![👉বেলা ফুরাবার অাগে বই থেকে নেওয়াঃ১৬. আমি হব সকাল বেলার পাখি ।[ক]আমাদের শৈশবের সাথে যেন ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে কাজী নজর...](https://img5.medioq.com/368/568/114344593685688.jpg)
15/07/2020
👉বেলা ফুরাবার অাগে বই থেকে নেওয়াঃ
১৬. আমি হব সকাল বেলার পাখি ।
[ক]
আমাদের শৈশবের সাথে যেন ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি’ কবিতাটি। সূয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে লাইনটা কত হাজার বার আওড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সূয্যি মামা জাগার আগে জেগে ওঠার সাথে যে একটা নৈসর্গিক ব্যাপার জড়িয়ে আছে, সেটা বুঝে উঠতে পেরেছি আরও অনেক পরে। সূয্যি মামা জাগার আগের সময়টুকুই তাে সুবহে সাদিকের সময়। পৃথিবীর পবিত্রতম মুহূর্ত। শান্ত-সজীব, নির্জন-নিষ্কলুষ মুহূর্তই সুবহে সাদিক। কবিতায় বারবার সকাল বেলার পাখি হবার সাধের কথা বললেও আমরা ক'জন হতে পারি সুবহে সাদিকের ভ্রমর? আমাদের রাতগুলাে কেটে যায় মৌজ-মাস্তিতে। আর সুবহে সাদিকে আমরা বেঘাের ঘুমে থাকি অচেতন। আমাদের চৈতন্যহীনতায় সকাল পার হয়ে দুপুর গড়ায়। আমরা না হতে পারি নজরুলের সকাল বেলার পাখি, না হয়ে উঠতে পারি সুবহে সাদিকের গুঞ্জরিত ভ্রমর।
মুসলিম হিশেবে আমাদের নিত্যদিনকার ব্যর্থতা শুরু হয় ফজর থেকে। ফজরের সালাতে শামিল হতে না পারার অর্থই হলাে দিনের শুরুটা হয় শয়তানের কাছে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। পরাজয়’ শব্দটা আমাদের কাছে অতীব অপছন্দের! আমরা পরাজিত হতে অপছন্দ করি। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতে চাই না আমরা। জীবনের কোথাও কোনাে ছন্দপতন হােক—ব্যাপারটাই আমাদের কাছে অপ্রত্যাশার। কিন্তু
150
দিনের পর দিন আমরা যে শয়তানের কাছে পরাজিত হচ্ছি, হেরে যাচ্ছি, হেরে নাস্তানাবুদ হচ্ছি তা নিয়ে আমাদের কোনাে ভাবান্তর নেই। নেই কোনাে চিন্তার সময়। যেন আমরা শয়তানের কাছে পরাজিত হওয়ার জন্যই দুনিয়ায় এসেছি। অথচ শয়তান অভিশপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ—মানুষ হিশেবে আমাদের যােগ্যতাকে অস্বীকার করা, আর আমরা আশরাফুল মাখলুকাত! সৃষ্টির সেরা জীব! তথাপি জীবনের পদে পদে শয়তানের কাছে আমাদের নির্লজ্জ পরাজয় বরণ করতে হয়।
আরবিতে খুব চমৎকার একটি কথা আছে। বলা হয়, “ফজর হলাে শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের প্রথম বিজয়। সত্যিই তা-ই। ফজরের সালাতের জন্যে আরামের বিছানা ছেড়ে ওঠা আসলেই যুদ্ধজয়ের সমান। কষ্টের একটা কাজ। তবে কষ্টটা মুনাফিকদের জন্য। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকদের জন্য ফজর এবং ইশার সালাতের চেয়ে কষ্টকর আর কিছুই নেই। [1]
নবিজির দেওয়া মুনাফিক তকমা যার গায়ে লেগে যায়, তার আখিরাতে কেমন দৈন্যদশা হতে পারে? আখিরাতে সে কতটা দেউলিয়া হবে সেটা কি অনুমেয় নয়? শাইখ বদর বিন নাদের আল-মিশারি বলেছেন, ‘আপনি যদি ফজরের সালাতের জন্য ঘুম থেকে জাগতে না পারেন, তাহলে নিজের জীবনের দিকে তাকান এবং জলদি নিজেকে সংশােধন করুন, কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফজর সালাতের জন্য কেবল তার প্রিয় বান্দাদেরকেই জাগ্রত করান। ঠিক এজন্যেই মুনাফিকদের জন্য ফজরের সালাত এত কঠিন!
