Hill Documentary

Hill Documentary ভুবন দৃষ্টিতে আমাদের চোখ,
দৃষ্টিগোচরে যা প্রকাশ করছি তা। সত্য সমাগত, মিথ্যা পরাভূত।

ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে ইউপিডিএফ কেন বিশ্বাসঘাতকতা করে?পার্বত্য চট্টগ্রামের রুক্ষ ভূমি, যেখানে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকেই লু...
02/11/2025

ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে ইউপিডিএফ কেন বিশ্বাসঘাতকতা করে?

পার্বত্য চট্টগ্রামের রুক্ষ ভূমি, যেখানে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য স্বপ্ন এবং যন্ত্রণা, সেখানে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামক সংগঠনটি জাতির মুক্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই সংগঠনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, প্রকাশ পেয়েছে তার অন্তর্নিহিত বিশ্বাসঘাতকতা, স্বজনপ্রীতি এবং ত্যাগী কর্মীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা। গত দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে, ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা এবং জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির মতো অন্যায়কর্মের কারণে অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী সংগঠন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই প্রতিশোধের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ কেউ জীবন রক্ষার্থে পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে শহরে পলায়ন করেছেন, আবার কেউ অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসে 'জাত বিরোধী' ট্যাগ নিয়ে সমাজে অপমানিত জীবন যাপন করছেন। এই প্রতিবেদনটি এমনই একটি কাহিনির মাধ্যমে ইউপিডিএফের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করবে, যা 'হিল নিউজ বিডি ডটকম'-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি। উৎপল চাকমা নামক এক ত্যাগী কর্মীর জীবনকাহিনীকে কেন্দ্র করে এই প্রতিবেদন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে পাঠকরা বুঝতে পারেন কীভাবে একটি সংগঠন তার নিজস্ব সদস্যদের সাথে বেইমানি করে জাতির স্বার্থকে কলঙ্কিত করছে।

ইউপিডিএফের উত্থান এবং অধঃপতন, একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

ইউপিডিএফের জন্ম হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতায়, যেখানে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। সংগঠনটি জাতির মুক্তির নামে গঠিত হলেও, তার কার্যকলাপে প্রকাশ পেয়েছে একটি ভিন্ন চিত্র। চাঁদাবাজি, চাঁদার ভাগবাটোয়ারা, অন্যায়ভাবে হত্যা, অপহরণ, খুন-গুম এবং জাতিগত ভেদাভেদ সৃষ্টি এসব কার্যকলাপ সংগঠনের মূল চরিত্রে পরিণত হয়েছে। দুর্বলের বিপক্ষে রায় প্রদান, দলীয় পদবীতে প্রমোশনে স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়মের কারণে ত্যাগী কর্মীরা অবহেলিত হয়েছেন। ফলে, গত দুই যুগে অসংখ্য কর্মী সংগঠন ত্যাগ করেছেন, এবং তাদের অধিকাংশই প্রতিশোধের শিকার। এই অধঃপতনের মূলে রয়েছে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের স্বার্থপরতা, যারা জাতির অধিকারের নামে পাহাড়ি যুবকদের বিপথগামী করে, চাঁদার টাকা দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। এই নেতারা প্রায়শই ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার বা থাইল্যান্ডে অবস্থান করে, যখন তাদের কর্মীরা পাহাড়ের জঙ্গলে অনিশ্চিত জীবন কাটান।

সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জানা যায়, ইউপিডিএফের দুটি সংবিধান রয়েছে: একটি প্রকাশ্য, যা জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যাতে অধিকারের চবক, মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা এবং ভূমি অধিকারের নামে বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো হয়; এবং অন্যটি গোপন, যা শুধুমাত্র শীর্ষ নেতাদের কাছে থাকে। এই গোপন সংবিধানে চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষ দমন, বাঙালি বিদ্বেষ, নিত্য নতুন ইস্যু সৃষ্টি এবং দলছুট কর্মীদের হত্যাকে 'ধর্ম' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই দ্বৈততা সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছে, কিন্তু ত্যাগী কর্মীদের জীবনকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। যেমন, চাঁদা আদায়কারী কর্মীদের মাসিক ভাতা মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা, যখন শীর্ষ নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকা ভোগ করেন। এই অসমতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়, এবং প্রতিবাদ করলে তাদের নজরদারি করে হত্যা করা হয়।

উৎপল চাকমার মত ত্যাগী কর্মীর জীবনকাহিনী:

এই অধঃপতনের জীবন্ত উদাহরণ হলেন উৎপল চাকমা, যিনি ২০ বছরেরও অধিক সময় ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত ছিলেন। রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি পাড়ায় বাসিন্দা শশী ভূষণ চাকমার পুত্র হচ্ছেন উৎপল চাকমা। তাঁর শিক্ষাজীবন কাউখালী পোয়াপাড়া হাইস্কুলে কাটলেও, পার্বত্য অঞ্চলের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তিনি ২০০৫-২০০৬ সালে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এ যোগ দেন। এরপর তিনি চাঁদা সংগ্রহ গ্রুপে যুক্ত হন, এবং ২০১১ সালে স্থানীয় বাঙালিদের হাতে ধরা পড়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুলিশে হস্তান্তরিত হন। অস্ত্র মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি লক্ষীছড়িতে চলে যান এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে যোগ দেন, যেখানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক হন। পরবর্তীতে তিনি ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপে যুক্ত হন, লক্ষীছড়ির যতীন্দ্র কার্বারি পাড়া, মরাচেঙ্গী, মরণছড়ি, কদুকছড়ি এবং রাজগিরি এলাকায় সক্রিয় ছিলেন।

