম দিয়ে কাগজে মেহেরের নাম লিখে, বারবার কেটে দিচ্ছে, ওর হাবভাব এমন যেনো মেহের কে একেবারেই সারাজীবনের জন্য মুছে ফেলতে চায় পৃথিবী থেকে..!
তার শ্বাস ভারী হয়ে আসে, চোখ ফেটে যায় রাগে।
মনে মনে সে ভাবে......
~রিকা: ‘তুই মাহিরের কাছে এতটা দামি কেনো মেহের ? তুই কি মনে করিস তুই মাহিরের খুব যোগ্য? তোর ওই সুন্দর চেহারা, শীতল চাহনি, সবকিছু নষ্ট করে দেবো আমি! তোর মুখ আমি মাটিতে
ঠেকিয়েই ছাড়বো! সবাইকে দেখাবো তুই কতটা তুচ্ছ!’
রিকা রাগে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে, ঘরে পায়চারি করে, আবার থামে।
ঠান্ডা মাথায় ভাবে—‘না না, এভাবে রাগ করে হবে না, পরিকল্পনা করতে হবে, খুব সূক্ষ্ম ভাবে প্ল্যান করতে হবে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে, এর পিছনে আমি আছি।
~রিকা: আমি ওর এমন অবস্থা করবো, যাতে ও নিজের মুখ টাও কাউকে দেখাতে ভয় পায়, ওর সব সম্মান আমি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেবো!’
সে তার মোবাইলে কাউকে কিছু একটা লিখে পাঠায়, চোখে সেই ভয়ঙ্কর হাসি,
ঠোঁটে শুষ্ক চাপা স্বর....
~রিকা: ‘মেহের, তোকে তো শেষ করেই ছারবো! এবার আমি আমার আসল খেলা শুরু করবো!’ কে বাঁচাবে তোকে।
-------------------------------------------------------------
রাত ১২ টায় আরহাম বাসায় ফিরে,,,,,,
দিনের ক্লান্তি পেছনে ফেলে, সে গাড়ি থেকে নেমে,
ধীরে পা ফেললো বাসার দিকে।
পরিচিত বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটু হাসল...।
এটাই তার শান্তির জায়গা, তার সবচেয়ে আপন এই বাড়ি টা,, তার ছোট বেলার কত-শত সৃতি চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।
এরপর এগিয়ে যায় দরজার সামনে,
কলিং বেল বাজাতেই কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে গেলো।
সামনে তার মা লুবনা সিদ্দিকী দাড়িয়ে আছে.... মুখে চিরচেনা মমতা মাখানো হাসি, একটু অবসন্ন চেহারা।
তা দেখে আরহামের বুকটা ধক করে উঠলো...
~আরহাম: “মা!”
একদম শিশুদের মতো আবেগী কন্ঠে ডেকে ওঠে আরহাম।
সে ঝট করে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, মাথাটা মায়ের কাঁধে রেখে বলে,
~আরহাম: তোমার চেহারা এমন লাগছে কেনো মা? “বলো তো আজ তোমার শরীর কেমন আছে?” ঔষধ ঠিক মতো নিচ্ছো তো??
লুবনা সিদ্দিকী হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
~লুবনা সিদ্দিকী: “আমার বয়স হয়েছে বাবা... শরীর আজ ভালো তো কাল খারাপ। তুই তো সারাদিন অফিসে পরে থাকিস, আর দেখার মতো কেউও তো নেই। তুই ও ঠিক করে সময় দিস না...”
মায়ের কণ্ঠে অভিমানের কোমল রেশ, আরহাম তা টের পায়। হালকা হেসে বলে,
“আচ্ছা মা, এবার থেকে একটু আগে আসবো। কথা দিচ্ছি।”
কিন্তু লুবনা সিদ্দিকী চুপচাপ থাকে না। তিনি বলেই ফেলে,
~ লুবনা সিদ্দিকী : “তোর তো অনেক বয়স হলো বাবা... এবার বিয়েটা কর। আমি তোকে কিছু মেয়ের ছবি দেখাচ্ছি । যদি পছন্দ করিস, তাহলে...”
~আরহাম হেসে বলে,
“উফফফ মা! বাড়িতে আসতে না আসতেই আবার সেই বিয়ের কাহিনি শুরু করলে?”