আমরা ফজরে জাগতে পারি না। কিন্তু কখনাে কি একবার নিজের জীবনের দিকে তাকিয়েছি গভীরভাবে? কখনাে কি ভেবেছি কেন আমি ফজরে উঠতে পারি না? কেন ফজরে মুয়াজ্জিনের সুমধুর সুর আমার কানে এসে লাগে না? আল্লাহর যে প্রিয় বান্দারা সুবহে সাদিকের প্রায়ান্ধকার ভেদ করে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, আমি কেন তাদের দলভুক্ত হতে পারি না? আমার কোন সে পাপ যা আমাকে হতে দেয় না ফজরের পাখি?
ফজরের সালাতের গুরুত্ব আমাদের মুমিন-জীবনে অপরিসীম। নবিজির আরেকটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি—তিনি বলেছেন, মানুষেরা যদি ফজর এবং
151
ইশার সালাতের গুরুত্ব বুঝতে পারত, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ফজর আর ইশার সালাতে উপস্থিত হতাে। [1]
আচ্ছা, যদি বলা হয় যে, আপনাকে বিশ হাজার টাকা দেওয়া হবে, বিনিময়ে আপনি হামাগুড়ি দিয়ে ফজরের সালাতের জন্য মসজিদে আসবেন। আপনি কি রাজি হবেন? আমার ধারণা আপনি রাজি হবেন না। অথচ নবিজি বলছেন, যদি আমরা ফজর সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারতাম, যদি বুঝতে পারতাম যে কতটা মূল্যবান ফজরের সালাত, তাহলে আমরা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতের জন্য চলে আসতাম মসজিদে। ফজর আর ইশার সালাত কতটা গুরুত্ব বহন করলে নবিজি এমন উপমা ব্যবহার করতে পারেন, ভাবুন তাে!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যখন কোনাে কিছু নিয়ে শপথ করেন, তখন বুঝতে হবে সেই জিনিসটা সাধারণ কোনাে জিনিস নয়। আপনি কি জানেন ফজরের সময় নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে শপথ করেছেন? এমনকি ‘ফজর নামে কুরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা পর্যন্ত বিদ্যমান। আল্লাহ বলছেন, “শপথ সুবহে সাদিকের।[২] সেই সুবহে সাদিক যখন ফজরের ওয়াক্ত হয়। সেই সময়ের শপথ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা করছেন, যখন আপনি-আমি কম্বলের নিচে আরামের ঘুমে বিভাের!
অফিসের কাজের জন্য আমরা ভােরে জাগতে পারি। ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার জন্য আমরা সকাল সকাল জেগে উঠতে পারি। বাস যাতে মিস না হয়, ট্রেন যাতে আমাদের রেখে চলে না যায়, সেজন্যে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘুম থেকে জেগে প্রস্তুত হতে পারি। কিন্তু হায়! যে অনন্ত সময়ের পানে আমাদের যাত্রা করতে হবে, সেই যাত্রার প্রস্তুতির জন্য সুবহে সাদিকের সময়ে জেগে উঠে পনেরােটা মিনিট খরচ করতে আমাদের শরীর কুলােয় না। মন সায় দেয় না। আমরা চাকুরির প্রমােশান চাই, পরীক্ষায় ভালাে ফলাফল চাই, জীবনে সফল হতে চাই। কিন্তু যিনি এসব দানের মালিক, যার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সম্মান, প্রাচুর্য আর সফলতার ভান্ডার, তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য আমরা বিছানা ছাড়তে রাজি নই।
152
ছােটবেলায় তােতাপাখির মতন পড়েছি, Early to bed and early to rise, makes a man healty, wealthy and wise'. এই কবিতার সাথে বহু আগে বলা নবিজির এই হাদিসের কোনাে মিল পান কি না দেখুন তাে। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজর সালাত পড়ল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল।[১] আল্লাহর জিম্মায় যাওয়া মানে বুঝতে পারছেন? আপনার ঈমান-আমল থেকে শুরু করে সবকিছুর সংরক্ষণের ভার তখন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিয়ে নেন। যদি বলা হয় যে, আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স ফোর্সের সবচেয়ে চৌকশ বাহিনী দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, ব্যাপারটা কেমন দেখাবে বলুন তাে? নিশ্চয় খুব চমৎকার, তাই না? আপনি তখন নিজেকে দুনিয়ার অন্যতম সেরা সেলিব্রিটি ভাববেন। আপনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে চৌকশ সৈন্যের দল—এটা ভাবতেই আপনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন। তাহলে একবার ভাবুন, আপনাকে যদি স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাই নিরাপত্তা দেন, আপনার মাথার ওপর সমস্ত দিন যদি আল্লাহর নিরাপত্তার চাদর টানানাে থাকে—কেমন হবে সেই নিরাপত্তা বেষ্টনী? সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে আপনার ক্ষতি করে এমন সাধ্য আছে কারও? আল্লাহর চাইতে উত্তম নিরাপত্তা আর কে দিতে পারে, বলুন?