উৎপল চাকমা সংগঠনের জন্য অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মিছিল-সমাবেশে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, চাঁদা সংগ্রহ, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং নির্যাতন এসব কার্যকলাপে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে প্রতিপক্ষ জেএসএস, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ মুখোশ এবং জেএসএস সংস্কার বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। প্রতিপক্ষদের হত্যা করার জন্য তিনি হন্যে হয়ে ঘুরেছেন, সবকিছু জাতির মুক্তির নামে। কিন্তু এই ত্যাগের বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন অবমূল্যায়ন। সংগঠনে পদবণ্টনে স্বজনপ্রীতি এবং শীর্ষ নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়, যখন সিনিয়র কর্মীরা অবহেলিত হন। উৎপলের মতো ত্যাগীরা জঙ্গলে বৃষ্টি-বাদল, শীত-বর্ষা মোকাবিলা করে, কিন্তু দিনশেষে তাদের ছুড়ে ফেলা হয়।

বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র ও উৎপলের ত্যাগ এবং ইউপিডিএফের প্রতিশোধ:

২০২৪ সালের শুরু থেকে ইউপিডিএফ উৎপলকে নজরদারি করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, প্রথম স্ত্রী-সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিবাহ করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু উৎপলের দাবি, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তার পরিবারে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তাকে অস্থির করা হয়েছে। ফলে তিনি সংগঠন ত্যাগ করেন, এবং তখন থেকে তার বিরুদ্ধে 'জাত বিরোধী' এবং 'মুখোশ' ট্যাগ দেওয়া শুরু হয়। সাম্প্রতিক ঘটনায়, গত ১৩ অক্টোবর লক্ষীছড়ি সেনা জোন থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল যতীন্দ্র কার্বারি পাড়ায় অভিযান চালায়, এবং ইউপিডিএফের পরিচালিত নিউজ পোর্টালে দাবি করা হয় যে উৎপল চাকমা সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিলেন। এতে তার নামের সাথে দূর্জয় চাকমা এবং অজ্ঞাত একজনের নাম যুক্ত করা হয়।

উৎপল এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমাকে সরাসরি না দেখে প্রমাণ ছাড়া মনগড়া অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি লক্ষীছড়িতে ছিলাম কিনা, সেনাবাহিনীর সাথে অভিযানে ছিলাম কিনা এসবের প্রমাণ ছাড়া এটি নিছক ষড়যন্ত্র। ইউপিডিএফের নিজস্ব পেইজ দিয়ে যার তার বিরুদ্ধে লিখলে কী হলো? মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেওয়া ভালো নয়। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে দাঁড়িয়ে যায়।" তিনি আরও বলেন, ইউপিডিএফের মধ্যে পাগল এবং বিবেকহীন মানুষ থাকলে সংগঠন কীভাবে টিকবে? তার এই প্রতিক্রিয়া সংগঠনের চাঁদাবাজি, দমনপীড়ন এবং অধিকারের নামে ভাঁওতাবাজির মুখোশ উন্মোচন করেছে।

ইউপিডিএফের ভয়ের মূলে রয়েছে উৎপলের জ্ঞান তিনি সংগঠনের সশস্ত্র কার্যক্রম, অস্ত্র-গোলাবারুদ, অবস্থান এবং গোপন কৌশল জানেন। সম্প্রতি তিনি সামরিক ইউনিফর্ম, একে-৪৭ এবং ওয়াকিটকি ছেড়েছেন, কিন্তু লক্ষীছড়ি, মানিকছড়ি, গুইমারা এবং কাউখালী এলাকার 'হাঁড়ির খবর' তার জানা। ফলে, সংগঠন তাকে 'বিষফোড়া' হিসেবে দেখছে এবং যেকোনো সময় তার জীবন নাশের চেষ্টা করতে পারে। 'প্রবেশ' গ্রুপের প্রবেশ এবং জয় বসু তার বিরুদ্ধে, যা প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক প্রভাব এবং হাজারো উৎপলের যন্ত্রণা:

উৎপল চাকমা একা নন; হাজারো ত্যাগী কর্মীর জীবন ইউপিডিএফের নীতির কারণে দুর্বিষহ হয়েছে। সংগঠন জেলে যাওয়া কর্মীদের জামিনে গড়িমসি করে, তাদের পরিবারকে ভরণপোষণ করে না, এবং মুক্তির পর নজরদারি করে। পিসিপি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মতো অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা সংগঠনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কিন্তু তাদের ত্যাগকে স্মরণ করা হয় না। বরং, তাদের অবমূল্যায়ন করে বিভিন্ন মাইনাস করা হয়। এই বিশ্বাসঘাতকতা কর্মীদের ক্ষোভ বাড়াচ্ছে, এবং ইউপিডিএফ এর খপ্পরে পড়ে পাহাড়ি যুবকরা আলাদা রাষ্ট্রের মিথ্যা স্বপ্নে যৌবন নষ্ট করছেন।

