Comments
কাজীর দিঘী কাজী বাড়ী সমাজ উন্নয়ন পরিষদের ত্রি বার্ষিক নির্বাচন ২০২৩ ইং উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় হতে সম্মানিত সদস্যবৃন্দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ।
পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর সরাই পাড়াস্থ কাজীর দিঘী কাজী বাড়ী সমাজ উন্নয়ন পরিষদের ত্রি বার্ষিক সাধারণ সভা সম্মানিত সভাপতি জনাব কাজী মুহাম্মদ মনির উল্লাহ'র সভাপতিত্বে সরাই পাড়া হাজী আবদুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ৩০/১২/২০২২ ইং রোজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অন্যান্য মধ্যে বক্তব্য রাখেন,সাধারণ সম্পাদক জনাব কাজী মুহাম্মদ আনিস উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ রবিউল হোসেন রানা,শহিদুল আলম আরাফাত, মনিরুল মিজান, ওয়াহিদুল হক,মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান, মনিরুজ্জামান, শাহরিয়ার রিমন, সভায় ২০২৩/২০২৫ ইং সমাজ কমিটি গঠনকল্পে নিম্ন লিখিত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
০১. জনাব ডাক্তার মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী - প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
০২. জনাব কাজী মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন জাফর - সহকারী নির্বাচন কমিশনার।
০৩. মুহাম্মদ আবদুস সালাম - সহকারী নির্বাচন কমিশনার।
০৪. হাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন -সহকারী নির্বাচন কমিশনার।
০৫. মুহাম্মদ আবু জাহেদ - নির্বাচন কমিশনার।
Packing & Shipping of Used PERSONAL EFFECTS & HOUSEHOLD GOODS (PEHHG) from...BANGLADESH to USA/CANADA/EUROPE/ AUSTRALIA/INDIA/NEPAL/BHUTAN by ROAD/SEA Transport.......
ASIAN PACKERS & SHIPPERS
International Moving Company
We Handle :
Packing & Shipping
Door to Door Delivery Services
Used Personal Effects & Household Goods
Live Animal
for Assistance Plz. Contact :
C/P : M A Shahin
Cell/Whatsapp : +88 0181 9394 558
Email :
[email protected]
Dhaka – Bangladesh
Packing & Shipping of Used PERSONAL EFFECTS & HOUSEHOLD GOODS (PEHHG) from...BANGLADESH to USA/CANADA/EUROPE/ AUSTRALIA/INDIA/NEPAL/BHUTAN by ROAD/SEA Transport.......
ASIAN PACKERS & SHIPPERS
International Moving Company
We Handle :
Packing & Shipping
Door to Door Delivery Services
Used Personal Effects & Household Goods
Live Animal
for Assistance Plz. Contact :
C/P : M A Shahin
Cell/Whatsapp : +88 0181 9394 558
Email :
[email protected]
Dhaka – Bangladesh
Try explaining how this isn’t 2022's Best Short Film.
বগুড়া জেলা কাহালু উপজেলা হিসাবে কাজ করা ইচ্চা।
নারীর জীবন
নুর এমডি চৌধুরী
হায়রে জীবন নারীর জীবন শতত স্মৃতিরা ঘুরে,
রিক্ত করে সকল অন্তর ছুটে আরেক অন্তরে।
কেবা কেমন জানেনাতো মন কত নিয়মের তান,
ফেলে আসা বাঁধন হৃদয় মাঝে করে শুধু আনচান।
দাদী বলেছে কেউ না যেন অখুশি হয় তোর উপরে,
এ কোল ও কোল দু'কোলি হারাবি কথাটা রাখিস ওরে!