আচ্ছা, রামাদান মাসের পরে ঠিক কত রাত আপনি তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য ঘুম থেকে জেগেছেন? কত রাত আপনি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন? সম্ভবত আমাদের মধ্য থেকে খুব কমসংখ্যক লােককেই পাওয়া যাবে যারা রামাদানের পরে তাহাজ্জুদ আদায় করেছে। নিয়মিত না হলেও অনিয়মিত। হতে পারে আমাদের অনেক সমস্যা, অনেক কাজের চাপ, পড়াশােনার ব্যস্ততার কারণে তাহাজ্জুদ পড়া হচ্ছে না। কিন্তু আমরা জানি কি, রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য না জাগতে পারলেও এমন একটা কাজ আছে যা করতে পারলে আমরা রাতভর নফল সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সমান সাওয়াব পেতে পারি? এক ঘণ্টা কিংবা দুই ঘণ্টা নয়। সারা রাত জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করলে যে পরিমাণ সাওয়াব আপনি পাবেন, এই কাজটি করলে ঠিক একই পরিমাণ সাওয়াব আপনার আমলনামাতে যুক্ত হয়ে যাবে। তাহাজ্জুদের জন্য জাগলে আপনি হয়তাে দুই রাকআত, চার কিংবা ছয় রাকআত সালাত পড়েন। সারা রাত তাে আর সালাত আদায় করেন না। কিন্তু এমন একটা কাজ আছে যা করলে আপনি সারা রাত নফল
153
সালাত আদায়ের সাওয়াব পেয়ে যাবেন। চমৎকার না ব্যাপারটা! নিশ্চয় জানতে চাইছেন কোন সে কাজ, তাই তাে? তাহলে নবিজির মুখ থেকেই শুনুন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামাআতে আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে সালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করল, সে যেন পুরাে রাত জেগে সালাত আদায় করল।[১][২]
খুব সহজ আমল, কিন্তু বিনিময়টা কত বিশাল দেখুন! ইশার সালাতের সময় আপনার যত ব্যস্ততাই থাকুক, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আযান হলে মসজিদ খুজে নিন। হাতের কাজ রেখে ওযু করে মসজিদ পানে বেরিয়ে যান। একাগ্রতার সাথে ইমামের পেছনে ইশার সালাতটা আদায় করে ফেলুন। ব্যস, ওই রাতের অর্ধেকটা যদি সালাতে কাটিয়ে দিতেন, তাহলে যে পরিমাণ সাওয়াব আপনি পেতেন, কেবল মসজিদে এসে ইশার সালাত পড়ার কারণে আপনি সে পরিমাণ সাওয়াবের মালিক হয়ে গেলেন। এরপর সুবহে সাদিকের সময় ঘুম থেকে জেগে উঠে আপনি যখন মসজিদে এসে জামাআতের সাথে ফজর সালাত আদায় করেন, তখন পুরাে রাত ইবাদত তথা সালাত আদায়ের সাওয়াব আপনার আমলনামায় উঠে যায়। কী বিরাট এক সুযােগ আমাদের আমলনামা ভারী করার! কিন্তু আমরা সেই সুযােগ লুফে নিচ্ছি তাে?