~ লুবনা সিদ্দিকী : আচ্ছা আর বলবো না“ তবে তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?”
~আরহামের মুখের হাসিটা হালকা চুপসে যায়। তবে কিছুটা আন্দাজ করে মাথা নিচু করে বলে,
~আরহাম: “হুম, বলো।”
~লুবনা সিদ্দিকী চোখ সরু করে বলে,,,
“ মেয়েটা কে?
আহরাম অবাক হওয়ার ভান করে বললো..
~আরহাম: কোন মেয়ে; আমি তো কোনো মেয়ে কেই চিনি না।
তখন লুবনা সিদ্দিকী ওর কান চেপে ধরে বললো...
~যার ছবি নিজের ওয়ালেটে লুকিয়ে রেখেছিস?তার কথা বলছি। আজ রুম ঘুচাতে গিয়ে ও বেডশিটের নিচে একটা স্কেচ পেয়েছি। এক জোড়া চোখ... , কে সে মেয়ে?”
মায়ের চোখে কৌতূহলের আলো জ্বলে উঠে। আরহাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। তবে ভয় ও হয় মা যদি রাগ করে।
তবে লুবনা সিদ্দিকীর চোখ ততক্ষণে আনন্দে ঝলমল করছিলো।
তিনি নিজের মনে ভাবেন...
~লুবনা সিদ্দিকী: যাক আমার পাগল ছেলে টা বুঝি অবশেষে কারো প্রেমে পরেছে! আল্লাহ, ওর সকল মনের আশা পূরণ করুক, ও যেনো সবসময় ভালো থাকে।
তখন আরহাম বললো...
~আরহাম: “সব বলবো মা, আগে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি, তারপর না হয় বসে গল্প করা যাবে,”
এই বলে আরহাম তার রুমে চলে যায়।
---
লুবনা সিদ্দিকী ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে,,।
তা গরম করে টেবিলে সাজিয়ে রাখছিলো।
এমন সময় আরহাম ফ্রেস হয়ে নিচে নামে।
তাকে দেখে লুবনা সিদ্দিকী একটু হেসে বললেন,
~লুবনা সিদ্দিকী: “আজ সকালে জিনিয়া চলে গেছে। তাই আগের মতো তাড়াতাড়ি বাড়ি পিরিস,, এতো রাত করিস না আর।
তারপর একটু থেমে আবার বলে উঠলো..
~এই কয়দিন বাইরে খেয়ে খেয়ে চেহারার এমন হাল করেছিস, আমার বউমা তোকে দেখে, পাত্তা দিবে তো?”
~আরহাম চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকায়।
“আরে ! এখনও তো বিয়েই করলাম না, তাতেই বউমার পক্ষে চলে গেলে? যখন বিয়ে করবো, তখন তো আমাকে চিনবেই না তুমি!”
~ লুবনা সিদ্দিকী খিলখিল করে হেসে বলেন,
“বিয়ে করিস না কেনো, বল? আমি কি তোকে বারণ করেছি কখনো? বরং আমি তো চাচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি বিয়ে কর। আমি ও একটু নিশ্চিন্ত হবো ।
আর প্রতিদিন এতো রাত পর্যন্ত তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারবো না আমি, দেখ চোখের নীচে কালি পরে গেছে ! ভাবছি, তোর দায়িত্বটা এবার থেকে তোর বউকে বুঝিয়ে দেবো। তাহলে আমি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। তার জামাই কে পাহারা দেওয়াটা দিন দিন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য ।”
আরহাম এবার মন থেকে হাসি ফেললো। এমন হাসি যা তার ভিতরের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।
সে মন প্রাণ উজাড় করে নিজের মা’কে দেখে—এ মানুষটাই তো তার জীবনের নিরাপদ আশ্রয়। তার সব ব্যথার ঔষধ।
তার মা তখন একটু নরম হয়ে বলেন,
~লুবনা সিদ্দিকী: “মেয়েটা নিশ্চয়ই খুব লক্ষ্মী, তাই না রে অভ্র? আমি তো লক্ষ্য করেছি, ইদানীং তুই আগের তুলনায় খুব বেশি মন খুলে হাসিস। আগের থেকে ও বেশি পরিপাটি হয়ে থাকিস, সময় মতো খাস, কথাবার্তায় ও এক ধরনের শান্ত ভাব এসেছে। কে সে, বল না?”