নারীর জনম উথাল-পাথাল অতল সাগরের ঢেউ,
সংসার জীবন তারোধিক উথাল আশ্রয় দেয় না কেউ।
মনের সাধ যে মনেই মরিবে সাধ বলে রবে না কিছু,
কষ্ট যে তোর ঘুরে চারিধার হাটবে পিছু পিছু।
দেবর ননদ শশুর শাশুড়ি আরও রবে কতজন,
নিজকে বিকাবে সকলের তরে করে নিবে আপন।
মমতাময়ী মা'গো তোমায় দেখিনা কতটা কাল,
চেয়েচেয়ে থাকি পথের ধারে স্মৃতিরা উথাল-পাথাল।
খেলার সাথীরা কোথায় জানিনা জানিনা দেখা কি হবে,
কত জনমের বন্ধন যে আজ ভুলিতে বসেছি সবে।
পয়েন্ট অব নো রিটার্ন
আনোয়ার হাকিম
সিলেট থেকে ফিরছিলাম আন্তঃনগর পারাবাত এক্সপ্রেসে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কুপে গিয়ে যখন সীট নম্বর মিলাচ্ছিলাম তখন সেখানে বসা তরুনীকে দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো। এক একবার ভাবছিলাম ঠিক জায়গায় এসেছি তো? টিকেট ভালোমতো মিলিয়ে দেখছিলাম।চোখ কেবলই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো। আর চোখের শাটার কেবলই ঘুরে ঘুরে সেই তরুনীর দিকে যাচ্ছিলো। তরুনীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে বাংকারে কাঁধ ব্যাগটা রেখে বসে পড়লাম। চার সিটের কুপে আমরা দু’জন। তরুনী বিনোদন ম্যাগাজিন পড়ছে। এখন আর তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কানে ইয়ার পড গুঁজা। হয়ত গান শুনছে। এসির টেম্পারেচার অনেক কুল। এর উপর ফ্যান চলছে। আমার বেশ ঠান্ডাই লাগছে। ফ্যানের সুইচ অফ করে দেওয়ার সাথে সাথেই তরুনী ম্যাগাজিন সরিয়ে একবার ফ্যানের দিকে আরেকবার আমার দিকে বিস্ময় জাগানিয়া চোখ নিয়ে তাকালো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফ্যান অন করে দিলাম। তরুনী আবার ম্যাগাজিনে ডুবে গেলো।
এরিমধ্যে ট্রেন যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। আমার বড্ড অস্বস্তি লাগছে। কিছুপর টিটিই এলেন। পান খেয়ে তার দাঁত আর ঠোঁট পুরোপুরি রক্তিম। সেই লালাভ ছিটা তার সাদা এপ্রোনে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত চিহ্ন এঁকে রেখেছে। টিকেট চাইলেন। দেখালাম। বললেন, “আপনি আমার সাথে একটু আসুন”। বললাম, “কেন”? অপমানবোধ পেয়ে বসলো। তরুনী হয়ত মনে করছে আমি ভুয়া টিকেটে জার্নি করছি। বললাম, “যা বলার এখানেই বলেন”। তিনি কিছুটা হতোদ্যম হলেন। আবার খানিকটা বিরক্তও। বললেন, “আপামনি আমাদের বড় স্যারের মেয়ে। বুঝেনই তো ডিসকমফোর্ট ফিল করবেন। আমি আপনাকে এর চেয়ে ভাল জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছি”। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। বললাম, “আপনারাই রেলটাকে ডুবিয়েছেন। আর আপনাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষও যাচ্ছেতাই। আচ্ছা এ ট্রেনের নেক্সট স্টপেজ কোথায়”? ঘোড়েল টি টিই ঔৎসুক্য নিয়ে বললো, “কেন, নেমে যাবেন”? আমিও ততোধিক তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম, “আপনাকে নামিয়ে দেবো”। স্মার্ট টি টিই টোন ডাউন করে বললো, “আপনার পরিচয়টা”? পরিচয় পেয়ে আদবের সালাম ঠুকে তরুনীকে উদ্দেশ্য করে বললো, “ আপামনি, আমাদের আরেক স্যার। অসুবিধে হবেনা। আমি কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি”। তরুনী এবার ম্যাগাজিন সরিয়ে তাকে বললেন, “ইটস ওকে। লিভ ইট। আপনি যান”।