সামাজিকভাবে, ইউপিডিএফ পাহাড়ি-বাঙালি বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে, যা এ অঞ্চলের শান্তিকে বিপন্ন করছে। চাঁদার টাকা অস্ত্র ক্রয়, সাংগঠনিক খরচ এবং মিডিয়া কভারেজে ব্যয় হলেও, বেশিভাগ অর্থের হিসাব নেই এই টাকা শীর্ষ নেতাদের পকেটে যায়। এই ধোঁকাবাজি যখন কর্মীরা বুঝতে পারেন, তখন তাদের 'জাত বিরোধী' ট্যাগ দেওয়া হয়। ফলে, অনেকে জীবন রক্ষায় পলায়ন করেন বা অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসে অপমানিত জীবন যাপন করেন।

ইউপিডিএফের এই বিশ্বাসঘাতকতা শুধু ত্যাগী কর্মীদের নয়, সমগ্র পাহাড়ি জাতির স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উৎপল চাকমার মতো ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দুই কুল হারিয়েছেন, সংগঠনের অবমূল্যায়ন এবং সমাজের অপমান। এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে, সংগঠনকে তার গোপন নীতি পরিত্যাগ করে সত্যিকারের জাতীয় মুক্তির পথে ফিরতে হবে। অন্যথায়, হাজারো উৎপলের যন্ত্রণা অব্যাহত থাকবে, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চিরতরে বিপন্ন হবে। এই যন্ত্রণার মানবীয় দিকটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রাজনৈতিক সংগ্রামে ত্যাগীরা নয়, স্বার্থপর নেতারা সর্বদা বিজয়ী হয় না, সময়ের সাথে সত্য উন্মোচিত হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনঢাকা, ২ নভেম্বর ২০২৫ (রবিবার): সু...
02/11/2025

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন

ঢাকা, ২ নভেম্বর ২০২৫ (রবিবার): সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা এক বাংলাদেশী নাগরিক জনাব মোঃ ময়নুল হক, অবশেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় আজ মাতৃভূমির মাটিতে পা রাখলেন—ফিরলেন তাঁর আপন ঠিকানায়, তাঁর প্রিয় পরিবারের কাছে।

২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (UNISFA)-তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট-৩ এর একটি টহলদল আবেই বাজার এলাকায় হঠাৎই এক বাংলাদেশী নাগরিকের সন্ধান পায়। উক্ত ব্যক্তির নাম জনাব মোঃ ময়নুল হক, পিতাঃ রজ্জব আলী, গ্রামঃ তালুক বাজিত, ডাকঘরঃ বামনডাঙ্গা, থানাঃ সুন্দরগঞ্জ, জেলাঃ গাইবান্ধা।

জানা যায়, প্রায় ১৯ বছর পূর্বে ঠিকাদারির কাজে সুদানের রাজধানী খার্তুমে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু হঠাৎ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ তার জীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। বহুদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পলায়ন করে চলে আসেন আবেই অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এসময় তিনি হারান পাসপোর্টসহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র, যার ফলে দেশে ফেরা তাঁর জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাৎ পেয়ে তার দেশে ফিরে আসার প্রবল আকুতির কথা জানান।

এ প্রেক্ষিতে আবেই তে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতঃ বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেশে ফেরার আবেদন সেনাসদর এ প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে আবেদনটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে গত ১৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাস কর্তৃক উক্ত ব্যক্তির বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের নিমিত্তে 'ট্রাভেল পারমিট' ইস্যু করা হয়। এছাড়াও তার বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দূতাবাস কর্তৃক বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিমান ভাড়া এবং আনুসাঙ্গিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এরপর গত ২৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেই হতে বিমানযোগে জুবা, সাউথ সুদানে আগমন করেন। জুবা, সাউথ সুদান হতে তিনি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকায় অবতরণ করেন।

দীর্ঘ ১৯ বছর পর সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং তার পরিবারের সাথে মিলিত হতে পেরে জনাব ময়নুল হক খুবই আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়া একজন বাংলাদেশী নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তন এর মতো মানিবক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ আনন্দিত ও গর্বিত। যে কোন প্রয়োজনে দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

© Bangladesh Army


#মানবিকসহায়তা





নেত্র নিউজের Living under Militarisation শিরোনামের প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও অসত্য।Netra News-এর ৩১ অক্টোবর ২০২৫ প্রকাশিত ফিচ...
02/11/2025

নেত্র নিউজের Living under Militarisation শিরোনামের প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও অসত্য।

Netra News-এর ৩১ অক্টোবর ২০২৫ প্রকাশিত ফিচার ফটো-স্টোরি “Living under Militarisation” শিরোনামে প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রায়োগিকভাবে ভুল উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদক Denim Chakma এবং Mashruk Ahmad পাহাড়ের জীবনযাত্রা, সেনা উপস্থিতি ও “সাইলেন্ট অকুপেশন” নিয়ে যে চিত্র উপস্থাপন করেছেন, তা সত্যিকার বাস্তবতার চেয়ে অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ সংক্ষিপ্ত ব্লগে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরব এবং প্রকাশিত তথ্য যে মিথ্যা ও অসত্য তা পাঠকের কাছে উপস্থাপন করবো।