(‘অভ্র’—এই নামটা তার মা শুধুই আবেগে ভরা মুহূর্তেই ডাকে। আর সেই ডাকেই যেনো আরহাম ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যায়)
সে মুখ নিচু করে মাথা নাড়ে, একটা লাজুক হাসি তার ঠোঁটের কোণে খেলে যায়।
এতেই লুবনা সিদ্দিকী বুঝে যায়, তার ছেলের এই হাসি একেবারেই মিথ্যে হতে পারে না।
লুবনা সিদ্দিকী আলতো করে আরহামের মাথায় হাত রাখে,,,।
চুলে বিলি কেটে বলেন,
~ “মেয়েটার জন্য মন থেকে দোয়া করি রে। আল্লাহ যেনো ওকে সবসময় সুখে রাখে, আর তার পাশাপাশি আমার ছেলের জীবনটাকে ও যেনো রঙিন করে তুলে। তোর মুখে হাসি যেনো এভাবেই লেগে থাকে সারাজীবন ।”
একটু থেমে আবার বলেন,
~ওর নাম কি রে অভ্র আর “দেখাবি না আমায় মেয়েটাকে?”
আরহাম এবার একটু ঝুঁকে গিয়ে বলেন,
— “দেখাবো মা, অবশ্যই দেখাবো। তবে এখন না। যখন সময় আসবে, তখন তোমার সামনে একেবারে দাঁড় করিয়ে দিবো, তখন তুমি দেখো মন ভরে।” আর ওর পরিচয় ও তখনই বলবো তোমায়।
লুবনা সিদ্দিকী হাসে। সেই হাসির মাঝে মিশে থাকে তৃপ্তি, ভালোবাসা, আর এক মায়ের অপেক্ষার অবসানের ছোঁয়া।
---------
রাতের ডিনারটা আজ অন্যরকম হয়ে ওঠে।
মা-ছেলের মাঝে এক নরম আসার আলো জ্বলে ওঠে।
রাতের খাবার টেবিলে বসে আরহাম আজ নিজের ডায়েটের কথা ভুলেই তৃপ্তি নিয়ে পেট ভরে খায়।
লুবনা সিদ্দিকী অবাক হয়ে বলেন,
~ “কি ব্যাপার, আজ তো দেখি সব খেয়ে নিচ্ছিস! আজ তোকে দেখে মনে হচ্ছে মনটা একেবারে ফুরফুরে!”
আরহাম মুচকি হেসে বলে,
~তুমিই তো বলো “মাঝে মাঝে নিজের মনকেও খুশি রাখতে হয়, তাই না মা?”
লুবনা সিদ্দিকী চুপচাপ, আবেগী ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
মনে মনে বলে....
আজ কতো টা বছর পর তোকে আবার আগের মতো দেখছি আমি, অভ্র।
আমি মন প্রাণ থেকে দোয়া করি মেয়েটা যেনো তোর জীবন আলোকিত করে আসে,, সে যেনো আমার ছেলের মন বুঝে। আর ও যখন এবাড়িতে আসবে, তাকে আমি কখনোই কষ্ট পেতে দিবো না, কারণ সে আমার ছেলের মন ছুঁয়েছে...।
_____________________________________
শহরের অন্য প্রান্তে মাহির নিজের ফ্ল্যাটে শুয়ে আছে, রাত গভীর হয়ে গেছে, জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে, পর্দা গুলো হালকা দুলছে, কিন্তু মাহিরের চোখে ঘুম নেই, সে একমনে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ হাসে, হঠাৎ গম্ভীর হয়, তার মনের ভেতর হাজারটা চিন্তা— তবে সবই মেহেরকে ঘিরে ।
সে ভাবে....
~মাহির: মেহের কি জানে আমি ওর জন্য কতটা সিরিয়াস? নাকি ও আমায় নিয়ে কিছুই ভাবে না?