একটি দৃশ্য কল্পনা করা যাক এবার। আপনার সবচেয়ে প্রিয় সেলিব্রিটি কে? যারা ফুটবল পছন্দ করেন, তারা হয়তাে মেসি কিংবা রােনালদোর নাম বলবেন। ক্রিকেটপ্রেমীরা বলবেন শচীন, রিকি পন্টিং, সাঙ্গাকারা কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সের নাম। যাদের গান পছন্দ তারা সুরের জগতের কোনাে রথী-মহারথীর নাম তুলে আনবেন। এখন আপনাকে যদি বলা হয়, যে সেলিব্রিটির কাছে পৌঁছানাে আপনার কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতাে ব্যাপার—তার সামনে রােজ দুবার করে আপনার নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি আপনার ব্যাপারে নিজ থেকে জানতে চাচ্ছেন, আপনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, ব্যাপারটা কেমন হবে? আপনি হয়তাে ভাবছেন, আরেহ! এটা তাে দারুণ একটি ব্যাপার। কিন্তু এটা কি সম্ভব?
154
সম্ভব নয়। দুনিয়ার কোনাে সেলিব্রিটিই আপনাকে এতটা মূল্যায়ন কখনােই করবে না। তার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া তাে দূরের ব্যাপার, আপনি যে দেশে থাকেন, সেই দেশের নামও হয়তাে সে কোনােদিন শােনেনি। বিশ্বাস করুন। অথচ রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ তাআলা, যিনি সমস্ত কিছুর একমাত্র অধিপতি, যার শান-মান-শওকতের সামনে এই জগৎ-মহাজগতের সবকিছুই তুচ্ছাতিতুচ্ছ, সেই মহামহিম আল্লাহ তাআলা রােজ আমাদের খবর রাখেন। আমরা যখন ফজরের সালাতে দাঁড়াই, তখন একদল ফেরেশতা পৃথিবী হতে আসমানের দিকে যাত্রা করে আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে জানতে চান, তােমরা আমার অমুক অমুক বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে?' তখন ফেরেশতারা বলে, “রাব্বল আলামিন! আমরা আপনার অমুক অমুক বান্দাকে সালাতরত অবস্থায় রেখে এসেছি।[১]
চিন্তা করুন, সুবহে সাদিকের সময়ে আরামের বিছানা ছেড়ে আমরা যখন মসজিদে এসে ফজরের জামাআতে দাঁড়াই, আমাদের মর্যাদা, আমাদের কথা, আমাদের অবস্থানের বর্ণনা তখন সাত আসমান ভেদ করে আল্লাহর আরশে আযীমে পৌঁছে যায়! আমরা কি চাই না, আমাদের নাম রােজ রােজ আরশে আযীমে উচ্চারিত হােক? আমরা কি চাই না, আমাদের নাম রােজ রােজ ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে বর্ণনা করুক? দুনিয়ার সেলিব্রিটিদের কাছে পৌঁছাতে হলে আমাদের কত কসরত, কত আয়ােজন, কত সুযােগের অপেক্ষা করতে হয়। অথচ এই আসমান-জমিনে যিনি রাজাদের রাজা, যিনি মালিকদের মালিক, তার কাছে পৌঁছানাে কতই-না সহজ! কেবল সুবহে সাদিকে উঠুন। নিজেকে পবিত্র করুন। মসজিদে আসুন। একাগ্রচিত্তে সালাতে দাঁড়িয়ে যান। ব্যস! এমন সহজতর সুযােগ আমরা যারা হেলায় মিস করি, কতই-না অভাগা আমরা!
ছােট বাচ্চারা যখন মায়েদের কাছে কিছু চায়, তখন মায়েরা বলেন, “আগে ওটা করাে, তাহলেই এনে দেবাে। ছােটরা মায়ের আদেশ পালন করে। মায়ের আদেশ পালন করা যতখানি না বড় ব্যাপার, তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলাে সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পাওয়ার লােভ। জীবনে তাে কত কিছু পাওয়ার সাধ আছে আমাদের, তাই না? জান্নাত পাওয়ার সাধ কি সেই তালিকায় আছে? আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠব, হ্যাঁ, আমরা জান্নাতে যেতে চাই। নবিজি আমাদের জানাচ্ছেন, আমরা যেন দুই শান্ত
155
সময়ের সালাত আদায় করি। তাহলে আমরা সহজেই জান্নাতে যেতে পারব ১] দুই শান্ত সময়ের সালাত কোনগুলাে? সেগুলাে হলাে ফজর এবং আসর। এই দুই ওয়াক্তে প্রকৃতি থাকে শান্ত, সজীব, নির্মল। আমরা যদি ফজর এবং আসর সালাতে তৎপর হই, আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ মসৃণ হবে। জান্নাত তাে আমাদের জীবনের পরম আরাধ্য। সুমধুর কলকল ধ্বনির নহর, চিরসবুজ উদ্যান, নয়নজুড়ানাে ঐশ্বর্যমণ্ডিত এমন বাগানের বাসিন্দা হওয়ার জন্য আমাদের হতে হবে সুবহে সাদিকের পাখি। যে পাখি রবের স্মরণে জেগে ওঠে। যার কণ্ঠ বেয়ে ঝরে পড়ে রবের মহিমা।
ফজর ছেড়ে দিয়ে আমরা নিজেদের জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিই আল্লাহর বারাকাহ। একবার একলােক ইবরাহিম ইবনু আদহাম রাহিমাহুল্লাহকে বলল, “বারাকাহ বলতে কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
লােকটার কথা শুনে হাসলেন ইবরাহিম ইবনু আদহাম। বললেন, ‘কুকুর এবং ভেড়া চেনাে?