Netra News প্রতিবেদনে সেনা উপস্থিতিকে যেন দমনমূলক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারা লিখেছেন, "Since the beginning of Operation Uttoron in 2001, the Chittagong Hill Tracts have remained heavily militarised. This situation persists today, with indigenous peoples continuing to face ongoing military repression." বাস্তবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি ত্রিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর দুর্গমতা এবং উপজাতি জাতিসত্তার নিরাপত্তায় জন্য সেনাবাহিনীর উপস্থিতি অপরিহার্য। সেনারা মূলত নিরাপত্তা বজায় রাখে, সাধারণ জনগণকে সশস্ত্র চাঁদাবাজ, অপহরণ, খুন-গুম থেকে রক্ষা করে।

Netra News-এর বর্ণনা বনাম বাস্তব চিত্র
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানকে "In a joint forces operation to suppress so-called KNF 'terrorists,' about 43 people were shot dead. Various media outlets reported that the KNF members were terrorists. But among those 43 people, around 19 were ordinary Bawm civilians—including a 13-year-old child." হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবে, চুক্তির পরও বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন স্বায়ত্তশাসন দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সেনাবাহিনী পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং শান্তি স্থাপনে কাজ করছে। অভিযানগুলিতে নিহতদের মধ্যে নিরীহ বেসামরিক মানুষ নেই, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিহতরা সত্যিকারের সন্ত্রাসী ও আইনভঙ্গকারী। মিডিয়ার কিছু ভুল প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে পুরো অভিযানকে “নির্যাতন” হিসেবে চিত্রায়ন করা সঠিক নয়।

পর্যটন ও উন্নয়ন কাজকে “development and tourism in the Chittagong Hill Tracts are state-planned projects aimed at the displacement of indigenous communities” হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে, সরকারী প্রকল্পগুলি পাহাড়ি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য করা হয়। যেমন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান সড়ক, বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থে নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে সামান্য স্থানান্তর তা বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

Netra News প্রতিবেদক কাপ্তাই বাঁধের প্রভাবকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন, "The 'civilisation' that was destroyed in the 1960s through the Kaptai Dam project was not replaced. It was shattered, and its people were left to survive on the fragments." প্রকৃতপক্ষে, ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধ রাঙ্গামাটি জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ, অর্থনৈতিক ও পরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করেছে। প্রকল্পের সময় যেসব উপজাতিরা স্থানান্তরিত হয়েছিল, তবে সরকারি উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক তহবিলের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। প্রতিবেদক দ্বারা বর্ণিত “বিনষ্ট সভ্যতা” ও “প্রজন্ম ধরে ধার্য গভীর যন্ত্রণার ইতিহাস” বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।

Netra News-এর বক্তব্যে সেনা উপস্থিতিকে এক ধরনের বন্দিশালার মতো দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "Through militarisation, particularly since Operation Uttoron began in 2001, the Chittagong Hill Tracts have been turned into a prison." প্রকৃতপক্ষে, সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিচ্ছিন্নতাবাদ এলাকায় আইডি কার্ডের প্রয়োজন এবং চেকপয়েন্ট ব্যবস্থা অপরিহার্য নিরাপত্তা প্রোটোকল। মানুষকে হুমকি বা দমনমূলক পরিবেশে রাখার উদ্দেশ্য নয়, বরং সন্ত্রাস ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণই মূল উদ্দেশ্য।

Netra News প্রতিবেদনে বন কাটা, জলাশয় শুকানো, এবং পানি সংকটের বিষয়ও অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছে। তিনি লিখেছেন, "Due to the reduction in forest cover, streams and springs are drying up." প্রকৃতপক্ষে, কিছু স্থানীয় নদী ও জলাশয়ের গভীরতা মৌসুমি কারণে পরিবর্তিত হয় এবং এই অঞ্চলের মাটি পানি ধারণ ক্ষমতা নেই। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে জলাধার পুনঃখনন ও মেরামত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আর বন নিধনের জন্য ইউপিডিএফ, জেএসএস ও কেএনএফ এর মত সন্ত্রাসীরা দায়ী৷ তারা চাঁদার জন্য কাঠ পাচার করে।

তথ্যভিত্তিক বাস্তব চিত্র:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যেমন জেএসএস সন্তু, ইউপিডিএফ প্রসীত, কেএনএফ, এমএলপি, জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পরও জেএসএস সংগঠনটি পূর্ণভাবে অস্ত্র সরকারের নিকট জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। চাঁদাবাজি, অস্ত্র বাণিজ্য ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক উপদলে বিভক্ত হয়ে তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে প্রাণহানি ঘটে নিরীহ সাধারণ মানুষেরও।
২. সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত সুরক্ষা এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে। ২০০১ সালে ইউপিডিএফ কর্তৃক তিন বিদেশি নাগরিক অপহরণের ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাছাড়া, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জেএসএসকে ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। এর ফলে জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘অপারেশন উত্তোরণ’ শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল চুক্তি-পরবর্তী অস্থিরতা দূর করা, সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ন্ত্রণ করা, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদান। এর আগে একই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল ‘অপারেশন দাবানল’।
৩. সরকারের নেয়া বিভিন্ন অবকাঠামোগত ও পর্যটন প্রকল্প পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সড়ক, সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনজীবন সহজতর ও আধুনিকতর হয়েছে।
৪. পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় স্থানান্তরিত পরিবারগুলোর প্রতি সরকার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ এবং সামাজিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া হয়েছে আইনসঙ্গত ও মানবিক।