টিটিই চলে গেলো। আমার তখন অপমানবোধ আরো চাড়া দিয়ে উঠলো। মনে হলো টিটিই এত স্পষ্ট করে বলার পরেও এখানে বসে থাকলে তরুনী অন্তত আমাকে লেসু টাইপের কিছু ভাববে। এর চেয়ে অন্যত্র যাওয়াই ভালো। বাংকার থেকে ব্যাগ নামিয়ে কাঁধে চাপাচ্ছি এমন সময় তরুনী ম্যাগাজিন সরিয়ে এয়ার পড খুলে আমার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে বললো, “আপনি কি সিরিয়াসলি চলে যাচ্ছেন”? মনে হচ্ছিলো বাংলা সিনেমার গরীব নায়কের মত গলা উঁচিয়ে ডায়ালগ দেই। কিন্তু এটা তো সিনেমার স্যুটিং স্পট না। তাই গলা নামিয়ে বললাম, “আপনিও তো তাই চাইছেন”। তরুনী এবার হেসে দিয়ে বললো, “যেতে হবে না। বসেন। বরং আলাপ করতে করতে যাওয়া যাবে”। আমার রাগ পড়ে গিয়ে উল্টো নিজের উপরই এখন রাগ হচ্ছে। এত সুন্দর ভদ্র মেয়েকে উদ্ধত ভেবে আমিই ভুল বুঝেছিলাম। আসলে সকল পুরুষের পৌরুষের গরিমা এই মেয়েদের জন্যই, আবার সেই মেয়েদের সামনেই তার পৌরুষ পুষি বিড়ালের মত নেতিয়ে কোল আর আঁচল খুঁজে। তরুনীকে এবার ভালো করে দেখলাম। চেহারা ছবি ভালোই। তবে তার ভাবভঙ্গী আর হাসি পৌরুষকে নাচাবার জন্য যথেষ্ট। চোখে এক ধরণের দুষ্টুমির ঝিলিক আছে বুঝা যায়। আমি স্বভাবে লাজুক। মেয়েদের সামনে আরো। আমার কাছে কোন ম্যাগাজিন নেই। পেপারও নেই। ট্রেনে এধরণের কোন হকার পাওয়া যাবে কিনা জানিনা। তরুনী চিপস খাচ্ছে। কতক্ষণ পর ক্যাটারিং থেকে স্ন্যাক্স এলো। তরুনী আরেকটা অর্ডার করলো। আমি অগ্রীম বলে ফেললাম, “আপনার সাথে কেউ আছে কি”?
-- কেন?
-- আরেক প্লেট অর্ডার করলেন যে
-- আপনার জন্য। কোন সমস্যা?
-- না না। আপনি অর্ডার করতে যাবেন কেন? আমার ভদ্রতা।
-- কেন জাত যাবে? পৌরুষে লাগবে?
-- না না। তা ঠিক না।
-- তো? খান। এরপর আপনার পালা। কফি খাওয়াবেন।
-- সিওর।
খেতে খেতে আলাপ চললো। আলাপ বেশ জমেও উঠলো। কথা প্রসঙ্গে জানলাম, তরুনী একজন মডেল। নাম তারান্নুম তানিয়া তানি। কয়েকটি ওয়েব সিরিজেও নাকি কাজ করেছে। আমি তাকে চিনতে পারিনি বলে তার বিস্ময় টের পেলাম। তবে কি সে আমাকে আনকালচারড ভাবছে? এমন সময় তরুনীই প্রশ্ন করে বসলো, “আপনি কি করেন”?
-- চাকরি।
-- বিসিএস?
-- জ্বী
-- কোন ডিপার্টমেন্টে আছেন?
-- প্রশাসনে।
কফি খেতে খেতে আলাপ আরো গাঢ় হলো। ভাবছি এইসব মডেল-ফডেল থেকে চৌদ্দ মেইল দূরে থাকাই ভালো। এদের কোনটা আসল, কোনটা নকল বুঝার সাধ্য কারো নেই। এদের ফ্যান-ফলোয়ার অগণিত। সবাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়। স্ক্যান্ডাল এদের সাথে ইনবিল্ট। এরা নিজেরাও ভাড়া করা সাংবাদিক দিয়ে স্ক্যান্ডাল লেখায়। আজ একে ধরে তো কাল ওকে ছাড়ে। কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আসলে সিনে মিডিয়ায় যারা কাজ করে, কি পুরুষ কি মেয়ে, কারো প্রতিই ভাল কোন ইমপ্রেসন আমার নেই। কিছু বদ্ধ উন্মাদ আর লাফাঙ্গার এদের পিছু দৌড়ায় আর লগ্নীকারী বিগশটরা এদেরকে অবসরের বিনোদন সঙ্গী করে। এরা সব সময় হাই মেক আপ করে কৃত্রিম হাসিতে থাকে। আর ঢং করে আংগুর জুসের মত টসটসে কথা বলে। আর দিন শেষে ঘরে ফিরে স্লিপিং পিল খায়, নয়ত ড্রাগ, নয়ত আত্মহত্যার ছক আঁটে। আমার ভাবনার মাঝে তানি আচমকা প্রশ্ন করে বসে, “আপনার অবসর সময় কাটে কি করে”?