“কোনটার প্রজনন ক্ষমতা কেমন?
‘একটা কুকুর সাতটা পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। অন্যদিকে, একটা ভেড়া বাচ্চা দিতে পারে বড়জোর তিনটি।
‘তােমার চারপাশে তাকালে, দুটির ভেতরে কোন প্রাণীটিকে তুমি সবচেয়ে বেশি দেখতে পাও?
‘ভেড়াই বেশি দেখি।
কিন্তু ভেড়া তাে এমন এক প্রাণী যাকে নিয়মিত জবাই করা হয় এবং যার মাংস মানুষ খায়, তাই না?
‘কুকুর কি জবাই করা হয়? কুকুরের মাংস কেউ খায়?
‘তারপরও কুকুরের চাইতে ভেড়ার সংখ্যা দুনিয়ায় বেশি।
156
এর কারণ?
এর কারণ হলাে বারাকাহ। ভেড়া রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঠিক ফজরের আগে আগে তারা জেগে ওঠে। ফলে ফজরের সময়ে আল্লাহ যে বারাকাহ দুনিয়ায় পাঠান, ভেড়া সেটা লাভ করে। অন্যদিকে কুকুর সারা রাত জেগে থাকে, কিন্তু ফজরের ঠিক আগমুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়ে। ফলে ফজরে আল্লাহ যে বারাকাহ প্রদান করেন তা থেকে কুকুর বঞ্চিত হয়। এজন্যেই ভেড়া কম বাচ্চা প্রসব করা সত্ত্বেও এবং তারা জবেহযােগ্য প্রাণী হওয়ার পরেও দুনিয়ায় তাদের সংখ্যাটা অত্যধিক। অন্যদিকে বেশি বাচ্চা প্রসব এবং জবেহ-অযােগ্য প্রাণী হওয়ার পরেও দুনিয়ায় কুকুরের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এটাই হলাে বারাকাহ।
যারা ফজরে জাগে তারা বারাকাহ লাভ করে। জীবনে, সময়ে, কাজে। আর যারা জাগতে পারে না, তারা বঞ্চিত হয় এই বারাকাহ থেকে। তাদের কাজে বারাকাহ থাকে না, সময়ে বারাকাহ থাকে না। সর্বোপরি জীবন থেকেও তাদের বারাকাহ হারিয়ে যায়। বারাকাহ যে কত বড় একটি নিআমত, তা যে লাভ করে, কেবল সে-ই উপলদ্ধি করতে পারে। জীবনে বারাকাহ লাভের জন্য আমরা কি হয়ে উঠতে পারি না সকাল বেলার পাখি? সুবহে সাদিকের স্নিগ্ধ শীতল হাওয়ায় মেলে দিতে পারি না নিজেদের ডানা?