Netra News-এর ফিচার ফটো-স্টোরি “Living under Militarisation” পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব পরিস্থিতি অতিরঞ্জিত ও পক্ষপাতদুষ্টভাবে উপস্থাপন করেছে। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমিকা ব্যর্থ ও দমনমূলক হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণের সঙ্গে মেলে না। প্রকৃত পরিস্থিতি হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি নিরাপদ ও উন্নয়নমুখী অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারী নীতি ও সীমান্ত নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায়।

01/11/2025

প্রিয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভাই ও বন্ধুগণ আপনারা যখন সমতল থেকে একটি বাঙালি মেয়ে এনে বিয়ে করেন তখন তো ফেসইবুকে শুধু পোস্ট মারেন,,, কিন্তু একটা মুসলিম ছেলে যখন আপনাদের চাকমা মেয়েদের বিয়ে করে তখন কেন আপনারা মেয়ের উপর টরচারিং শুরু করেন। আপনাদের এই অত্যচারে অনেক যুবতী মেয়েরা বাঙ্গালি ছেলেদের সাথে চলে যায়।

📌জুম পাহাড়।
01/11/2025

📌জুম পাহাড়।

31/10/2025

খাগড়াছড়িতে সেনা অভিযানে কোটি টাকার কাঠ জব্দ, বন বিভাগে হস্তান্তর
#খাগড়াছড়ি #সেনাবাহিনীতে

বর্মাছড়ির দুর্গম পাহাড়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তৎপরতা রোধে সেনা ক্যাম্প স্থাপন অপরিহার্য।খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছ...
31/10/2025

বর্মাছড়ির দুর্গম পাহাড়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তৎপরতা রোধে সেনা ক্যাম্প স্থাপন অপরিহার্য।

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ইউনিয়ন বর্মাছড়ি পাহাড়, জঙ্গল আর ঝিরি-ঝর্ণায় ঘেরা এক দুর্গম জনপদ। এই এলাকায় বহুদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার করেছে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউপিডিএফ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখানে ইউপিডিএফ-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম হেডকোয়ার্টার অবস্থিত, যেখানে শত শত সশস্ত্র সদস্য প্রতিনিয়ত টহল ও নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে। অস্ত্রের ভয় ও চাঁদাবাজির জালে সাধারণ মানুষ আজ নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষার স্বার্থে সম্প্রতি খিরাম সেনা ক্যাম্প থেকে বর্মাছড়িতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ইউপিডিএফ ও তাদের মদদপুষ্ট কিছু জনপ্রতিনিধি “আর্য কল্যাণ বনবিহার”-এর জায়গা দখলের অপপ্রচার চালিয়ে সেনা ক্যাম্পের বিরোধিতায় নেমেছে। তারা ধর্মীয় অনুভূতি উসকে দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ নির্ধারিত স্থানটি সরকার মালিকানাধীন খাসজমি, যার সঙ্গে কোনো ধর্মীয় স্থানের সম্পর্ক নেই।

ইউপিডিএফের এই বিরোধিতা স্পষ্টত তাদের অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ঘাঁটি রক্ষার কৌশল। পার্বত্য শান্তিচুক্তির দোহাই দিয়ে সেনা ক্যাম্পের বিরোধিতা করা তাদের মিথ্যাচার, কারণ এই সংগঠনই প্রথমে চুক্তির বিরোধিতা করে পাহাড়ে নতুন সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। সেনা ক্যাম্প স্থাপিত হলে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের রাজত্ব ভেঙে পড়বে এই আশঙ্কাতেই তারা মরিয়া।

বর্মাছড়ির জনগণ গোপনে সেনা ক্যাম্পের পক্ষে, কারণ তারা চায় শান্তি, নিরাপত্তা ও মুক্ত নিঃশ্বাস। তাই রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা ও পার্বত্য শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বর্মাছড়িতে স্থায়ী সেনা ক্যাম্প এখন সময়ের দাবি। এটি শুধু সামরিক প্রয়োজন নয় এটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও সাধারণ মানুষের মুক্তির প্রশ্ন।

30/10/2025

শহরের বিভিন্ন হোটেলে দেহব্যবসা জড়িত উপজাতি সুন্দরী যুবতীরা।

সেনা অভিযানে চাঁদার উৎসের কোটি টাকার অবৈধ কাঠ জব্দ: মাথায় হাত ইউপিডিএফের।খাগড়াছড়ি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বুধবার (২৯ অক্টোব...
30/10/2025