-- নিজের যখন যা ইচ্ছে হয় সেভাবেই। আমার হেয়ালি উত্তর।
-- টিভি দেখেন না?
-- একদম না
-- কেন?
-- ভালো লাগেনা। অভ্যেস নেই।
-- কোয়াইট আন ইউজুয়াল। তানির বিস্ময়।
-- মে বি
-- নাটক-সিনেমার খবর রাখেন না?
-- রাখি তো। যখন তারা খবরের শিরোণাম হয়
-- কেমন?
-- কেউ আত্মহত্যা করলে, ডিভোর্স হলে, বিয়ে হলে, সেলিব্রেটিদের বাচ্চাসহ গোপন বিয়ের খবর চাউর হলে----
-- বেছে বেছে নেগেটিভ গুলোই দেখেন?
-- না না। সেরকম হবে কেন?
তরুনী যারপরনাই মনোক্ষুন্ন। মেয়েরা তারিফ চায়। আর মিডিয়ার লোকেরা পাবলিসিটি চায়। আমার আগ্রহ কম দেখে তানি বড়ই বিমর্ষ। আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম, “ছোটবেলায় আমারও খুব শখ ছিলো নায়ক হবো”। আমি জানি একথা তানির মনে ধরবে। বললো, “সত্যি? সিরিয়াসলি? নাটকে, ওয়েবে কাজ করবেন”? আমি কিছুটা আগ্রহ দেখানোর ছলে বললাম, “সে সুযোগ আর হলো কই”? “আমি ব্যবস্থা করবো। আপনার পারফেক্ট লুক আছে” তার একথায় আমার শরীরে সুখের নহর বয়ে গেলো। এরি মধ্যে সামিরা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। সামিরা আমার কলিগ। ভাল কলিগ। কলিগের চেয়েও বেশি। তানি সেটা খেয়াল করেছে। পশু-পাখীর ঘাণেন্দ্রিয় শক্তি বেশ প্রখর হয়। মেয়েদের এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি থাকে। এদের টেলিপ্যাথি জ্ঞান যেমন প্রখর তেমনি অনুমান বিদ্যা ততোধিক প্রবল। হঠাৎই বলে বসলো, “উনি কে, কয়েকবার রিং দিলেন”?
-- আমার এক কলিগ। আমার পানসে উত্তর।
-- ফিমেল নিশ্চয়
-- কেমন করে বুঝলেন?
-- এ আর এমন কি? খুব কেয়ারিং বলে মনে হলো। তাছাড়া যতবার কথা বলেছেন ততবার আপনার চোখ-মুখের ভাষা দেখেও বুঝা গেছে উনি আপনার জিএফ?
-- আরে নাহ। আমি এখনো পরিপূর্ণ দায়মুক্ত।
একথাতেই তানির চোখ-মুখ স্পার্ক করে উঠলো। সে এবার আগের চেয়ে আরো স্বাভাবিক হলো। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললো, “বাসা কোথায়”?
-- উত্তরায়
-- ফ্যামিলিতে কে কে আছেন?
-- কেন, বিয়ের পয়গাম পাঠাবেন নাকি?