[খ]
আমরা অনেকেই ফজরের জন্য জাগতে পারি না। একজন মুমিনের জন্য এটা একটা বিশাল ব্যর্থতা। দিনের প্রথম পরাজয়। একজন মুমিন তার দিন শুরু করবে পরাজয় দিয়ে, তা-ও আবার আল্লাহদ্রোহী শয়তানের হাতে ব্যাপারটাই তাে লজ্জাজনক! এ রকম লজ্জার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের জন্য কখনােই শােভনীয় নয়। তাই আমাদের সবার উচিত ফজরে জাগার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এটাকে জীবনের গুরুতর একটি চ্যালেঞ্জ হিশেবে নেওয়া। ফজরে জাগার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী উপায় আছে। সেই উপায়গুলাে অবলম্বন করলে, আশা করা যায়, আমরা নিয়মিত ফজরে জাগতে পারব, ইন শা আল্লাহ।
ফজরে জাগতে হলে সর্বপ্রথম যা দরকার তা হলাে নিয়ত করা। আমি যে ফজরে সত্যি সত্যিই জাগতে চাই, ফজর সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করতে চাই-এর জন্য ঘুমােতে যাওয়ার ঠিক আগে নিয়ত করে ফেলা। নিয়তের ব্যাপারটি আসতে হবে একেবারে হৃদয়ের গভীর থেকে। কেবল মুল্য
157
‘আমি ফজরে উঠব’ –তাহলে সেটা সঠিক নিয়ত হবে না। নিয়ত তাে মােটাদাগেই অন্তরের ব্যাপার। তাই দেখতে হবে ফজরে জাগার তাড়নাটা আমার হৃদয় থেকে উৎসারিত হচ্ছে কি না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, যেদিন আমি খুব তাড়াহুড়াে করে, ফজরের সালাত পড়ার ব্যাপারে কোনাে রকম মনস্থির করা ব্যতীতই ঘুমিয়ে পড়ি, ঠিক সেদিনই ফজরে জাগতে প্রচুর সমস্যা অনুভব করি। নিয়ত ব্যতীত রাতে শীঘ্রই বিছানা ধরলেও ফজরে জাগতে সমস্যা হয়। আবার যেদিন আমি সঠিকভাবে ফজরের সালাত পড়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ঘুমােতে যাই, সেদিন ফজরের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জাগতে পারি। বরং সেদিন যদি মাঝরাতে কোনােভাবে ঘুমও ভাঙে, আমি অস্থির হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাই আর সময় দেখি। ভয় লাগে, আমার ফজরটা আবার ছুটে গেল না তাে? এমনকি ফজর আদায়ের জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে অধিক রাত করে বিছানা ধরলেও ফজরে জাগতে কখনাে সমস্যা অনুভব করি না। এই যে দুটো অবস্থায় দুটো ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি, এটা কেবল নিয়তের ফলাফল। প্রথম অবস্থায় আমার নিয়ত থাকলেও তা ছিল খুব সাদামাটা। তাতে দৃঢ় কোনাে সংকল্প ছিল না। জাগতে পারলে পড়ব’ ধরনের একটা গা ছাড়া ভাব ছিল। ফলে ওই অবস্থায় ফজর পড়তে আমাকে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। আবার দ্বিতীয় অবস্থায় আমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ যে, আমি কোনােভাবেই ফজর ছাড়ব না। ফলে দেখা যায়, আমি ঠিক ঠিক ফজরের জন্য জাগতে পারছি কোনাে সমস্যা ছাড়াই। নিয়তের আশ্চর্য ক্ষমতা এটাই।
ফজরে ঠিক সময়ে জাগার জন্য আমাদের যে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তা হলাে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া। দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রাত করে ঘুমিয়েও চাইলে যে-কেউ ফজরের জন্য জাগতে পারে, তবে সবসময় যে এমন হবে—তার নিশ্চয়তা নেই। খুব বেশি ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান না হলে এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু ফজরে তাে আমাদের নিয়মিত হতেই হবে। আর নিয়মিত হতে হলে দরকার নিয়ম করে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া। এটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও সুন্নাহ। তিনি ইশার সালাতের পর অহেতুক কথা, কাজ এড়িয়ে চলতেন। ঘুমের প্রস্তুতি নিতেন এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলাে, আজকে আমরা নবিজির এই সুন্নাহ ভুলতে বসেছি। চমৎকার এই সুন্নাহ
158