সেনা অভিযানে চাঁদার উৎসের কোটি টাকার অবৈধ কাঠ জব্দ: মাথায় হাত ইউপিডিএফের।

খাগড়াছড়ি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বুধবার (২৯ অক্টোবর) সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশেষ অভিযানে ইউপিডিএফ (মূলদল) দ্বারা সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ জব্দ করা হয়েছে। বর্মাছড়ির দেওয়ান পাড়ায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় প্রায় ৪ হাজার ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অভিযানের টের পেয়ে ইউপিডিএফ সদস্যরা পালিয়ে যায়। জব্দকৃত কাঠ বর্তমানে স্থানীয় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন।

সূত্র জানায়, ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভ বনাঞ্চল এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের নিষিদ্ধ গাছগাছালি কেটে খাল দিয়ে পাচার করে আসছিল। অবৈধ কাঠ এবং আদায়কৃত চাঁদার অর্থ দিয়ে তারা প্রতিদেশী দেশগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন থেকে ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করে পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করত।

নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বর্মাছড়িতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অভিযান পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করার চেষ্টা করলে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে থাকে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সম্প্রীতি রক্ষার কারণে ক্যাম্প স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, বর্মাছড়ি, খিরাম এবং সত্তার খাল এলাকায় ইউপিডিএফের কাঠ পাচারের প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত। এই অর্থ ব্যবহার করে তারা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায়।

অভিযানের পর স্থানীয় অধিবাসীরা সেনাবাহিনীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সব ধরনের অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করার জন্য তাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, পাহাড়ে অস্ত্রবাজদের কার্যক্রম মূলত এই কাঠের চাঁদারের অর্থায়নের কারণে গড়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ জব্দ হওয়ার পর ইউপিডিএফ নেতারা লক্ষ্য করেছেন যে তাদের দীর্ঘদিনের অর্থ উপার্জনের উৎস একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাঠের চাঁদার মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম চলছিল, সেই ঘাঁটি এবার ভেঙে যাচ্ছে। আর ইউপিডিএফ এখন কার্যত মাথায় হাত-অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সাংগঠনিক পরিকল্পনায় আঘাত আসে।

পাহাড়ে নিরীহ যুবকদের হত্যার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজের একযোগে বিক্ষোভ,,,...
30/10/2025

পাহাড়ে নিরীহ যুবকদের হত্যার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজের একযোগে বিক্ষোভ,,,

খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা রামসু বাজারে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে তিনজন পাহাড়ি যুবককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ে আবারও ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আজ (২৯ অক্টোবর) বুধবার তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে একযোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, যুব পরিষদ, এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পিসিপি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিগুলোতে শত শত সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুবক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
সকালে খাগড়াছড়ি শহরে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল চেঙ্গি স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা পাহাড়ে চলমান ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পিসিপি’র উপদেষ্টা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, “আজ পাহাড়ে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তারাই শান্তির মুখোশ পরে আন্তর্জাতিক মহলে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে-নইলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।”

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি এডভোকেট আফসার রনি, ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন কায়েশ, এবং কেন্দ্রীয় মহিলা পরিষদের সভাপতি সালমা আহমেদ মৌসহ আরও অনেক নেতা। বক্তারা পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ও দমননীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনার অংশযেখানে শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি জনগণকেও ভয়ভীতির মধ্যে রেখে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা চলছে।”

অন্যদিকে রাঙামাটির বনরূপা বাজার এলাকায় সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে একইভাবে উত্তাল হয়ে ওঠে জনসাধারণ। “রক্তের বদলে বিচার চাই”, “ইউপিডিএফ সন্ত্রাস বন্ধ করো”, “পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনো” এমন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বনরূপা এলাকা। পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি’র কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার। তিনি বলেন, “আইনের শাসন যেখানে ব্যর্থ হয়, সেখানে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি সেই ব্যর্থতারই প্রতিচ্ছবি।”

এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সহ-সভাপতি কাজী জালোয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর হোসেন, পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম এবং সরকারি কলেজ শাখার নেতা নয়ন বড়ুয়া প্রমুখ। বক্তারা ইউপিডিএফের হাতে নিহত তিন পাহাড়ি যুবকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে বান্দরবানে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে আবু সাঈদ মুক্ত মঞ্চের সামনে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ। পিসিসিপি বান্দরবান জেলা সভাপতি আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে এবং দপ্তর সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তারা বলেন, “একদিকে ইউপিডিএফ বাহিনী নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে, অন্যদিকে তারা হত্যাকাণ্ড, অস্ত্র ব্যবসা ও জিম্মি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এই দ্বিচারিতা আর সহ্য করা হবে না।

বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি বান্দরবান জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজালাল, পিসিএনপি পৌর কমিটির সভাপতি শামসুল হক শামু, পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক হাবিব আল মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হোসেন ইমন, জমির উদ্দীন, জানে আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, “যে পাহাড়ে শান্তির স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই পাহাড় আজ সন্ত্রাসের কবলে। প্রশাসন ও সরকারের উচিত এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”
তিন জেলার এই সমন্বিত আন্দোলনকে পাহাড়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ অতীতে পাহাড়ে নানা রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও, এবার সব সংগঠন একত্রিত হয়ে একই দাবিতে রাজপথে নেমেছে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসের বিচার ও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা। বক্তারা স্পষ্টভাবে বলেন, “যদি পাহাড়ে উন্নয়ন ও সহাবস্থান চাই, তবে আগে এই সন্ত্রাসী শক্তির মূলোৎপাটন করতে হবে।”

মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষও জানায়, তারা পাহাড়ে শান্তি চায়, সহাবস্থান চায়, কিন্তু ইউপিডিএফের ভয়ে বহু মানুষ আজ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। বাজারে ব্যবসা করা, রাস্তা দিয়ে চলাচল করা, এমনকি কৃষিকাজ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একাধিক বক্তা বলেন, “ইউপিডিএফ আজ পাহাড়ের উন্নয়নবিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তারা চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, আর সেই টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে নিজের ভাইদেরই হত্যা করছে।”
সমাবেশ থেকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয় গুইমারায় তিন যুবক হত্যার ঘটনায় দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে। বক্তারা বলেন, “যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তবে পাহাড়ের মানুষ আর চুপ থাকবে না; তারা আবার রাজপথে নামবে, যেমন আজ নেমেছে।”

বক্তাদের মতে, ইউপিডিএফের সন্ত্রাস শুধু নিরীহ পাহাড়িদের নয়, বরং পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বক্তারা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, “সন্ত্রাসীদের তৎপরতা যদি এখনই দমন না করা হয়, তবে পাহাড়ে অরাজকতা আরো বৃদ্ধি পাবে।”
দিনব্যাপী এই বিক্ষোভ কর্মসূচী শেষে তিন জেলার ছাত্র ও যুবনেতারা একটি যৌথ ঘোষণা দেন “আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই, কিন্তু সেই শান্তি সন্ত্রাসীদের দয়া নয়, আইনের শাসনের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

এভাবেই আজকের তিন পার্বত্য জেলার আন্দোলন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে পাহাড়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাস আর বরদাস্ত করা হবে না, হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে। বক্তাদের কণ্ঠে, সাধারণ মানুষের মুখে একটাই স্লোগান “শান্তি চাই, ন্যায় চাই, পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ চাই।”

“পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা উপস্থিতি: শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ভারসাম্য”পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও জাতীয় আলোচনার কে...
30/10/2025

“পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা উপস্থিতি: শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ভারসাম্য”

পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবিকে ঘিরে যে রাজনৈতিক তৎপরতা, বিদেশি প্রভাব এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে, তা দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বিগ্ন করেছে। একদিকে কিছু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন “ডিমিলিটারাইজেশন” বা সেনা উপস্থিতি হ্রাসের দাবি তুলছে, অন্যদিকে বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে সেনাবাহিনীই এখনো পাহাড়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় ভরসা।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছিল অস্ত্রবিরতি ও আস্থার এক প্রতিশ্রুতি হিসেবে। কিন্তু এর প্রায় তিন দশক পরও পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি আসেনি। সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত, চাঁদাবাজি, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাব এখনো শান্তি প্রক্রিয়ার বড় বাধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনা উপস্থিতি না থাকলে পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

দীর্ঘ সময় ধরে পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনী কেবল নিরাপত্তা রক্ষাই নয়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ, চিকিৎসাসেবা, দূরবর্তী গ্রামে খাদ্য সহায়তা এসব কাজের বেশিরভাগই করেছে সেনাবাহিনী। এসব কারণে স্থানীয় জনগণের বড় অংশ তাদের ওপর আস্থা রাখে। বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির দুর্গম অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, তারা জানেন সেনা টহল না থাকলে সেখানে রাতে শান্তিতে ঘুমানো কঠিন। পাহাড়ের সাধারণ মানুষের ভাষায়, সেনাবাহিনী এখন নিরাপত্তার প্রতীক, ভয় নয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে “বিদেশি ষড়যন্ত্র” এবং কিছু এনজিওর নেপথ্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, “পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহারের দাবি মূলত বাহ্যিক চাপে তৈরি একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। বাস্তবে এটি করলে পুরো অঞ্চল অনিশ্চয়তায় পড়বে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”

অন্যদিকে, পার্বত্য এলাকায় সম্প্রতি পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি ছোট সশস্ত্র গোষ্ঠী। রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় গুলিবিনিময়, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত অন্তত ১২টি সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় বিদেশে পালিয়ে থাকা কিছু নেতার যোগাযোগ ও অর্থায়নের প্রমাণও পাওয়া গেছে। ফলে অনেকেই মনে করেন, সেনা প্রত্যাহারের দাবি মূলত এই গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমকে সহজতর করার কৌশল।

পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি চাইলে কেবল চুক্তির রাজনৈতিক দিক নয়, নিরাপত্তা বাস্তবতাও বিবেচনায় নিতে হবে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কমানো মানে শুধু পাহাড়ের মানুষকেই ঝুঁকিতে ফেলা নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলা। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি কৌশলগত অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু, সীমান্ত অস্থিরতা ও আন্তঃদেশীয় মাদক চোরাচালানের মতো সমস্যা জটিলভাবে জড়িত। এমন অঞ্চলে সেনাবাহিনী ছাড়া স্থিতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা কল্পনাই করা যায় না।