এ কথায় তানি প্রাথমিকভাবে ব্যাক ফুটে গেলেও ত্বরিত ফ্রন্টফুটে এসে বললো, “ক্ষতি কি”? এবার আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বললাম, “লেটস চেঞ্জ দ্য টপিক। আপনি এখন কি কাজ করছেন”? তানি বুক চিতিয়ে বলে গেলো, “একটা ওয়েবে কাজ করছি। আসছে ঈদে দেখতে পারবেন। আর দু’টো পণ্যের মডেলিংয়ে আছি”। বললাম, “আই’ম সো স্যরি। আপনাকে এর আগে দেখিনি”। তানি কি জানি চিন্তা করলো। পরে বললো, “আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজ করেন”? বললাম, “করি তো”। কিছুপর হোয়াটসঅ্যাপ ফুঁড়ে একটা শর্ট ভিডিও ক্লিপ এলো। দেখলাম। ক্যামেরায় আর মেক আপে তানিকে আসলেই সুন্দর দেখায়। এভাবেই প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে আর পরে অন্য মাধ্যমেও তানির সাথে আমার আলাপের ডালপালা পত্র পল্লবিত হয়। (চলবে)
নারী ক্রিকেটারদের লাগেজ রহস্য: আমাদের দায়
আনোয়ার হাকিম
রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছিলেন, “ আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি তাহা পালন করি না; ভূরি পরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতা লাভের চেষ্টা করি না; আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিক্স এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য”।
আমাদের আজকের সমাজ জীবনে এরুপ চিত্রই ফুটে উঠছে। বিশেষ করে কোন ঘটনা ঘটে গেলে আমরা সবাই তারস্বরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেই। একদল গেলো গেলো বলে মাঠ কাঁপিয়ে তুলি। আরেকদল পারলে ঘটনাকে বেমালুম অস্বীকার করি, নয়ত অদ্ভুত সব কারণ উল্লেখ পূর্বক ঘটনাটি বিরুদ্ধ পক্ষ বা কায়েমী স্বার্থান্বেষীদের কর্ম বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আর নয়ত দেখছি, দেখা হচ্ছে, কাউকেও তিল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবেনা ইত্যাদি প্রবোধে প্রাথমিক উত্তেজনা প্রশমিত করার অপচেষ্টা করি। সাধারণ্যে বহুল প্রচলিত যে আমাদের দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থা তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং ন্যুনতম সময় দিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে। এটা ঘটনার উত্তাপ প্রশমিত করণের ব্র্রিটিশ তরিকা। সরকারও জানে, কমিটিও জানে এত স্বল্প সময়ে আলোচ্য ঘটনার কিনারা করা সম্ভব না। তাই কমিটি আরো সময় চায়, কর্তৃপক্ষও তা মঞ্জুর করে। এইরুপ খেলা একাধিকবার ঘটে থাকে। শেষতক পাবলিক অন্য বিষয় নিয়ে জড়িয়ে পড়ে। সেই তদন্তের ব্যাপারে কারো আর আগ্রহ থাকেনা। পরে এর কি পরিণতি হয় তা সবার কমবেশি জানা।
ঘটনাটি ঘটেছে নারী ফুটবলারদেরকে নিয়ে। তারা সাফ জয়ী। তারা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। সঙ্গত কারণেই তাদের ঘিড়ে বিনোদন প্রত্যাশী পাবলিকের উৎসুক্যের আর শেষ নেই। তাদের একজন খোলা বাসে চড়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে ঘুড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে তা ‘পূরণ হয়ত হবে না মর্মে’ আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেয়। এরপরেই সবাই নড়েচড়ে বসে। বি আরটিসি’র সুস্থ দ্বিতল বাসের মুন্ডুপাত করা হলো। এর কি কোন বিকল্প ছিলো না? যাকগে সে প্রসংগ।
বিজয়ী নারীরা এলেন, খোলা বাসে আরোহন করলেন, রাজপথ প্রদক্ষিণও করলেন। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। এভাবেই তারা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কার্যালয়ে গেলেন। সংবাদ সম্মেলন করলেন। সেই সংবাদ সম্মেলন নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। মঞ্চের চেয়ার কর্তারা নিজেরাই দখল করে বসে পড়লেন। দলের কোচ আর অধিনায়কের সেখানে বসার সুযোগ হয়নি। কেবলমাত্র সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের সুবিধার্থে মঞ্চে সাময়িক আসন পেয়েছিলেন তারা। কর্তারা কেন নিজেদের গলায় মালা পড়লেন, কে তাদের পড়ালেন, কেন পড়ালেন তা জানা হলো না। এ নিয়ে জনতাপ প্রশমনে