থেকে আমরা আজ যােজন যােজন দূরে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আজ কেড়ে নিয়েছে আমাদের চোখের ঘুম। যে রাতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের শরীর, মন আর চোখের জন্য বিশ্রাম’-এর উপলক্ষ্য বানিয়েছেন, আজ সেই রাত কেটে যায় আমাদের আনন্দ-ফুর্তিতে। আরামের ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার বদলে আমরা তলিয়ে যাই সােশ্যাল মিডিয়াগুলাের বায়বীয় জগতে। কি যুবক, কি কিশাের, কিংবা বৃদ্ধ, আমরা সকলে এখন রাতভর ফেইসবুকিং করি, ইউটিউব ব্রাউজ করি। রাতগুলাে যখন শেষ হয় হয় অবস্থা, তখন আমরা কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে ঘুমােতে যাই। মাঝখানে ছুটে যায় আমাদের ফজরের সালাত। শুধু তা-ই নয়, রাতভর সােশ্যাল মিডিয়াতে সময় কাটানাের ফলে দিনের অর্ধেকটাই আমরা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিই। এতে করে আমাদের কাজের বারাকাহ, সময়ের বারাকাহ সবকিছু কমে যায়। আমরা হারিয়ে ফেলি জীবনের ছন্দ। তাই, জীবনকে ছন্দে ফেরাতে, জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া বারাকাহ পুনরুদ্ধার করতে হলে অবশ্যই অবশ্যই রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ইসলামে ঘুমানাের আগের বেশ কিছু আমলের কথা বলা আছে। যেমন—ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করে নেওয়া, বিতর বাদ থাকলে আদায় করে ফেলা এবং সাথে দুআ করা যেন ফজরে ঠিক সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ঘুম ভাঙিয়ে দেন। এরপর হালকা কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা মুলক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমােতে যাওয়ার আগে এই আমলগুলাে করতেন এবং ঘুম আসার আগ অবধি মনে মনে ঠোঁট নেড়ে যিকির করতেন। সুন্নাহতে বর্ণিত এই আমলগুলাে ফজরে জাগাতে অবশ্যই অবশ্যই কার্যকরী।
ফজরে জাগার অন্যতম আরেকটি উপায়, যেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে মেনে চলার চেষ্টা করি তা হলাে ঘুমানাের সময় ফজরের সালাতের গুরুত্বগুলাে একে একে মনে করা। যেমন—মুনাফিকদের জন্য ফজরের সালাত আদায় কষ্টসাধ্য। ফজরের সালাত ছেড়ে দিয়ে নিজের ভেতরে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ধারণ করা কোনােভাবেই সম্ভব । তাছাড়া যারা ফজর সালাত পড়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের কথা ফেরেশতাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, ফেরেশতারাও খুব উৎসাহের সাথে ফজর সালাত-আদায়কারীদের গল্প আন্তনাহর কাছে করে থাকেন। এই ভাবনাটাও আমাকে ফজর সালাত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করে খুব। যেদিন থেকে আমি ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত আদায়ের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসটি শুনেছি, সেদিন থেকে ফজরের সুন্নাত আদায়ে আমি এক অন্য রকম তাড়না অনুভব করি ভেতর থেকে। নবিজি সালাত আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফজরের দুই রাকআত সুন্নাহলে পৃথিবী এবং
159
এর মধ্যবর্তী সবকিছুর চাইতে উত্তম।[১] এই হাদিসটির ওপর গভীর মনােযােগ দেওয়া গেলে ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত সালাত ছুটে যাওয়ার কোনাে সুযােগই নেই। একটু ভালাে থাকার জন্যই তাে দুনিয়ায় আমাদের এত কসরত। তাে ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত যখন দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে ভালাে, সবকিছুর চাইতে উত্তম, তাহলে এই উত্তম জিনিসটা ছেড়ে দেওয়ার কোনাে মানে হয়?
ফজর ছুটে না যাওয়ার আরেকটা সুন্দর উপায় সুন্নাহর মধ্যে পাওয়া যায়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তােমরা যখন ঘুমাও তখন শয়তান তােমাদের মাথার পেছনে তিনটি গিট দেয় এবং এই কথা বলতে থাকে যে, ‘রাত আরও অনেক বাকি! ঘুমাও! ঘুমাও! যখন কোনাে ব্যক্তি ফজরের আগে জেগে যায় এবং আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন প্রথম গিট খুলে যায়। যখন সে ওযু করে, তখন দ্বিতীয় গিট খুলে যায় এবং যখন সে সালাতে দাঁড়ায়, তখন তৃতীয় গিটটাও খুলে যায়।২]
খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের ফজর সালাত ছুটে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলাে অলসতা। আলসেমির কারণে আমরা জামাআতে ফজরের সালাত আদায় করতে পারি । এর কারণ, শয়তানের বেঁধে দেওয়া গিটগুলাে খুলতে না পারা। আলসেমি কাটিয়ে ওঠার এক মােক্ষম উপায় হলাে এই হাদিস। যখনই ফজরের এলার্ম বেজে উঠবে কিংবা মুয়াজ্জিনের আযান আপনার কানে এসে লাগবে, ঠিক তখনই ‘আল্লাহু আকবার' বলে উঠে বসে পড়ুন। এরপর নবিজির শেখানাে দুআটা পাঠ করুন—
الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه الشور
আল-হামদু লিল্লা হিল্লাযী আহইয়ানা বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর]
এরপর সােজা বিছানা থেকে নেমে ওযু করতে চলে যান। ওযু করে নিত্যদিনের মতন কালেমা শাহাদাত পাঠ করুন। এরপর জায়নামায বিছিয়ে ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত সালাতটুকু পড়ে ফেলুন। হাতে অতিরিক্ত সময় থাকলে ফজরের সুন্নাতের আগে দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল ওযুর সালাত পড়তে পারেন। ব্যস, আপনি অভিশপ্ত শয়তানের
160
কবল থেকে মুক্ত। এরপর মসজিদে চলে যেতে পারেন, কিংবা আরও সময় হাতে থাকলে কিছু যিকির-আযকার করতে পারেন। ফজরের যিকিরগুলাের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অনেক। ফজরে নিয়মিত হওয়ার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ’ নেওয়া যেতে পারে। ত্রিশ দিনের চ্যালেঞ্জ। এই ত্রিশ দিনে তিন রকম ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
প্রথম দশ দিন : এই দশ দিনে একপ্রকার জোর করেই ফজরে জেগে উঠুন।
যেভাবেই হােক জেগে উঠুন। হােক অ্যালার্ম দিয়ে। তােক অন্যকে বলে রেখে। লক্ষ্য একটাই—ফজর সালাত আপনি পড়বেনই।
মাঝের দশ দিন : প্রথম দশ দিন টানা জামাআতে ফজর আদায় করতে পারলে, মাঝের দশ দিনে আপনি এমনিতেই ফজরে জাগতে পারবেন। কারণ, আপনি একটি রুটিনের মধ্যে চলে এসেছেন ইতােমধ্যে। এই দশ দিন ফজরে জাগার জন্য আপনাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। দেখা যাবে, ফজরে জাগার জন্য আপনি রাতে আগে আগে ঘুমােতে চলে যাচ্ছেন। ঘুমের পূর্বের দুআগুলাে পাঠ করছেন। ফজরে জাগবেন মর্মে’ নিয়ত নিয়ে ঘুমােতে যাচ্ছেন যার ফলে ফজরে জাগা এখন আপনার জন্য অধিকতর সহজ। শেষের দশ দিন : এই দশ দিনে আপনি অন্য রকম একটা অভিজ্ঞতার মুখােমুখি হবেন। ফজরের জন্য আপনি তাে এখন জাগবেনই, অধিকন্তু, আপনি এখন ফজরের ওয়াক্তের ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে উঠে যেতে পারবেন। এই সময়গুলােতে আপনি তাহাজ্জুদ সালাত পড়বেন। জায়নামাজে আল্লাহর কাছে সঁপে দেবেন নিজেকে। এই দশ দিনে এক অন্য মানুষে পরিণত হবেন আপনি। ফজরে নিয়মিত হয়ে যেতে পেরে এখন তাহাজ্জুদের জন্য আপনার মন ব্যকুল হয়ে থাকবে। আপনার মনে হবে, ‘ফজরের বিশ মিনিট আগে জেগে যদি তাহাজ্জুদটা পড়া যায়, অন্তত দুই রাকআত, তা-ই বা কম কীসে? জাগবই যখন, আরেকটু আগেই না হয় জাগলাম।
এই ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জটা একবার নিয়ে দেখুন। আমি বিশ্বাস করি, আপনার জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে এই পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে, ইন শা আল্লাহ।
ফজরে জাগার জন্য সবার আগে যা দরকার তা হলাে ইচছা। ইচ্ছা থাকলে বাকি আয়ােজন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ব্যবস্থা করে দেন। আর যদি ইচ্ছাই না থাকে, তাহলে শয়তানের শিকল-বন্দি হয়ে দিন পার করা ছাড়া আর গতি কী? ফজর ছেড়ে
161
দিলেন তাে হেরে গেলেন। হেরে যেতে কে চায় বলুন দুনিয়ায়? আল্লাহর চোখে যারা হেরে যায়, তারা তাে দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জায়গাতেই হতভাগা। আমরা কি সেই হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই? যদি না চাই, তাহলে চলুন দৃঢ় সংকল্প করি—‘ইন শা আল্লাহ, আগামীকাল থেকে আর কখনােই আমি ফজর সালাত কাযা করব না।