স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের প্রবণতা বাড়াতে হবে। সেনাবাহিনীর সিভিক অ্যাকশন প্রোগ্রামগুলো আরো সম্প্রসারিত করা দরকার, যাতে সাধারণ মানুষ শান্তির সুফল সরাসরি অনুভব করতে পারে। একইসঙ্গে পার্বত্য শান্তিচুক্তির অসম্পূর্ণ ধারাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে স্থানীয় জনগণের আস্থাও পুনরুদ্ধার করা জরুরি।

অবশ্য বিদেশি প্রভাবের প্রসঙ্গটি এখন সবচেয়ে আলোচিত। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা সম্প্রতি পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে সেনা কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সেনা উপস্থিতি না থাকলে পাহাড়ে অপরাধীরা প্রভাব বিস্তার করবে, যা কেবল পাহাড় নয়, সমতল জনপদেও প্রভাব ফেলবে।

এই বাস্তবতায় দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে একটি পরিষ্কার দায়িত্ব রয়েছে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে যেন কোনো বিদেশি স্বার্থ বা গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র সফল না হয়। সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে সরানোর দাবি যতই মানবিক আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হোক না কেন, বাস্তবে এটি শান্তি নয়, অস্থিরতা বয়ে আনবে।

পাহাড়ের মানুষ যেমন উন্নয়ন ও শান্তি চায়, তেমনি বাংলাদেশ চায় তার সীমান্তে স্থিতিশীলতা। এই দুই লক্ষ্য একে অপরের পরিপূরক। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সেই ভারসাম্যের অন্যতম স্তম্ভ। পাহাড়ে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন একদিন নিশ্চয় সম্ভব হবে, কিন্তু সেই দিন আসবে তখনই, যখন সেনাবাহিনীর ভূমিকা আরো গঠনমূলকভাবে মূল্যায়িত হবে, রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে থেকে। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে, তবে সেই শান্তি টিকিয়ে রাখতে হলে সেনাবাহিনীর দায়িত্বকে দুর্বল নয়, বরং শক্তিশালী করাই এখন সময়ের দাবি।

একইসঙ্গে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, পাহাড়ে শান্তির প্রক্রিয়া কেবল নিরাপত্তা দিয়ে নয়, উন্নয়ন ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির মাধ্যমেই টেকসই হতে পারে। সেনাবাহিনী সেখানে একটি সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করছে যেখানে উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সম্প্রীতি একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেনাবাহিনী পরিচালিত “সেনা চিকিৎসা সেবা” বা মেডিকেল ক্যাম্প, দুর্গম গ্রামে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, কৃষি ও পানি প্রকল্পের মতো উদ্যোগ স্থানীয়দের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন এনেছে। এগুলো শুধু মানবিক কার্যক্রম নয়, বরং আস্থার ভিত্তি তৈরি করছে।

অন্যদিকে, পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও এখন দায়িত্ব রয়েছে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করে জনগণের কাছে জবাবদিহি তৈরি করা। যারা অস্ত্রধারণ করে শান্তিচুক্তিকে অস্বীকার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে রাষ্ট্রকেই নয়, স্থানীয় সমাজকেও। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব তখনই, যখন স্থানীয় জনগণ সেনাবাহিনীকে সহযোগী হিসেবে দেখবে, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়। সেই মানসিকতা তৈরি হচ্ছে ধীরে ধীরে, কিন্তু তা ভেঙে দিতে বিদেশি তহবিলনির্ভর কিছু গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী সবসময় জাতীয় সংকটে নিরপেক্ষ, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও রাষ্ট্রবাদী শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। পাহাড়েও সেই দায়িত্ব তারা পালন করছে নিষ্ঠার সঙ্গে। যেসব রাষ্ট্রে সীমান্ত দুর্বল, সেখানেই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হয়। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি আসলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক।

এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐকমত্য, যাতে কোনো দল বা গোষ্ঠী এই প্রশ্নে বিভাজন তৈরি না করতে পারে। সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তা বাস্তব পরিস্থিতি নয়, বরং রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের জনগণ এই বাস্তবতা বুঝতে পারছে এ কারণেই পাহাড়ে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে অধিকাংশ মানুষ শান্তির নিশ্চয়তা হিসেবে দেখছে।

সেনাবাহিনীর ত্যাগ, তাদের উন্নয়নমূলক অবদান এবং জনগণের সঙ্গে আস্থা তৈরির প্রচেষ্টা আজ এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে। এই অধ্যায়কে রাজনৈতিক স্বার্থে বিঘ্নিত করা মানে শুধু পাহাড় নয়, গোটা জাতির নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই পাহাড়ে শান্তির ভবিষ্যৎ এখনো সেনাবাহিনীর উপস্থিতির সঙ্গেই গভীরভাবে জড়িয়ে আছে এটাই আজকের বাস্তবতা, এবং এটিই বাংলাদেশের নিরাপত্তার শক্তিশালী ভিত্তি।

Address

Rangamati
Khagrachhari
4555

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Hill Documentary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Hill Documentary:

Share