দলের অধিনায়ককে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আর বেশি নাড়াঘাটা না করার আবেদনও করা হলো। এ পর্যন্ত তবু যোগ-বিয়োগে বিষয়গুলো হজম করার মত ছিলো। কিন্তু গোল বাধে বাফুফে থেকে নারীদের কাছে লাগেজ হস্তান্তরের সময়। অনেকের লাগেজ কাটা ও তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেলো। খেলোয়াড়দের কেউ কেউ দাবী করলেন ডলার খোয়া গেছে। এ খবর নেট দুনিয়া ও মিডিয়ায় হাইপ তুললো। সবাই ছিঃ ছিঃ রবে বিমান বন্দরের প্রতি বিষোদগার করতে থাকলো। বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিচলিত হয়ে পড়লো এই ভেবে যে, বল এখন তাদের কোর্টে এসে পড়েছে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ কাটার কথা অনেক দিন থেকেই সবার কাছে জানা। তার কিছু চিত্র মিডিয়ার কল্যাণে প্রায়ই চ্যানেলগুলোতে ও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। তাই বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ উভয়ই তড়িঘড়ি করে তাদের শক্ত অবস্থান সাফ জানিয়ে দিয়ে বললো, তাদের তত্বাবধানে থাকাবস্থায় নারী ফুটবলারদের লাগেজ অক্ষত ছিলো। আর অক্ষত অবস্থাতেই ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লাগেজ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিজেদের মাঠে ঠেলে দেওয়া বল তারা চটজলদি হাই ভলি করে বাফুফের গোল মুখে ঠেলে দিলো। চমকের শুরু তখন থেকেই।
বাফুফে এক্ষেত্রে বল নিয়ে খেলতে অনাগ্রহী হয়ে পড়লো। তাদের আচরণ ফিসফিস সুলভ মনে হলো। কেউ ঝেড়ে কাশে না। করোনার কারণে এখন কেউ আগের মত সশব্দে কাশেও না। যদি এতে করোনাক্রান্ত বলে লোকেরা সন্দেহ করে। যদি ধরে বেধে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেয়? তাদের পক্ষ থেকে জ্বলন্ত এই অগ্নিতে পানি ঢেলে বলা হলো খোয়া মালামাল পাওয়া না গেলে তারা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে। বিমান আর সিভিল এভিয়েশনের বলিষ্ঠ কন্ঠের বিপরীতে বাফুফের পানসে ও মিউ মিউ কন্ঠের প্রেক্ষিতে পাবলিক যা বুঝার বুঝে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক এই যে, তারা কোন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়নি। ক’দিন পরে সংবাদ সম্মেলন করে গর্ব ভরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলা হলো ক্ষতি গ্রস্ত নারী ফুটবলারদের দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। বাফুফে সভাপতি এই দানের কৃতিত্ব প্রাথমিক ভাবে নিজে নিলেও পরে বললেন এটি নারী লীগ প্রধান তার ব্যাক্তিগত টাকা থেকে দিয়েছেন। আর বিনয়ে ও ভক্তিতে গদগদ সেই নারী নেত্রী অপার কৃতজ্ঞতায় জানালেন এই অর্থ বাফুফে সভাপতি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে দিয়েছেন। আসলে কে দিয়েছেন, কোথা থেকে দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন এগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকেই গেলো। কিন্তু পাবলিকের সেদিকে আগ্রহ নেই। পাবলিকের কথা তদন্ত হলো না কেন? থলের বিড়ালটাকে উদঘাটনের চেষ্টাও করা হলো না কেন? এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।
ঘটনাবহুল এ দেশে ইতোমধ্যে মরিয়ম মান্নানের মা’র অপহরণ না আত্মগোপন নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতি শুরু হয়ে গেছে। ইডেনের নারী নেত্রীদের চুলোচুলির কেচ্ছা-কাহিনী আর নায়িকা বুবলীর সন্তানের পিতৃ পরিচয় কি তা নিয়ে রং-তামাশার সিরিজ প্রতিবেদন বেরোচ্ছে। নারীদের লাগেজ কেলেংকারী যে তিমিরে ছিলো সে তিমিরেই রয়ে গেলো। সর্বত্র হাঁফ ছেড়ে বাঁচার দৃশ্য লক্ষণীয়। লাগেজ কাটার জন্য সর্বজন বিদিত দায় থেকে মুক্তি পেয়ে বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যেন মান বাঁচাতে সক্ষম হলো। বাফুফে যেন তেন প্রকারে সংবর্ধনার ডামাডোলে নিম্ন মধ্যবিত্ত নারী ক্রিকেটারদের আগেভাগেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনার যবনিকাপাত করে তাদের লজ্জা ঢাকার একটা ব্যবস্থা করে ফেললেও প্রকৃত ঘটনা কিন্তু অনুদঘাটিতই রয়ে গেলো। এ নিয়ে গসিপ হয়ত আছে কিন্তু ইনভেস্টিগেশন নেই। চুরির মত ধর্তব্য অপরাধের কোন সুরাহা তো দূরের কথা কোন তরফ থেকে কোন অভিযোগও পর্যন্ত করা হলো না। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক তষ্কর-লষ্কর চক্র পার পেয়ে যাচ্ছে ও ছত্র ছায়ায় বসে তারা খেলে যাচ্ছে। আর উপরি কাঠামোতে বসে থাকা কর্তারা গায়ে সুগন্ধি স্প্রে করে তাদের ইমেজ ক্লিন রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক আগেই অপসৃত হয়েছে। বাফুফের মত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও সিন্ডিকেট কালচার জেঁকে বসেছে। ফুটবলের কর্ণধার তাঁর একক অপার ক্যারিসমায় যুগব্যাপী কথার ড্রিবলিংয়ের মাধ্যমে পাবলিককে ডজ দিয়ে যাচ্ছেন। আর ক্রিকেটের কর্ণধার বলে বলে বিশাল বিশাল ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাচ্ছেন। এদেরকে ঘিড়ে যে পারিষদ তারাও তেলে-মেদে চকচকে কেতাদুরস্ত হয়ে অমিয় বচন দিয়ে বেরাচ্ছেন। কখনো কখনো পাবলিকের মাথা ঘামানোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করছেন। এদের দেখার যে কেউ নেই, বলারও যে কেউ নেই তা এরা খুব ভাল জানে। আর এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করে যে দেখাবে সে হিম্মতও কারো নেই এটাও তারা বেশ ভালো জানে। সর্বত্র এই ছোঁয়াচে সংষ্কৃতির প্রকোপ চলছে।
নারী ফুটবলারদের লাগেজ আদৌ কাটা পড়েছে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। তবে অভিযোগ যে খোদ নারী ফুটবলারদের কাছ থেকেই উঠেছে এটা তো ঠিক। আমাদের নারীরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা সুবর্ণ স্মরণীয় হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। দেশে বিদেশে এটা যে ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে এবং ভবিষ্যতেও রেফারেন্স হিসেবে বারবার উঠে আসবে এটাও সত্য। পাশাপাশি দেশের গন্ডী পেড়িয়ে দেশি-বিদেশি মিডিয়ার কল্যাণে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে লাগেজ কাটার এই ঘটনাও কালো স্পট হয়ে থাকবে।
এখন চলছে নারীদের সম্বর্ধনা, উপহার আর আর্থিক আনুতোষিক বিতরণের উৎসব। ইতোমধ্যেই তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কোটি কোটি টাকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে, হাতেও তুলে দিয়েছে প্রচুর। চ্যানেল আর মিডিয়াগুলো ফলাও করে তাদের সাক্ষাৎকার ছাপাচ্ছে। পারলে তাদের ব্যাক্তিগত নানা প্রসঙ্গ পেরে গ্ল্যামারাস করে তুলার চেষ্টাও করছে তাদেরকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খেলোয়াড়রাও তাদের ব্যাক্তিগত নানাবিধ দাবী দাওয়া তুলে ধরছে। জানি এই ঝড় থামতে বেশি সময় নেবে না। আমরা সকল বিষয়ে প্রথমে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি, পরে যখন কোন কারণে কেউ আবেগ ধরিয়ে দেয় তখন আবেগের ট্যাংকি খুলে দিয়ে ভাসতে থাকি। পরে বেমালুম ভুলে যেতেও সময় নেই না।
খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এরা নেহায়েতই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এদের চাল-চুলারও ঠিক নেই। অনগ্রসর জনপদ ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী থেকে এরা সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। বাফুফে এদের জন্য কি করেছে তা গবেষণা করে দেখতে হবে। এদের নিয়ে বাফুফের বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা থাকার কথা। এখন পর্যন্ত তা জানা যায় নি। হয়ত এখন তারা নড়েচড়ে বসবে। কিন্তু কার্যত কি করবে তা সময়ই বলে দেবে। এদের এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে বিভিন্ন মেয়াদের পরিকল্পনা যেমন প্রয়োজন তেমনি বয়স ভিত্তিক খেলোয়াড় বাছাই, প্রশিক্ষণ ও বাছাইকৃত স্কোয়াডের জন্য আর্থিক নিরাপত্তাও দিতে হবে। নাহলে আজকের এই উল্লাস আর আনন্দমুখর চিত্র ফিকে হতে সময় নেবে না বেশি।
অজুহাত, দোষারোপ, দায়িত্বহীনতা আর ধোকাবাজীর এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের মুক্তি কবে?