ওকে যখন হাসতে দেখি, মনে হয় এই পৃথিবীর সব আলো ওর চেহারায় নেমে আসে, অথচ ওর দূরত্ব আমার বুকে ছুরির মতো আঘাত করে ।
কেনো এত কঠিন তুমি মেহের? তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুতে চাই,,,, কিন্তু পারি না, কারণ সেই অধিকার আমার নেই।
সেইদিন ও তোমার চোখে আমার জন্য কোনো অনুভূতিই ছিলো না, শুধু ঠান্ডা শীতলতা, যেনো আমি তোমার কিছুই না, একদম অপরিচিত কেউ।
কিন্তু আমি কেনো পারি না তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে!
~মাহির: মেহের তুমি কি সত্যিই আমায় বুঝতে পারো না?’ নাকি বুঝেও, না বুঝার ভান করো।
এই বলে মাহির হেসে ফেলে নিজের উপর, চোখ দুটো পানিতে টলমল করে,
একদম নিচু স্বরে বলে—‘মেহের, তুমি জানলে ও না , আমি কতবার তোমাকে কল্পনায় ছুঁয়েছি, তোমার চুলে আঙুল বুলিয়েছি, তোমার কপালে চুমু খেয়েছি, তোমার রাগে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে থেমে গেছি, তোমাকে ভালোবেসে হাজার স্বপ্ন বুনেছি, অথচ এই বাস্তবে তোমার কাছে আমি কিছুই না!’
তারপর আবার উঠে বসে, বালিশে মুখ চেপে ধরে, চোখের পানি লুকাতে চায়, কারণ পুরুষ হয়ে কাঁদা বেমানান, কিন্তু ভালোবাসা তো বাছাই করা যায় না, তাকে পায়ের নিচে চাপা দেওয়া যায় না।
সে আবার শুয়ে পড়ে, বাতি নিভিয়ে দেয়, চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে—‘যা-ই হোক, আমি তোমাকে ছাড়বো না মেহের, যতোই তুমি আমায় পাত্তা না দাও, আমি সব সময় তোমার আশেপাশেই থাকবো , কারণ আমি আর অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে বা কল্পনা করতে পারি না!’ আমার তোমাকেই লাগবে।
------------------------------------------
শহরের আলো-আঁধারি রাতে আলাদা আলাদা মানুষ আলাদা আলাদা চিন্তায় ডুবে আছে—
একজন রাগে, হিংসায় শত্রুতা, অপমান আর লজ্জার ষড়যন্ত্রে মেহেরকে মাটিতে টেনে নামাতে চাইছে।
অন্য দিকে দুইজন দুই প্রান্তের মানুষ নিঃশব্দে প্রেমের জালে মেহেরকে কল্পনায় বুনছে,,,,।
এদিকে মেহের নিজে যুদ্ধ করছে নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য আর,, হৃদয়ের নিঃশব্দ অতীতের যন্ত্রণার সঙ্গে।
ওরা নিজেদের মতো করে তাকে দখল করতে চাইছে, অথচ মেহের কাউকেই আজ পযন্ত নিজের মন খুলে বলতে পারে নি .... সে কেমন করে ক্লান্ত হয়, কেমন করে একা পথ হেটে এতো দূর এসেছে, যেই মেয়ে অন্ধকারের ভয়ে কাঁদত , অথচ আজ সেই মেয়ে হাতে পিস্তল তুলে নিয়ে শত্রুদের সামনে দাঁড়ায়।
রাত গভীর হতে হতে এই শহর নিঃস্তব্ধ হয়, শুধু মানুষের মনের যন্ত্রণা গুলো থেকে যায়, অন্ধকারে চাপা পরে না তা —আর সেই যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নেয় ভালোবাসা, হিংসা, প্রতিযোগিতা, আর ষড়যন্ত্রের সূক্ষ্ম বীজ।
'
,
চলবে....
ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন যেহেতু রিচেক করা হয় না; আর ভালো না লাগলে দয়া করে এড়িয়ে যাবেন।
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প কেউ বাস্তব ভেবে নিবেন না)
👉দুঃখিত কিছু সমস্যার কারণে গল্পের আগের থিম & নায়কের নাম সহ চেঞ্জ করা হয়েছে।
#নিঃশব্দ_নীরিক্ষা #গল্পফ্যাক্ট